James Webb Telescope: শূন্য থেকে শুরু! কী ভাবে ‘ওয়েব’ আমাদের মহাবিশ্বের প্রথম ছায়াপথে নিয়ে যাবে?

TV9 Bangla Digital | Edited By: সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়

Dec 20, 2021 | 3:51 AM

Webb Telescope: পৃথিবীর প্রথমাবস্থায় তারা, ছায়াপথ কেমন ছিল - মূলত তারই সুলুকসন্ধানে যাচ্ছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। টাইমমেশিনে পৃথিবীর ১৩.৫ বিলিয়ন বা ১৩,৫০০ কোটি বছর আগে ফিরে যাবে এই টেলিস্কোপ।

James Webb Telescope: শূন্য থেকে শুরু! কী ভাবে ওয়েব আমাদের মহাবিশ্বের প্রথম ছায়াপথে নিয়ে যাবে?
অস্টিনে তোলা জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের ছবি।

Follow Us

এক মুহূর্তের জন্য কল্পনা করুন, আপনার শৈশব সম্পর্কে আপনারই কিছু জানা নেই। কোথা থেকে এসেছেন, কী ভাবে এসেছেন – এসবের কিছুর উত্তর নেই। এই সব উত্তর খুঁজতেই বছরের পর বছর সময় ব্যয় করে গেলেন। তার পর এক দিন হুট করেই এমন একটা মানুষের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল, যিনি আপনার সেই ছোট্টবেলার একটা ছবি হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেলেন। সেই ছবিটাই তো আপনাকে নিয়ে আপনারই যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর সন্ধানের একটা ক্লু। সেই ছবিটাই তো আপনার, আপনি হয়ে ওঠার কাহিনির সন্ধানের একম-এব সূত্র।

ঠিক এমনই এক সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে চলেছেন মহাকাশচারীরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর আসতে চলেছে সেই সুসময়, যখন এই দুনিয়াটাই তাঁদের কাছে একটা সদ্যোজাত হিসেবে ধরা দেবে। হ্যাঁ, এই পৃথিবীটাই সদ্যোজাত হিসেবে মহাকাশচারীদের কাছে হাজির হবে! কোথা থেকে তার আবির্ভাব, কী ভাবে সে এই জায়গায় এসেছে – ঠিক যেন শূন্য থেকে শুরু। তার জন্য ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও (ভারতীয় মূল্যে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা) বেশি অর্থ খরচ করে একটা টেলিস্কোপ বানিয়ে ফেলেছেন গবেষকরা, যার নাম জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ (James Webb Telescope)। সব যদি ঠিকঠাক চলে, তাহলে এই পৃথিবী প্রায় ১৪ বিলিয়ন বা ১৪০০ কোটি বছর আগে কেমন ছিল, তা জানতে পারবেন মহাকাশচারীরা।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ কবে, কারা লঞ্চ করবে?

২৪ ডিসেম্বর, ২০২১ মার্কিন স্পেস এজেন্সি নাসা (NASA) লঞ্চ করবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। প্রসঙ্গত, এর আগে ২২ ডিসেম্বর এই পেরিস্কোপ লঞ্চের দিন নির্ধারিত হলেও পরবর্তীতে তা পিছিয়ে ২৪ ডিসেম্বর করা হয় নাসার তরফ থেকে। ১৯৬১ সাল ও তার পরবর্তী বেশ কিছু বছর পর্যন্ত নাসার প্রশাসক ছিলেন জেমস ই ওয়েব (James E. Webb)। তার নামেই বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী টেলিস্কোপের নামকরণ করা হয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ।

এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ঠিক কী?

নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA) এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি (CSA) – এই তিন সংস্থার উদ্যোগ্য তৈরি হয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের (Hubble Space Telescope) পরিপূরক এবং উত্তরসূরী হিসেবে বিবেচিত হবে এই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ বা ওয়েব (Webb)। আরিয়ান ৫ ইসিএ (Ariane 5 ECA) রকেটে লঞ্চ করা হবে এটি। মহাকাশে থাকার সময় এই টেলিস্কোপ পৃথিবী ও সূর্যের সিস্টেমের ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে (ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট হল এমন পাঁচটি পয়েন্ট, যেখানে দুটো ঘূর্ণনশীল বস্তুর মাঝখানে তৃতীয় আর একটি বস্তু তাদের মাধ্যাকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে মাঝামাঝি একটা নিরাপদ এবং স্থায়ী দূরত্ব ধরে চলতে পারে।) চলে আসবে, যা পৃথিবী থেকে ১,৫০০,০০ কিলোমিটার দূরে এবং সূর্যের ঠিক উল্টো দিকে।

 

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের আসল উদ্দেশ্য কী?

পৃথিবীর প্রথমাবস্থায় তারা, ছায়াপথ কেমন ছিল – মূলত তারই সুলুকসন্ধানে যাচ্ছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ। টাইমমেশিনে পৃথিবীর ১৩.৫ বিলিয়ন বা ১৩,৫০০ কোটি বছর আগে ফিরে যাবে এই টেলিস্কোপ। ওয়েব দ্বারা সংগৃহীত তথ্য আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার চারটি ক্ষেত্রে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সাহায্য করবে:-

১) প্রাথমিক ভাবে আলোর উৎস। সৌরজগৎ সম্পর্কে প্রচলিত সব ধারণা ভুলে গিয়ে নতুন করে আরও গভীরে গিয়ে একাধিক খুঁটিনাটি তথ্য।
২) সৌরজগৎের বাইরের বিভিন্ন গ্রহ (এক্সোপ্ল্যানেট) সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা।
৩) এই মহাবিশ্ব কী ভাবে গঠিত হয়েছে, আমাদের তা বুঝতে সাহায্য করবে।
৪) সৌরজগৎের বাইরের সম্ভাব্য বাসযোগ্য গ্রহগুলির একটি বিশদ বায়ুমণ্ডলীয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।

কী ভাবে আকাশে কাজ করবে এই টেলিস্কোপ?

ইনফ্রারেড বা অবলোহিত স্পেকট্রামে (Infrared Spectrum) কাজ করবে এই টেলিস্কোপ, যে অবজেক্টের উপরে এটি ফোকাস করবে, সেখান থেকেই ইনফ্রারেড লাইট সংগ্রহ করবে।

কিন্তু ইনফ্রারেড কেন? ইনফ্রারেড লাইট বা অবলোহিত আলো হল ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন, যার ওয়েভলেংথ দৃশ্যমান আলোর থেকে দীর্ঘস্থায়ী। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য এটিকে অন্যান্য টেলিস্কোপের তুলনায় আরও কার্যকর ভাবে সময় মতো একাধিক মূল্যবান জিনিস দেখতে সাহায্য করবে। এটি বিজ্ঞানীদের নক্ষত্রের বায়ুমণ্ডল দেখতেও সাহায্য করবে, যা সাধারণত ধুলো এবং গ্যাস দ্বারা আবৃত থাকে। ইনফ্রারেড আলো সহজেই এই ধরনের মহাজাগতিক ধূলিকণা এবং গ্যাস ভেদ করতে পারে।

ওয়েবের সামনে গবেষকরা

কী কী বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি রয়েছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে?

মোট চারটি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি রয়েছে এই টেলিস্কোপে। সেগুলি হল, নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা, নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেক্টোগ্রাফ, মিড-ইনফ্রারেড ইনস্ট্রুমেন্ট এবং নিয়ার ইনফ্রারেড ইমেজার ও স্লিটলেস স্পেক্ট্রোগ্রাফ।

তারা এবং গ্রহজগৎের গবেষণা কী ভাবে করবে এই টেলিস্কোপ?

উষ্ণ গ্যাস এবং ধূলিকণার মেঘের মধ্যে নক্ষত্রের জন্ম হয় এবং অপেক্ষাকৃত কম বয়সের তারা প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণত কাছাকাছি এবং মধ্য-ইনফ্রারেডে বিকিরণ নির্গত করে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের কাছাকাছি এবং মধ্য-ইনফ্রারেড তারা যেখানে গঠিত হয়েছে, সেই অঞ্চলগুলি অধ্যয়ন করতে সাহায্য করবে। প্ল্যানেটারি সিস্টেম বা গ্রহ ব্যবস্থা সম্পর্কে মহাকাশচারীদের জানতে সাহায্য করবে নিয়ার ইনফ্রারেড ইমেজার ও স্লিটলেস স্পেক্ট্রোগ্রাফ (NIRISS)। এই বিশেষ বৈজ্ঞানিক যন্ত্র ০.৬ থেকে ৫ মাইক্রন পর্যন্ত আলো ক্যাপচার করতে পারে। এছাড়াও ওয়েব (Webb) অর্থাৎ সেই পেরিস্কোপ ডিজাইন করা হয়েছে সৌরজগৎের একাধিক গ্রহ – মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন এবং তাদের স্যাটেলাইটও স্টাডি করার জন্য। পাশাপাশি ধূমকেতু, গ্রহাণু এবং মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথের বাইরের অপেক্ষাকৃত ছোট গ্রহ সম্পর্কেও একাধিক তথ্য জানতে পারবে ওয়েব।

ওয়েব ঠিক যেমন দেখতে

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?

ওয়েবের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল, এক বার টেলিস্কোপটি স্থাপন করা হলে এতে কোনও মেরামত করা প্রায় অসম্ভব হবে। অন্য দিকে আবার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ (ওয়েবের পূর্বসূরী) মেরামত করা যেত, কারণ এটি পৃথিবীকে ৫৭০ কিলোমিটার উচ্চতায় প্রদক্ষিণ করে। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ মোটামুটি ১.৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে থাকবে।

তথ্যসূত্র: লাইভমিন্ট 

ছবি: নাসা

Next Article