যে মাটিতে মিশে যায় মানুষের অস্তিত্ব, একের পর এক সভ্যতা, ইতিহাস… সেই মাটি খুঁড়েই বিজ্ঞানীরা বের করে আনছেন অতীতের অজানা গল্পরাশি। সম্প্রতি ইজরায়েলের উত্তরভাগে একটি খননকাজ চলাকালীন যা খুঁজে পেয়েছেন ভূতাত্বিকরা, তাতে চক্ষু চড়কগাছ সকলেরই। শুরু থেকেই একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করত মানুষ, তবে প্রকৃতির অন্যান্য অংশদের সঙ্গেও যে তার আত্মিক যোগাযোগ খুবই প্রাচীন ― তা স্পষ্ট করে এই মাটির অন্দরে লুকিয়ে থাকা বস্তুগুলি!
‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’ নামক এক জার্নালে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ইজরায়েলের খননকার্যে পাওয়া গিয়েছে এমন কয়েকটি প্রাচীন বাঁশি, যা পাখির হাড় ফুটো করে তৈরি করা। এই বাঁশি ব্যবহার করে অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা ছাড়াও পাখিদের ডেকে ভূপৃষ্ঠে নামানো হত। এই বাঁশির সুর বিরল, মত গবেষকদের। প্রত্নতাত্বিক লরেন্ট ডেভিনের মতে, আজ থেকে ১২,০০০ বছর আগে এই অঞ্চলে বাস ছিল সর্বশেষ শিকারী গোষ্ঠীর। এয়নান-মালাহা নামক এই সরোবর প্রথম থেকে ছোট-ছোট টিলা দ্বারা আবৃত, ফলে বহির্জগতের ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্ত থাকার জন্য এই অঞ্চলে বাস করত এই শিকারী গোষ্ঠী।
জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লরেন্ট ডেভিন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এই সরোবরে ওয়াটারফাউল নামক এক প্রজাতির পাখি আসত শীতকালে। তাদেরই হাড় দিয়ে তৈরি হত এই বাঁশিগুলো। এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া ৭টি বাঁশি, যার মধ্যে সর্ববৃহৎ বাঁশিটির দৈর্ঘ্য মাত্র ২.৫ ইঞ্চি! মাইস্ক্রোপিক বিশ্লেষণ মোতাবেক, এই বাঁশির প্রত্যেক ছিদ্রই মানুষের তৈরি। ডেভিন ও তাঁর বিশেষজ্ঞদের দলবল প্রথমেই ম্যালার্ড পাখির হাড়ে ফুটো করে প্রায় সদৃশ একটি বাঁশি তৈরি করেন, যাতে ফুঁ দিতেই ম্যাজিক! কেস্ট্রেল বা ইউরোপীয় স্প্যারোহক পাখির ডাকের মতো অবিকল আওয়াজ বেরিয়ে আসে বাঁশি থেকে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, মূলত ওই পাখির হাড় দিয়ে নির্মিত বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে ওই পাখিদেরই ডেকে আনত শিকারীরা। কখনও এই হাড় তাদের কাজে লাগত গয়না হিসাবে, কখনও শিকার ধরতে, মাঝেমধ্যে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ভিন্ন-ভিন্ন বাঁশি ব্যবহার করত তারা! আন্তর্জাতিক জার্নাল অনুয়ায়ী, এখনও পর্যন্ত প্রাচীনতম বাদ্যযন্ত্রের খোঁজ মিলেছে জার্মানিতে। তবে ইজরায়েলি এই বাঁশি যে প্রাচীনকালে একটি গোটা মানবগোষ্ঠীর জীবনধারণের আধার ছিল, তা একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।