গত ৫০ বছরে এই প্রথমবার। এর আগে সূর্যের (Sun) এত স্পষ্ট ছবি কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। ইউরোপিয়ান সোলার অরবিটার (European Solar Orbit) সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল চলতি মাসে। আর তখনই ওই অরবিটার সূর্যের সবচেয়ে স্পষ্ট পরিষ্কার এবং ডিটেইলড ছবি (Detailed Image Of Sun) প্রকাশ করেছে। আমাদের সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হল সূর্য। তার সাম্প্রতিক ছবি তৈরি হয়েছে ২৫টি ভিন্ন ছবি সংযুক্ত করে। গত ৭ মার্চ এই ২৫টি ছবি তোলা হয়েছিল। তারপর তা একত্রিত করে সূর্যের এই ডিটেইলড ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে সূর্যের এত পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সমেত ছবি প্রকাশিত হয়নি। জানা গিয়েছে, সূর্যের এই ছবি তোলা হয়েছে এক্সট্রিম আলট্রা ভায়োলেট ইমেজার বা EUI- এর সাহায্যে। ইউরোপিয়ান যে স্পেসক্র্যাফট বা অরবিটার সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছেছিল সেখানেই ছিল এই এক্সট্রিম আলট্রা ভায়োলেট ইমেজার।
ইউরোপিয়ান স্পেসক্র্যাফটে থাকা এক্সট্রিম আলট্রা ভায়োলেট ইমেজারের সাহায্যে সূর্যের ‘ফুল ডিস্ক’ ছবি দেখা গিয়েছে। সেই সঙ্গে ভালভাবে ক্যামেরাবন্দি হয়েছে সূর্যের বাইরের অংশের বায়ুমণ্ডল। একে বলা হয় করোনা। সূর্যের এই করোনা অংশটি নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে কৌতূহল বরবরই তুঙ্গে। আর তাই এই অংশের ছবি বিস্তারিত ভাবে এবং স্পষ্ট করে তোলা হয়েছে। অন্য আর একটি ছবি তোলা হয়েছে স্পেকট্রাল ইমেজিং অফ করোনাল এনভায়রনমেন্ট বা SPICE যন্ত্রাংশের সাহায্যে। সূর্যের এই ছবিটি সম্পর্কেই বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে বিগত ৫০ বছরে সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের এত স্পষ্ট ছবি দেখা যায়নি। জানা গিয়েছে, এই ছবি তোলার সময় সোলার অরবিটার সূর্য থেকে প্রায় ৭৫ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে ছিল। এই দূরত্ব পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের অর্ধেক। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি বা ইএসএ তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, একটার পর একটা ছবি তোলা হয়েছে। পুরো ছবিটি ক্যামেরাবন্দি করতে সময় লেগেছে চার ঘণ্টারও বেশি। কারণ এক একটি ছবি তুলতে ১০ মিনিটেরও বেশি সময় লেগেছে। সেই সঙ্গে ওই সোলার অরবিটার সঠিক জায়গা খুঁজতে এবং একস্থান থেকে অন্যত্র যেতেও অনেকটা সময় লাগিয়েছে।
ইউরোপিয়ান আলট্রা ভায়োলেট ইমেজারে থাকা হাই রেজোলিউশনের টেলিস্কোপ দিয়েই মূলত সূর্যের এই অত্যধিক স্পষ্ট এবং স্বচ্ছ, পরিষ্কার ছবি তোলা হয়েছে। ২৫টি আলাদা আলাদা ছবি তোলা হয়েছে। তার সাহায্যেই সূর্যের পুরোটা অর্থাৎ সমস্ত অংশের ছবি একত্রিত করে একটাই ছবি নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি জানিয়েছে ফাইনাল ইমেজ বা ছবিতে ৮৩ মিলিয়ন পিক্সেল রয়েছে। ৯১৪৮ x ৯১১২ গ্রিডে রয়েছে এই সমস্ত পিক্সেল। আর এর ফলে একটি ৪কে টিভি স্ক্রিনের ডিসপ্লে আউটপুটের থেকেও ছবিটি অন্তত ১০ গুণ স্বচ্ছ পরিষ্কার এবং ডিটেইলড হয়েছে। মূলত সূর্যের আপার অ্যাটমোস্ফিয়ার বা করোনাকেই এই ছবিতে দেখা গিয়েছে যার উষ্ণতা কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস।