রাতের পরিষ্কার ঝকঝকে আকাশ লক্ষ লক্ষ তারার সমারোহ দেখা যায়। খালি চোখেই নজরে আসে এইসব নক্ষত্ররা। যদিও দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় একেবারেই টিমটিম করে জ্বলতে থাকে এইসব তারারা। পৃথিবী থেকে এই নক্ষত্রদের কেবলমাত্র একটি আলোকবিন্দুর মতো মনে হয়। তবে এই সমস্ত নক্ষত্রের তুলনায় অনেকটাই আলাদা সূর্য। সর্বক্ষণ জ্বলছে এই নক্ষত্র। আর এই সূর্যের সাহায্যেই উৎপত্তি হয়েছে আমাদের পৃথিবীর। সূর্যের আশপাশে পৃথিবী ছাড়াও রয়েছে আরও অনেক গ্রহ। তবে এবার এক নতুন নক্ষত্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। বলা হচ্ছে এই নক্ষত্র আকার আয়তনে সূর্যের তুলনায় ৩২ গুণ বড়। নাসার হাব্বল স্পেস টেলিস্কোপ (NASA Hubble Space Telescope) এই দৈত্যাকার নক্ষত্রটিকে (Giant Star) খুঁজে পেয়েছে লেগুন নীহারিকার (Lagoon Nebula) কেন্দ্রে।
এই দৈত্যাকার নক্ষত্র যে সূর্যের থেকে আকার, আয়তনেই বড় তা নয়, ঔজ্জ্বল্যেও পাল্লা দেবে সূর্যকে। কারণ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নতুন আবিষ্কৃত নক্ষত্র সূর্যের তুলনা ২,০০,০০০ গুণ বেশি উজ্জ্বল। এই নক্ষত্রের চারপাশের জগত কেমন দেখতে সম্প্রতি তারই ছবি প্রকাশ করেছে নাসা। এই ছবি সত্যিই মনোমুগ্ধকর। তবে চারপাশে রয়েছে গ্যাসীয় আবরণ। মাঝখানে রয়েছে ওই উজ্জ্বল নক্ষত্র। জানা গিয়েছে এই নক্ষত্রের নাম Herschel 36। এই নক্ষত্র রয়েছে Lagoon Nebula-র একদম কেন্দ্রস্থলে। পৃথিবী থেকে প্রায় চার হাজার আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে এই নক্ষত্র। স্যাজিটেরিয়াস নক্ষত্রপুঞ্জে একটি দৈত্যাকার interstellar cloud-এর মধ্যে দেখা গিয়েছে ওই নক্ষত্রটিকে যা সূর্যের থেকে আকার, আয়তন এবং উজ্জ্বলতা সবদিক থেকেই বড় ও বেশি।
মার্কিন স্পেস এজেন্সির নাসা জানিয়েছে যে এই নক্ষত্র এখনও নবীন রয়েছে। এর বয়স এক মিলিয়ন বছরের আশপাশে হবে। এর পাশাপাশি নাসা এও জানিয়েছে যে এই নক্ষত্রটি তার জন্মগত বিভিন্ন আয়নযুক্ত গ্যাস (হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন এগুলোর মতো) নিষ্কাসন করছে। নাসার প্রকাশ করা ছবিতে লাল রঙের সাহায্যে হাইড্রোজেন এবং সবুজ রঙের সাহায্যে নাইত্রোজেন গ্যাসকে বোঝানো হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, Herschel 36 নক্ষত্রের এখনও অন্তত ৫ মিলিয়ন বছর আয়ু রয়েছে।
নাসার হাব্বল স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমেই এত বিস্তারিত ভাবে ছবির সমস্ত বিষয় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। মূলত মহাবিশ্বের গভীরতম পর্যায়ে পর্যবেক্ষণ এবং দূরবর্তী অংশের গ্রহ-নক্ষত্রদের নিরীক্ষণের জন্যই এই হাব্বল স্পেস টেলিস্কোপ তৈরি হয়েছে। বিগত ৩০ বছর অর্থাৎ তিন দশক ধরে নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে মহাকাশের অজানা এবং রহস্যময় সব দিক সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরেছে এই স্পেস টেলিস্কোপ। নাসা এবং ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সির যৌথ উদ্যোগে এই স্পেস টেলিস্কোপ তৈরি হয়েছিল। এ যাবৎ মহাকাশের অনেক অবিশ্বাস্য ও মনোমুগ্ধকর ছবি প্রকাশ করেছে এই হাব্বল স্পেস টেলিস্কোপ।