মঙ্গলগ্রহে (Mars) এক বছর কাটিয়ে ফেলেছে নাসার মার্স রোভার পারসিভের্যান্স (NASA’s Mars rover Perseverance)। লালগ্রহের রুক্ষ পাথুরে পৃষ্ঠদেশের উপর বিগত একবছর ধরে সফলভাবেই টিকে রয়েছে পারসিভের্যান্স রোভার (Mars rover Perseverance)। আর আপাতত তাই চলছে উদযাপন। প্রায় ১০২৫ কিলোগ্রাম ওজনের এই রোভার ইতিমধ্যেই মঙ্গলগ্রহের বুকে অসংখ্য মাইলস্টোন পার করে নতুন নতুন রেকর্ড গড়েছে। সম্প্রতি মঙ্গলগ্রহের উপর সবচেয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার রেকর্ড করেছে নাসার মার্স রোভার পারসিভের্যান্স। গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে মঙ্গলের বুকে অবতরণ করেছিল নাসার এই রোভার। ১৮ ফেব্রুয়ারি লালগ্রহের মাটি ছুঁয়েছিল মার্স রোভার পারসিভের্যান্স। এর মধ্যেই রক স্যাম্পেল সংগ্রহ করেছে এই রোভার। তবে আগামী দিনে আরও বেশি সংখ্যক নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্স রোভার পারসিভের্যান্স। সেই সঙ্গে মঙ্গলগ্রহে থাকা Jezero Crater থেকে কিছুটা দূরে নতুন অভিযান চালানোর পরিকল্পনাও রয়েছে এই রোভারের। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, Jezero Crater এলাকায় বহু লক্ষ-কোটি বছর আগে একটি হ্রদ ছিল।
গত একবছরে মোট ৬টি রক স্যাম্পেল সংগ্রহ করেছে রোভার পারসিভের্যান্স। এই রোভারের মধ্যেই আবার ছিল Ingenuity হেলিকপ্টার। এই মার্স কপ্টারও রোভারের সঙ্গেই অভিযান চালাচ্ছে মঙ্গলগ্রহে। এই হেলিকপ্টারে রয়েছে ক্যামেরা। তার সাহায্যেই মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠদেশের বিভিন্ন এলাকার ছবি তোলা হয়। জানা গিয়েছে, রোভারে রয়েছে ছয়টি চাকা। এর সাহায্যে লালগ্রহ থেকে যেসমস্ত নমুনা সংগ্রহ করা তা ফেরত পাঠানো হবে পৃথিবীতে। সেইসব গবেষণা করবেন বিজ্ঞানীরা এবং মঙ্গলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কিনা, বা এই গ্রহ আদৌ মনুষয় বসবাসযোগ্য কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। এর পাশাপাশি রোভার ছিল প্রথম প্রোটোটাইপ অক্সিজেন জেনারেটর MOXIE। এই যন্ত্রেরও পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে মঙ্গলগ্রহের বুকে। আর জানা গিয়েছে, মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠদেশ থেকে সংগ্রহ করা ওই সমস্ত পাথুরে নমুনা Jezero Crater গঠনের ব্যাপারে নতুন তথ্য জানাবে।
নাসা মঙ্গলগ্রহের পারসিভের্যান্স রোভার পাঠিয়েছিল অর্থাৎ যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০২০ সালের ৩০ জুলাই। মঙ্গলগ্রহে এই রোভার অবতরণ করেছিল গত বছর মানে ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সম্প্রতি লালগ্রহের পৃষ্ঠদেশে এই রোভার একদিনে ২৪৫.৭৬ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছে। এখানে বলে রাখা ভাল মঙ্গলগ্রহে একদিনের দৈর্ঘ্য পৃথিবীতে একদিনের দৈর্ঘ্যের তুলনায় সামান্য বেশি। এর আগে একটি মার্সিয়ান ডে- তে যতটা দূরত্ব পারসিভের্যান্স অতিক্রম করেছিল, এবার তার থেকে অনেকটা বেশি দূরত্ব অতিক্রম করেছে। self-driving function- এর মাধ্যমেই এমনটা সম্ভব হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
তবে সব অভিযানই একদম সাবলীল ভাবে হয়েছে তা কিন্তু নয়। বরং রক স্যাম্পেল সংগ্রহের সময় যেখানে পাথুরে নমুনা রাখা হচ্ছিল সেখানে পাথর আটকে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল ডিসেম্বর মাসে। তবে নাসার ইঞ্জিনিয়াররা সেই সমস্যার সমাধান করে ফেলেছিলেন। শোনা যাচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহে আরও দুটো স্যাম্পেল মঙ্গলগ্রহ থেকে সংগ্রহ করবে রোভার পারসিভের্যান্স। এই সমস্ত নমুনা পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে তা গবেষণা করে Jezero Crater গঠনের সময়কাল এবং ওই হ্রদের প্রসঙ্গেও আকর্ষণীয় তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
আরও পড়ুন- Armless Dinosaurs: হাত ছাড়া ডায়নোসর! নতুন প্রজাতির ডায়নোসরের জীবাশ্ম খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা