রাতের শহরে সারাক্ষণ আলো জ্বললে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে গাছগুলি। আর তার ফলে, ফুলের কুঁড়ি বসন্তে প্রস্ফুটিত হওয়া, পাতার রং পরিবর্তন হওয়া এবং শরৎকালে ঝরে যাওয়া – এই সব বিষয়গুলি যথা সময়ে না হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরজুড়ে প্রায় 3,000 সাইটের গাছ, নানাবিধ আলোর পরিস্থিতিতে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যালোচনা করে গবেষকরা এই তথ্য জানিয়েছেন। সাধারণত, গাছপালা প্রাকৃতিক দিন-রাত্রির চক্রকে পরিবর্তনের পাশাপাশি তাপমাত্রার সংকেত হিসেবে ব্যবহার করে। গবেষকরা দেখেছেন যে, শুধুমাত্র কৃত্রিম আলোই বসন্তে ফুলের কুঁড়িগুলি ভাঙার দিন গড়ে অন্তত নয় দিন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পাতার রং পরিবর্তনের সময়টি অন্তত ছয় দিন বিলম্বিত হয়েছিল। গবেষকরা জানিয়েছেন যে, আলো যদি আরও তীব্র হয় তবে পার্থক্যটিও অনেক বেশি হতে পারে।
এই পরিবর্তনের প্রভাব
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এর ফলে কী প্রভাব পড়তে পারে? এর ফলে শহরের উদ্ভিগুলি যে অর্থনৈতিক, জলবায়ু, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত পরিষেবাগুলি সরবরাহ করে, সেই দিক থেকে তীব্র প্রভাব পড়েছে। তবে এর একটি ইতিবাচক দিকও রয়েছে। আর তা হল, দীর্ঘ ঋতুগুলি শহুরে খামারগুলিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সক্রিয় হতে দেয়। যে কারণে, বসন্তের শুরুতে এবং শরৎকালে শীতল ছায়া দিতে পারে গাছগুলি।
এখন নেতিবাচক দিকটি হল, তুষারপাতের ফলে গাছগুলি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং তাতে আখেরে দুর্বলও হয়ে যায়। পাশাপাশি পরাগায়নকারীর মতো অন্যান্য জীবের সময়ও মেলে না, যা কিছু শহুরে উদ্ভিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, শহুরে গাছপালাগুলির জন্য একটি দীর্ঘ সক্রিয় ঋতুর ফলে আগেকার দীর্ঘ পরাগ ঋতুতে রূপান্তরিত হতে পারে যা হাঁপানি এবং অন্যান্য শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত অসুস্থতাকে আরও খারাপ করার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
যদিও এই গবেষণা থেকে গবেষকরা অনেক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পারেননি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, রাতের আলো বৃদ্ধি এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে গাছের পাতা পতনের সময় রং বদলে যায়।
শহুরে উদ্ভিদের ফিনোলজি (জলবায়ুর প্রভাবে প্রাকৃতিক পরিবর্তন) কার্বন ডাই অক্সাইড এবং মাটির আর্দ্রতার মতো অন্যান্য কারণ দ্বারাও প্রভাবিত হতে পারে। এছাড়াও, দিনের তুলনায় রাতের তাপমাত্রার দ্রুত বৃদ্ধিও বিভিন্ন দিন-রাতের তাপমাত্রার ধরন সৃষ্টি করতে পারে, যা জটিল পদ্ধতিতে উদ্ভিদের ফিনোলজিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
গবেষকদের অনুমানগুলির উপর ভিত্তি করে, উষ্ণ জলবায়ুর কারণে গাছের পাতা রঙিন হওয়ার তারিখের এই বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি এই শতাব্দীর মাঝামাঝি বন্ধ হতে পারে এবং কৃত্রিম আলোর কারণে এর ঠিক বিপরীত হতে পারে। যদিও এই দাবিটি অন্বেষণ করতে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।