Latest Science News: অসাধ্য সাধন? সেটাও বোধহয় কম বলা হবে। আর সেটাও হয়তো বিজ্ঞানীদের দ্বারাই সম্ভব। একের পর এক গবেষণায় তারা তাক লাগিয়ে দেন বিশ্ববাসীকে। বিজ্ঞানের জগতে প্রতিদিনই নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা প্রতিদিন তাদের নতুন বিস্ময়কর আবিষ্কার দিয়ে বিশ্বকে অবাক করে চলেছেন। এরই মধ্যে জাপানের বিজ্ঞানীরা আরেকটি আশ্চর্যজনক গবেষণা শুরু করেছেন। যদিও বেশ কিছুদিন ধরেই এই গবেষণা চর্চায় রয়েছে। এক কথায় বলতে পারেন, সৃষ্টির আদি-অনন্ত বদলে দেওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে বিজ্ঞানীরা। ‘রোবট বেবি’র পর এবার ল্যাবেই শিশু জন্ম নেবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আর সেই অসাধ্য সাধনের দিকে রোজই এক এক ধাপ পেরোচ্ছেন তাঁরা। প্রকৃতপক্ষে, বিজ্ঞানীরা গবেষণায় সাফল্য অর্জন করেছেন ল্যাব-গ্রোন বেবিস তৈরি করে। সোজা কথায়, মানুষের জন্মের জন্যে আর শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর উপর নির্ভর করতে হবে না। DailyMail-র প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জাপানি বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, তারা ল্যাবে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু তৈরিতে সফল হয়েছেন। আসলে ল্যাবে ইঁদুরের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরি করতে পেরেছেন তাঁরা। এবার তা আগামী 5 বছরে মানুষের মধ্যেও সম্ভব হবে।
কিউশু ইউনিভার্সিটির একজন জাপানি বিজ্ঞানী প্রফেসর কাতসুহিকো হায়াশি, যিনি ইতিমধ্যেই ইঁদুরের উপর গবেষণা করে এই সিন্ধান্তে এসেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, মানুষের মধ্যেও এই ধরনের প্রক্রিয়াটি প্রয়োগ করা দরকার। চলতি মার্চ মাসে ‘নেচার’ জার্নালে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
ল্যাবে শিশুর জন্ম নিতে কতদিন বাকি?
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, 2028 সালের মধ্যে ল্যাবে একটি শিশু জন্ম নেবে। অর্থাৎ ল্যাবে যে একটি শিশু জন্ম নিতে পারে, সেই ভাবনাই বাস্তবে পরিণত হবে। প্রফেসর কাতসুহিকো বলেন, যে কৌশলটি ইঁদুরের উপর ব্যবহার করা হয়েছে, তা শিগগিরই মানুষের কোষে ব্যবহার করা হবে। এই কৌশল দ্বারা এমনকি দুই পুরুষও বাবা হতে পারবে। মানে সমকামী পুরুষরাও বাবা হতে পারবে। অধ্যাপক কাতসুহিকো এবং তার দল সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে। ল্যাবে তিনি সাতটি ইঁদুর তৈরি করেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হল দু’টিই পুরুষ ইঁদুর ছিল। অধ্যাপক কাতসুহিকো বলেন, “এই গবেষণায় পুরুষ ইঁদুরের ত্বকের কোষ ব্যবহার করে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু তৈরি করা হয়েছে।” গবেষণাগারে মানুষের শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু বৃদ্ধির ক্ষমতাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ইন ভিট্রো গেমটোজেনেসিস (IVG) বলা হয়।
ইন ভিট্রো গেমটোজেনেসিস কী?
একজন ব্যক্তির রক্ত বা ত্বক থেকে কোষ নিয়ে কোষ তৈরি করা হয়। এই কোষগুলি ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু কোষ সহ শরীরের যে কোনও কোষে পরিণত হতে পারে। এগুলি তারপর ভ্রূণ তৈরি করতে এবং মহিলাদের গর্ভে ইমপ্লান্ট করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই সফল গবেষণার পর থেকে বিজ্ঞানীরা মানুষের শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরির খুব কাছাকাছি চলে গেলেও এখনও ভ্রূণ তৈরি করতে পারেননি। তবে আগামী দিনে তাও সম্ভব বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
এই গবেষণার সুবিধা কী?
অধ্যাপক কাতসুহিকো বলেন, “এর একটি বড় সুবিধা হল, যে কোনও বয়সের নারীই সন্তান হতে পারবে। তবে এই প্রযুক্তির সুবিধা নেওয়ার ঝুঁকিও হয়েছে।” প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই কৌশলে এমন শিশুর জন্ম হতে পারে, যা বাবা-মা তাদের সন্তানের মধ্যে দেখতে চান। এর মানে ভবিষ্যতে ‘ডিজাইনার শিশুদের’ ল্যাবে প্রস্তুত করা যেতে পারে।
তবে এরকম কোনও উদ্যোগ নেওয়া হলে সেটা বিভিন্ন দেশেই বিতর্কের মুখে পড়তে পারে। কারণ এখানে জীব বৈচিত্র্যের পরিবর্তন ছাড়াও অনেক নীতি-নৈতিকতার বিষয়ও জড়িত। সত্যিই যদি বিজ্ঞানীরা সফল হন, তবে সেটা যে যুগান্তকারী ইতিহাস তৈরি করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।