“জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে”- কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বলে গিয়েছিলেন তাঁর এক জনপ্রিয় কবিতার মাধ্যমে। যদিও একথা চির সত্য। এই লাইনের সঙ্গে অধিকাংশ মানুষই পরিচিত। কথায় আছে, জন্ম হয়েছে মানে তার মৃত্যু নিশ্চিত। অমরত্ব লাভ কে-ই বা আর করেছে! অসুররাজ থেকে রাবণ, অমরত্ব পায়নি কেউই। বিজ্ঞান উন্নত হলেও মানুষের পক্ষে এই অসাধ্য সাধন হয়নি। কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি প্রাণী আছে, যে অমর। ভাবছেন কোনও কিছু আবার অমর হয় নাকি! বিজ্ঞানীরা কিন্তু এমনই এক অবাক ঘটনার কথা বলছেন। তারা এক প্রাণীর সন্ধান পেয়েছেন। এই প্রাণীর নাম হাইড্রা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হাইড্রা কখনই মারা যায় না। সব থেকে অবাক ব্যাপার হল এটিকে কেটে ফেললেও বেঁচে থাকে। এদের সন্ধান পরিষ্কার জলে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ড্যানিয়েল মার্টিনেজ আমেরিকার পোমোনা কলেজে হাইড্রা নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণাটি ‘প্রসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা অনুসারে, হাইড্রা এক সেন্টিমিটার লম্বা। এর বয়স এখনও অজানা। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি সব পরিস্থিতিতেই টিকে থাকতে পারে। অমর হওয়ায় এদের জন্ম কবে হয়েছিল, আর কবেই বা এদের মৃত্যু হবে, সেই তথ্য এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে আজও অজানা।
হাইড্রা কেন অমর?
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, হাইড্রার মৌলিক দেহ (স্টেম) কোষ দ্বারা গঠিত। এর মধ্যে খুব কম কোষ রয়েছে। এর মৌলিক কোষগুলি ক্রমাগত নতুন কোষ তৈরি করতে পারে। যার কারণে হাইড্রার শরীরে ক্রমাগত নতুন কোষ তৈরি হয় এবং এটি সর্বদা একই থাকে। অর্থাৎ যখন কোনও প্রাণীর মৃত্যু হয়, তখন তার শরীরের কোষগুলি কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু হাইড্রার ক্ষেত্রে তেমন কিছুই হয় না। বিজ্ঞানীদের মতে, যদি কোনও ভাইরাস হাইড্রায় প্রবেশ করে। তখনও তার মৃত্যু হয় না। এর কারণ হল তাদের শরীরে নতুন নতুন কোষ তৈরি হতে থাকে। তাই চিরকাল বেঁচে থাকার সম্ভাবনা থাকে। মিষ্টি জলে বসবাসকারী হাইড্রার জীবন-মৃত্যু নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, হাইড্রা তখনই মারা যায়, যখন কোনও শিকারী তার শিকার করে। স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু এদের কখনই হয় না। এক কথায় এরা অমর।
হাইড্রার বিশেষত্ব কী?
হাইড্রা মিষ্টি জলে পাওয়া যায়। কখনও কখনও প্রবাহমান বা স্থির জলেও থাকে। এগুলি হ্রদ, জলের স্রোতে পাওয়া যায়। যেখানে পাথর, ডালপালা, জলজ উদ্ভিদ এবং গাছপালা রয়েছে সেখানেও থাকে। দূষিত জলে পাওয়া যায় না। হাইড্রা জীব কোষ থেকে তৈরি হতে থাকে এবং তারপর বহুকোষী জীব নামে পরিচিত। হাইড্রার দেহ নলাকার এবং এর আকৃতি দীর্ঘায়িত। হাইড্রার শরীরে দু’টি স্তর রয়েছে। বাইরের স্তরটিকে বলা হয় ইক্টোডার্ম, ভিতরের স্তরটিকে বলা হয় এন্ডোডার্ম। উভয় স্তরই জীবন্ত টিস্যু দ্বারা যুক্ত, যাকে মেসোগ্লোয়া বলা হয়।