কয়েকদিন আগেই নাসা একটি নতুন মিশন শুরু করেছে। পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা গ্রহাণুদের ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য এবং তাদের গতিপথ পরিবর্তন করার জন্য তৈরি হয়েছে আধুনিক স্পেসক্র্যাফট। এই মিশন চালুর পর পরই এবার পৃথিবীর দিকে একই দিনে ধেয়ে আসছে ছয়টি অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু। এদের বলা হচ্ছে ‘নিয়ার আর্থ অবজেক্টস’ বা এনইও। মার্কিন স্পেস এজেন্সি নাসা জানিয়েছেন, ছয়টি নিয়ার আর্থ অবজেক্ট সোমবার ৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর আশপাশ দিয়ে ধাবিত হবে। নাসা এই অবজেক্টগুলির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে এবং তাদের অরবিট বা কক্ষপথের দিকেও নজর দিচ্ছে।
পৃথিবীর আশপাশ দিয়ে যে’কটি নিয়ার আর্থ অবজেক্ট উড়ে যাবে, সেগুলি হল অ্যাস্টেরয়েড 2021 VX7, 2021 WE1, 2021 WM2, 2021 XT1, 2021 WL2, 2021 XE। আসলে সূর্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে এইসব অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু। আর সূর্যের দিকে যাওয়ার পথেই পৃথিবী গ্রহের আশপাশ দিয়ে উড়ে যাবে এই সমস্ত গ্রহাণু। যেহেতু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাজাগতিক ঘটনা, তাই এই ছয়টি নিয়ার আর্থ অবজেক্টের গতিবিধি একদম নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। তবে একই দিনে পৃথিবীর আশপাশ দিয়ে এতগুলো গ্রহাণু উড়ে যাওয়ার ঘটনাতেও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কারণ নাসার তরফে কোনও সতর্কতা জারি করা হয়নি। এইসমস্ত অ্যাস্টেরয়েড পৃথিবীর জন্য হানিকারক হতে পারে এমনটাই বলেননি নাসার বিজ্ঞানীরা।
যে ছয়টি অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণু ৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর আশপাশ দিয়ে উড়ে যাবে তার মধ্যে যে গ্রহাণুর গতিবেগ সবচেয়ে বেশি সেটি হল প্রতি ঘণ্টায় ৪৪,৩৮৮ কিলোমিটার। তবে পৃথিবী থেকে এই গ্রহাণুর দূরত্ব থাকবে ৩১,৫০,৫৩১ কিলোমিটার। এবার এই গ্রহাণুওগুলো আকার-আয়তনে কেমন জেনে নেওয়া যাক। Asteroid 2021 WM2, এই গ্রহাণু সবচেয়ে দ্রুত গতিতে ধাবিত হবে।
2021 VX7- ব্যাস ৩১ থেকে ৭০ মিটারের মধ্যে
2021 WM2- ব্যাস ১৮ থেকে ৩৯ মিটারের মধ্যে
2021 WE1- ব্যাস ১৫ থেকে ৩৩ মিটারের মধ্যে
2021 XT1- ব্যাস ৫.২ থেকে ১২ মিটারের মধ্যে
2021 XE- ব্যাস ৪.৭ থেকে ১১ মিটারের মধ্যে
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পৃথিবীর দিকে ধাবমান গ্রহাণুদের ভেঙে দেওয়ার এবং তাদের গতিপথ বদলানোর জন্য DART মিশন চালু করছে মার্কিন স্পেস এজেন্সি নাসা। গত ২৪ নভেম্বর বুধবার ভারতীয় সময় সকাল ১১টা ৫০মিনিটে এই মিশন লঞ্চ করেছে মার্কিন স্পেস এজেন্সি নাসা। এক বছর ধরে চলবে এই অভিযান। নাসার এই ‘DART’ মিশনের মূল লক্ষ্য হল পৃথিবীরে দিকে ধাবমান গ্রহাণুকে ভেঙে দেওয়া এবং তার গতিপথ পরিবর্তন করা। এই DART শব্দের পুরো কথা হল Double Asteroid Redirection Test।
ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের সাহায্যে ভ্যান্ডেবার্গ স্পেস ফোর্স বেস থেকে DART মিশন লঞ্চ করেছে নাসা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে রয়েছে ভ্যান্ডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেস। এই অভিযানে মূলত একটি স্পেসক্র্যাফট গ্রহাণুর মুখোমুখি হয়ে তা ভেঙে দেবে। আর এর ফলে ওই গ্রহাণুর গতিপথ পরিবর্তিত হবে। গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধাবমান হলে তার প্রভাব কী হতে পারে, এই ভেবে আতঙ্কিত হন বৈজ্ঞানিকরা। পৃথিবীপৃষ্ঠে এই গ্রহাণুদের ক্ষতিকর প্রভাব রুখতেই মার্কিন স্পেস এজেন্সি নাসা তাদের DART মিশন লঞ্চ করেছে। এই প্রথম এ জাতীয় কোনও অভিযান করা হচ্ছে যার মাধ্যমে প্রযুক্তির সহায়তায় পৃথিবীর উপর গ্রহাণুর প্রভাব রুখে দেওয়া সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন- Martian Crater: মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠদেশে দেখা গেল অদ্ভুত-দর্শন গহ্বর বা ক্র্যাটার, জানুন খুঁটিনাটি