সৌর ঝড়, সৌর রশ্মি বা করোনাল মাস ইজেকশনের মতো ভারী-ভারী শব্দ প্রযোজ্য হয় যার সম্পর্কে, তার বয়স প্রায় 457 কোটি বছর! এখনও পর্যন্ত মহাজগতের মানচিত্র সবচেয়ে নিখুঁত ভাবে তৈরি করেছে গিয়া স্পেসক্রাফট। এই মানচিত্রেই উঠে এসেছে সৌরজগতের কেন্দ্র অর্থাৎ সূর্য সম্পর্কিত কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।
কীভাবে চলছে গবেষণা?
এ বছরের জুন মাসে গিয়া যে সকল তথ্য প্রেরণ করেছে পৃথিবীতে, তার বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা। বিভিন্ন গ্রহের ওজন, তারা-উল্কাপিণ্ডের ঘনত্ব, তাপমাত্রার মতো অজানা তথ্য পাঠিয়েছে গিয়া। এই তথ্যতালিকা বিশ্লেষণ করে সূর্যের মতোই বেশ কিছু নক্ষত্র বেছে নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যাদের তাপমাত্রা এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য প্রায় সূর্যের মতোই। ওইসব তারাদের সঙ্গে সূর্যের তুলনা করে সৌরজগতের পিতার আনুমানিক মৃত্যুকাল হিসাব করে ফেলেছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা!
আমাদের সূর্য এখন মাঝবয়সী যুবক
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির তথ্য বলছে, প্রায় 457 কোটি বছর বয়সের সূর্য সবে মাঝবয়সী! হাইড্রোজেন ফিউশন করে হিলিয়ামে পরিণত করার পাশাপাশি সানস্পট, করোনাল ইজেকশনের মতো লক্ষণ দেখাচ্ছে সূর্য। পরবর্তীতে হাইড্রোজেনের বিপুল ভাণ্ডার শেষ হয়ে গেলে এই সূর্যই পরিণত হবে লাল রাক্ষসী তারায়, গিলে নেবে নিকটবর্তী সবকিছুই, মহাকাশবিজ্ঞানীদের রিপোর্ট অনুযায়ী এমনটাই জানা গিয়েছে। সেক্ষেত্রে কমে আসবে তারার বহিঃপৃষ্ঠের তাপমাত্রা।
সূর্যের বন্ধুদের বয়স নির্ধারণ করবে সূর্যের জীবনকাল?
আপাতত সূর্যের জীবনকালের সম্ভাব্য সময়সীমা বের করতে উৎসুক বিজ্ঞানীরা। এই সময় সাধারণত নির্ভর করে নক্ষত্রের ভর, রাসায়নিক গঠন এবং ফিউশন প্রক্রিয়ার উপর। ফ্রান্সের প্রখ্যাত মহাকাশবিজ্ঞানী অরল্যাঘ ক্রিভি জানিয়েছেন, “3,000-10,000 কেলভিন তাপমাত্রার নক্ষত্রের তথ্য পাঠিয়েছে গিয়া। আসলে এই তাপমাত্রার তারাগুলিই জগতে সবচেয়ে বেশিদিন বাঁচে। এই পদ্ধতিতে চললে আকাশগঙ্গার বেশ কিছু রহস্যও উদঘাটিত হতে পারে।”
তাহলে, ‘সূয্যিমামা’র ভবিষ্যৎ কী?
আপাতত সূর্যের বয়স 457 কোটি বছর। বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, 800 কোটি বছর বয়স হলে নিজের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পৌঁছবে সূর্য। তারপর থেকে তেজ কমবে, বাড়বে আকার-আয়তন। ক্রমে রেড জায়ান্ট স্টারের স্তরে উন্নীত হবে সে। এরপর শুধুই অপেক্ষা। বয়স যখন বেড়ে দাঁড়াবে 10,110 কোটি বছর, তখন শেষ হয়ে যাবে সূর্যের সকল তেজভাণ্ডার। “আমাদের কাছের সূর্যকেই যদি বুঝতে না পারি, তাহলে জগতের অন্যান্য নক্ষত্রকে চিনব কীভাবে”, বলছেন অরল্যাঘ। বর্তমানে মানুষের দৃষ্টিক্ষেত্রের মধ্যে থাকা নক্ষত্রের মধ্যে সর্ববৃহৎ নক্ষত্র হল ইউওয়াই স্কুটি, যা একটি রেড জায়ান্ট। শেষ জীবনে সকল তাপমাত্রা হারিয়ে সাদা বামন নক্ষত্রে পরিণত হয় নক্ষত্র। সূর্যের ক্ষেত্রে এমনটা হলে তখন থাকবে না আর কোনও পৃথিবী, নীল গ্রহে তখন হয়তো বেঁচে থাকবে না কোনও প্রাণ।