কেলেঙ্কারির একশেষ! ফেসবুকের অন্দরের কেচ্ছা ফাঁস করলেন প্রাক্তন কর্মী

দীপেন্দু পাল | Edited By: সোমনাথ মিত্র

Mar 11, 2025 | 5:49 PM

ফেসবুকের অন্দরের কেচ্ছা! চিনের সঙ্গে দহরম-মহরম! তথ্য পাচার থেকে কমিউনিস্ট সরকারকে সাহায্য! বিস্ফোরক অভিযোগ সংস্থারই প্রাক্তন কর্মীর!

কেলেঙ্কারির একশেষ! ফেসবুকের অন্দরের কেচ্ছা ফাঁস করলেন প্রাক্তন কর্মী

Follow Us

কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার! যখন তখন ছাঁটাই! মহিলাদের প্রতি কুরুচিপূর্ণ আচরণ। তথ্য চুরি। চিনের সঙ্গে তথ্য ভাগ! চিনকে নিজেদের সার্ভারের অ্যাকসেস দেওয়া। আরও কত কী! বিশ্বের এক নম্বর সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ফেসবুকের অন্দরের একগুচ্ছ ‘কেচ্ছা’ এবার ফাঁস করলেন সংস্থারই এক প্রাক্তন কর্মী। আর এই অভিযোগকে কেন্দ্র করেই এখন তুলকালাম চলছে মার্কিন মুলুকে। ঘটনার অভিঘাত এতটাই, যে খোদ সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের ময়দানে নামতে হয়েছে যাবতীয় অভিযোগ খণ্ডন করতে।

সারা উইন উইলিয়ামস একজন প্রাক্তন মেটা-র কর্মী। কমবেশি প্রায় ৭ বছর তিনি সংস্থাতে কাজ করেছে তাও আবার বেশ উচ্চপদে। তিনি ছিলেন পলিসি মেকার। তিনি তাঁর নতুন বই, ‘কেয়ারলেস পিপল, এ কশনারি টেল অফ পাওয়ার, গ্রিড অ্যান্ড লস্ট আইডিওলিজম’ বইতে ফেসবুক (আধুনা মেটা) কর্তা মার্ক জুকারবার্গ-সহ শীর্ষস্থানীয়দের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক সব অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ, মেটা কর্তা নিজেই সংস্থার একজন হঠকারী ব্যক্তি। যিনি চিনে ব্যবসা বাড়াতে এতটাই আগ্রহী, যে প্রয়োজনে চিনা কমিউনিস্ট সরকারের যাবতীয় বিধিনিষেধ মেনে নিতে তৈরি ছিলেন। শুধু তৈরিই নন, চিনকে সাহায্য করতে নিজেই আগে বাড়িয়ে বেজিংয়ের বেঁধে দেওয়া সেনসরশিপও মেনে নিয়েছেন। এমনকী চিনা কমিউনিস্ট সরকার বিরোধী কনটেন্ট ‘সেনসর’ করতে তিনি মেটার ‘এআই’ বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ নিজে ব্যবহার করতে দিতে রাজি ছিলেন। আর এই গোটা প্রক্রিয়াটাই চলছিল মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটকে লুকিয়ে চুরিয়ে।

নিউ ইয়র্ক পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউলিয়ামস বলেছেন, ফেসবুক একটি পচে যাওয়া কর্মসংস্কৃতির জায়গা। বিশেষ করে সংস্থার দুই শীর্ষকর্তা সিইও মার্ক জুকারবার্গ ও প্রাক্তন সিওও শার্ল স্যান্ডবার্গ ব্যাপক জালিয়াতি করেছেন। ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য দুজনেই লাগাতার দুর্নীতি করে গেছেন, অভিযোগ ইউলিয়ামসের। এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হইহই পড়ে যায় মার্কিন মুলুকে। অভিঘাত এত তীব্র হয় যে আসরে নামতে হয় মেটা-কে। মেটা মুখপাত্র পাল্টা বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘আমরা বইটি পড়িনি। তবে যিনি এই দাবি করছেন তাঁকে ২০১৭-তে সংস্থা থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে প্রমাণিত, তিনি মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিলেন।’ তবে সংস্থা এটা স্বীকার করেছে যে চিনে ব্যবসা বাড়াতে উৎসাহী ছিলেন জুকারবার্গ।

তবে সারা উইন উইলিয়ামসের অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন না ‘হুইসল ব্লোয়ার’রা। হুইসল ব্লোয়ার কাদের বলে? কোনও বিখ্যাত সংস্থা বা প্রশাসনের অন্দরের দুর্নীতি যাঁরা ফাঁস করে, তাঁদের ইন্টারনেট দুনিয়ায় বলে ‘হুইসল ব্লোয়ার’। যেমন উইকিলিকস-এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ একাধিকবার ইন্টারনেটে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের অত্যন্ত গোপনীয় নথি ফাঁস করে দেন। তাঁকে হেফাজতে নেয় মার্কিন প্রশাসন। এমনই আর একজন অত্যন্ত পরিচিত ‘হুইসল ব্লোয়ার’ এডওয়ার্ড স্নোডেন। তিনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র বিরুদ্ধে প্রভাবশালীদের উপর নজরদারির তথ্য ফাঁস করে প্রশাসনের বিষনজরে পড়েন। ‘হুইসল ব্লোয়ার’-দের নিজস্ব কমিউনিটি থাকে। তাঁদেরই সদস্যরা সারা উইন উইলিয়ামসের অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ জুকারবার্গের বিরুদ্ধে ইউজারদের তথ্য সংগ্রহ করা ও সেই তথ্য বিক্রি করে বিজ্ঞাপনদাতাদের স্বার্থরক্ষার অভিযোগ অনেক পুরনো। এই অভিযোগে ফেসবুক ও গুগল কর্তাকে মার্কিন কংগ্রেসের সামনে ব্যাখ্যাও দিতে হয়েছে একাধিকবার। দুজনেই অবস্থা যাবতীয় অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করে এসেছেন।