Bangladesh News Government: বাংলাদেশের সেনাকে পুলিশের ক্ষমতা দিল বর্তমান সরকার!
তলায় তলায় কট্টরপন্থীদের মতো সেনাও কি ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারকে নিজেদের ইচ্ছেমতো চালাচ্ছে। প্রশ্নটা খুঁচিয়ে দিলেন মহম্মদ ইউনূস নিজেই। বাংলাদেশের সেনাকে পুলিশের সমান ক্ষমতা দিলেন তিনি।
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর খুব তাড়াতাড়ি সে দেশের দায়িত্ব নিল তদারকি সরকার। মহম্মদ ইউনূস দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের সেনাকে আর সে দেশের সিভিলিয়ান লাইফে সেভাবে দেখা যায়নি। , সবটাই কি আসলে আই ওয়াশ? তলায় তলায় কট্টরপন্থীদের মতো সেনাও কি ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারকে নিজেদের ইচ্ছেমতো চালাচ্ছে। প্রশ্নটা খুঁচিয়ে দিলেন মহম্মদ ইউনূস নিজেই। বাংলাদেশের সেনাকে পুলিশের সমান ক্ষমতা দিলেন তিনি।
সীমান্তে সেনা, আধা-সেনা থাকে। উপদ্রুত অঞ্চল হলে নাগরিক জীবনেও কখনও কখনও সেনার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। ভারতেও তাই। দরকারে সেনা কাউকে ধরতেও পারে। কিন্তু সেনা কারও বিরুদ্ধে এফআইআর করতে পারে না। গ্রেফতার করতে পারে না। সেনা কাউকে আটক করলে নিয়ম হল ওই ব্যক্তিকে তারা পুলিশের হাতে তুলে দেবে। পুলিশ এফআইআর করবে, কোর্টে তুলবে। তারপর যেমন বিচার হয় হবে। গণতন্ত্র ফেরানোর নামে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের কাজকর্মে কিন্তু উলটপুরাণ। পুলিশ কী করবে এবং করবে না তা আমাদের দেশে ফৌজদারি কার্যবিধি বা সিআরপিসি-তে লেখা আছে। যা এখন বদলে হয়েছে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা। ব্রিটিশদের তৈরি করে যাওয়া সিআরপিসি বাংলাদেশে এখনও আছে। সেখানেই পুলিশকে আটক, গ্রেফতার ও প্রয়োজনে গুলি চালানোর ক্ষমতা দেওয়া আছে। সেই ক্ষমতা এবার বাংলাদেশের সেনার হাতেও চলে এল।
মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের তদারকি সরকার নোটিফিকেশন করে জানিয়েছে আগামী দু-মাস পুলিশের সমান ক্ষমতা ভোগ করবে সেনা। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় বাংলাদেশে এখন পুলিশের সঙ্গে সেনাও রাস্তায় আছে। তবে, তারা আছে পিছনে। দরকারে পুলিশকে সাহায্যকারীর ভূমিকায়। এইবার ভাবুন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা সেনা সাধারণ মানুষকে কলার ধরে তুলে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করছে। কিংবা গুলি চালাচ্ছে।
ভাবতে পারেন। পুলিশ গুলি চালালেও তাতে লাগাম থাকে। মানুষের বিক্ষোভে সেনা গুলি চালালে তাতে লাগাম থাকবে কী? সবমিলিয়ে সিআরপিসি অনুযায়ী পুলিশের হাতে থাকা সতেরোটা ক্ষমতা সেনার হাতে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। আটক, গ্রেফতার, গুলি তো বটেই। এ ছাড়াও, সেনা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারবে। ডাকে পাঠানো সাধারণ মানুষের যে কোনও চিঠিপত্র খুলে দেখতে পারবে। যে কারোর দেহ তল্লাশি করতে পারবে। চাইলে যে কোনও ব্যক্তিকে মুচলেকা দিতে বাধ্য করতে পারবে। জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। এতদিন যা পারত না, এবার এক এক করে সবই পারবে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে যাঁরা কমিশন্ড অফিসার আছেন, তাঁদের হাতে এই ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের নির্দেশে সেনার সংশ্লিষ্ট ইউনিটের জওয়ানরা সিভিলিয়ান লাইফে ঢুকে ধরপাকড়ও চালাতে পারবেন।
অনেকেই ভাবতে পারেন নৈরাজ্যের পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনার জন্য সেনাবাহিনীকে পুলিশের সমান ক্ষমতা দেওয়া হলো। তবে, ওদেশের সাধারণ মানুষের বড় অংশ কিন্তু মোটেই এমন ভাবছেন না। সূত্রের খবর, রীতিমতো প্রমাদ গুণছেন আওয়ামি লিগের নেতাকর্মীরা। কারণ ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ফেরার কিছুদিন পর অপারেশন ক্লিন হান্ট শুরু করেন। সেনা ও পুলিশের যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। দুর্নীতি এবং রাহাজানি দমনের নামে শুরু করা অভিযানে আওয়ামি লিগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে জেলে পাঠায় খালেদা জিয়ার সরকার। ফলে, পুলিশের পোশাক সেনার গায়ে চাপলে পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা থাকছেই।
আগেই জানা গিয়েছিল, আমি আপনাদের বলেছিলাম, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য দিল্লিকে অনুরোধ করতে চলেছে ঢাকা। ২০১৬ সালের ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তিতে বলা হয়, এক দেশের যে কোনও আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলে, সেটাই যথেষ্ট। তখন সেই দেশ নির্দিষ্ট কারও প্রত্যর্পণ চাইলে অন্য দেশ প্রত্যর্পণে বাধ্য। হাসিনার জন্য চুক্তির এই ধারাকেই হাতিয়ার করতে চায় বাংলাদেশের তদারকি সরকার। তবে, এর ফলে ভারতের হাত-পা বাঁধা, মোটেই এমন নয়। কারণ, ওই চুক্তিতেই বলা আছে রাজনৈতিক কারণে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কারোর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে মনে হলে প্রত্যর্পণের অনুরোধ খারিজ করা যাবে। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে ১৯ দিনে ৬০টিরও বেশি মামলা হয়। মানে দিনে গড়ে তিনটিরও বেশি। ফলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। কয়েকদিন আগেই বার্লিনে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। ঢাকা শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি করলে দিল্লি কী করবে। উত্তর আসে ডিপ্ল্যোম্যাটিক চ্যানেলে আমরা কথা বলি। সেই কথা সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের ভিত্তিতে হয় না। তাহলে কি ডিপ্ল্যোম্যাটিক চ্যানেলে বাংলাদেশকে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে হাসিনাকে ফেরত পাওয়ার আশা ছাড়ুন? তবে, জয়শঙ্করকে দেখে মনে হল, হাসিনাকে নিয়ে ভারতের অবস্থান রীতিমতো রিজিড।