Indian Armed Forces: ভারতীয় সেনার তরোয়াল বল্লমের বিপক্ষে মেশিনগান, হাইফায় এক অসম যুদ্ধ জয়ের গল্প

Sep 26, 2024 | 12:18 AM

ইতিহাসের একমাত্র যুদ্ধ, যেখানে গোলন্দাজ বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ক্যাভালরি ইউনিট বা অশ্বারোহী সেনারা। একশো ছয় বছর আগের এই লড়াইয়ের কাহিনী থাকা উচিৎ স্কুল, কলেজের ইতিহাস বইতে। কিন্তু তা নেই। আমরা অনেকেই সেই লড়াইয়ের কথা জানিও না।

Follow Us

বন্দুক, কামানের সামনে তরোয়াল, লাঠি আর বল্লমের লড়াই। ১৬ হাজারের সঙ্গে ৫ হাজার সৈন্যর লড়াই। ইতিহাসের একমাত্র যুদ্ধ, যেখানে গোলন্দাজ বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ক্যাভালরি ইউনিট বা অশ্বারোহী সেনারা। একশো ছয় বছর আগের এই লড়াইয়ের কাহিনী থাকা উচিৎ স্কুল, কলেজের ইতিহাস বইতে। কিন্তু তা নেই। আমরা অনেকেই সেই লড়াইয়ের কথা জানিও না।

ব্যাটল অফ হাইফা, ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘোরানো এক যুদ্ধ। সেই যুদ্ধর সঙ্গে জড়িয়ে ভারত, ইজরায়েল আর হাইফা শহর। আরও ভাল করে বলতে গেলে, জড়িয়ে আছে মহীশূর, যোধপুর ও হায়দরাবাদের মতো তত্‍কালীন ভারতের তিনটি প্রিন্সলি স্টেট। এই তিনটি প্রিন্সলি স্টেটের রাজাদের ব্যক্তিগত বাহিনী নিয়ে তিনটি ইউনিট তৈরি করেছিল ব্রিটিশরা। এদের উপরই ছিল হাইফা দখলের ভার। ইজরায়েল বলে কোনও দেশ তখন জন্মই নেয়নি। যে জায়গাটা এখন হাইফা, সেটা তখন তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ। যু্দ্ধ শেষ পর্যায়ে, তখন অন্যত্র কোণঠাসা হয়েও হাইফায় ঘাঁটি আঁকড়ে ছিল অক্ষশক্তি বা সেন্ট্রাল পাওয়ার। অথচ হাইফা দখলে না এলে এবং হাইফা বন্দরে হাতে না আসলে যুদ্ধে চূড়ান্ত জয়লাভ সম্ভব নয়। এমনই এক পরিস্থিতিতে ঘোড়াসওয়ার বাহিনীকে হাইফা দখলের নির্দেশ দেয় আর্মি কম্যান্ড।

ঘোড়াসওয়ার বাহিনী দিয়ে হাইফা দখল কোনওভাবেই সম্ভব নয়। জেনেও ভারতীয় সৈন্যদের হাইফায় যাওয়ার নির্দেশ দেন ব্রিটিশ আর্মির কমান্ড্যার ব্রুস উইলি। বোমা – কামানের মুখে অশ্বরোহী বাহিনী কীভাবে লড়বে? কর্তৃপক্ষের প্রশ্নের মুখে উইলি বলেছিলেন, আমরা ওদের যুদ্ধে জেতার জন্য পাঠাচ্ছি না। শুধু শক্রকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য পাঠাচ্ছি। মেশিনগান ও কামান নিয়ে পাহারায় থাকা শক্র সেনার উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়েছিল মহীশূর ল্যান্সার। আর হাইফার কারমেল পাহাড়ের উত্তর দিক থেকে হামলা করে হাইফার ভিতরে ঢুকে পড়ে যোধপুর ল্যান্সার। ১৯১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে পরদিন রাত ২টো, কমবেশি ২২ ঘণ্টার যুদ্ধ। শক্রর হাতে মেশিনগান, কামান থেকে গোলা ছুটে আসছে। ভারতীয় সেনাদের হাতে অস্ত্র বলতে বল্লম আর বর্শা। আর সম্বল বলতে ঘোড়া। তুর্কি-জার্মান ১৪ হাজার সেনার সামনে ৫ হাজার ভারতীয় সেনা। কিন্তু এমন এক যুদ্ধ যা এর আগে বা পরে কখনও দেখা যায়নি। ব্যাটল অফ হাইফা একারণেই বিখ্যাত।

হাইফা দখলের প্ল্যান তৈরি করেছিলেন যোধপুর ল্যান্সার বাহিনীর প্রধান মেজর দলপত সিং শেখাওয়াত। তাঁর নেতৃত্বে অতর্কিতে শত্রুর উপর হামলা হয়। পাহাড়ের বাঁকে, বাঁকে যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধ হয়েছিল নদীর পাড়ে, বালির উপর। ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধে ৭ টা নাগাদ হাইফা শহরের দোরগড়ায় পৌঁছে যান মেজর দলপতের ডেপুটি অমর সিং যোধা। সেখানে আরও একপ্রস্থ যুদ্ধ। রাত সাড়ে বারোটার পর হাইফা বন্দর দখল করে যোধপুর ল্যান্সার। তারপরেও বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধ চলেছিল। অবশেষে ভোর তিনটে-চারটে নাগাদ যুদ্ধজয়। ২২ ঘণ্টার যুদ্ধে শক্রসেনার ২ কমান্ড্যার সহ ১ হাজার ৩০০ জনকে যুদ্ধবন্দী করেছিল যোধপুর ল্যান্সার। ১৭টি আর্টিলারি গান, ৮টি সেভেনটি সেভেন এমএম বন্দুক, ১১টি মেশিনগান সহ বহু অস্ত্র ভারতীয় সেনার হাতে আসে। হাইফা দখল করতে গিয়ে নিহত হন মেজর দলপত সহ আট ভারতীয় সেনা। হাইফা জয়ের খবর যখন ব্রিটিশ আর্মির ইউনিটে ব্রুস উইলির কাছে পৌঁছয় তখন ব্রিটিশ অফিসার সেই খবর বিশ্বাসই করে উঠতে পারেননি। সেই প্রথম অটোমান সাম্রাজ্যের কবল থেকে মুক্তির স্বাদ পায় হাইফার মানুষ। সেই ঘটনাকে এখনও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে ইজরায়েল। তাই ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর ইজরায়েল – ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষ দুটো দিন। ২৩ সেপ্টেম্বর হাইফা ডে। পরের দিন অর্থাত্‍ ২৪ সেপ্টেম্বর ভিকট্রি প্যারেড ডে।

গাজা ও লেবানন ফ্রন্টে যুদ্ধ চলছে। তার মধ্যেও হাইফা ডে ও ভিকট্রি ডে সেলিব্রেট করল ইজরায়েল। নিরাপত্তার কারণে হাইফা সিটিতে ভারতীয় দূতাবাসের অনুষ্ঠান বাতিল হয়। তবে তেল আভিভ ও হাইফায় ইজরায়েল সরকারের অনুষ্ঠানে কোনও প্রভাব পড়েনি। তেল আভিভে হাইফা ডে’র সেলিব্রেশনে ইজরায়েলের প্রতিনিধি বললেন, হাইফাকে মুক্ত করতে ভারতীয় সৈন্যদের আত্মত্যাগ আমরা কখনও ভুলব না। ভারতীয় সেনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হাইফার একটি রাস্তার নাম এখন যোধপুর ল্যান্সারের নামে হয়েছে। হাইফা ডে-র কথা বলতে গিয়ে এর পিছনে লুকিয়ে থাকা গল্পটা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

বন্দুক, কামানের সামনে তরোয়াল, লাঠি আর বল্লমের লড়াই। ১৬ হাজারের সঙ্গে ৫ হাজার সৈন্যর লড়াই। ইতিহাসের একমাত্র যুদ্ধ, যেখানে গোলন্দাজ বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ক্যাভালরি ইউনিট বা অশ্বারোহী সেনারা। একশো ছয় বছর আগের এই লড়াইয়ের কাহিনী থাকা উচিৎ স্কুল, কলেজের ইতিহাস বইতে। কিন্তু তা নেই। আমরা অনেকেই সেই লড়াইয়ের কথা জানিও না।

ব্যাটল অফ হাইফা, ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘোরানো এক যুদ্ধ। সেই যুদ্ধর সঙ্গে জড়িয়ে ভারত, ইজরায়েল আর হাইফা শহর। আরও ভাল করে বলতে গেলে, জড়িয়ে আছে মহীশূর, যোধপুর ও হায়দরাবাদের মতো তত্‍কালীন ভারতের তিনটি প্রিন্সলি স্টেট। এই তিনটি প্রিন্সলি স্টেটের রাজাদের ব্যক্তিগত বাহিনী নিয়ে তিনটি ইউনিট তৈরি করেছিল ব্রিটিশরা। এদের উপরই ছিল হাইফা দখলের ভার। ইজরায়েল বলে কোনও দেশ তখন জন্মই নেয়নি। যে জায়গাটা এখন হাইফা, সেটা তখন তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ। যু্দ্ধ শেষ পর্যায়ে, তখন অন্যত্র কোণঠাসা হয়েও হাইফায় ঘাঁটি আঁকড়ে ছিল অক্ষশক্তি বা সেন্ট্রাল পাওয়ার। অথচ হাইফা দখলে না এলে এবং হাইফা বন্দরে হাতে না আসলে যুদ্ধে চূড়ান্ত জয়লাভ সম্ভব নয়। এমনই এক পরিস্থিতিতে ঘোড়াসওয়ার বাহিনীকে হাইফা দখলের নির্দেশ দেয় আর্মি কম্যান্ড।

ঘোড়াসওয়ার বাহিনী দিয়ে হাইফা দখল কোনওভাবেই সম্ভব নয়। জেনেও ভারতীয় সৈন্যদের হাইফায় যাওয়ার নির্দেশ দেন ব্রিটিশ আর্মির কমান্ড্যার ব্রুস উইলি। বোমা – কামানের মুখে অশ্বরোহী বাহিনী কীভাবে লড়বে? কর্তৃপক্ষের প্রশ্নের মুখে উইলি বলেছিলেন, আমরা ওদের যুদ্ধে জেতার জন্য পাঠাচ্ছি না। শুধু শক্রকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য পাঠাচ্ছি। মেশিনগান ও কামান নিয়ে পাহারায় থাকা শক্র সেনার উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়েছিল মহীশূর ল্যান্সার। আর হাইফার কারমেল পাহাড়ের উত্তর দিক থেকে হামলা করে হাইফার ভিতরে ঢুকে পড়ে যোধপুর ল্যান্সার। ১৯১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে পরদিন রাত ২টো, কমবেশি ২২ ঘণ্টার যুদ্ধ। শক্রর হাতে মেশিনগান, কামান থেকে গোলা ছুটে আসছে। ভারতীয় সেনাদের হাতে অস্ত্র বলতে বল্লম আর বর্শা। আর সম্বল বলতে ঘোড়া। তুর্কি-জার্মান ১৪ হাজার সেনার সামনে ৫ হাজার ভারতীয় সেনা। কিন্তু এমন এক যুদ্ধ যা এর আগে বা পরে কখনও দেখা যায়নি। ব্যাটল অফ হাইফা একারণেই বিখ্যাত।

হাইফা দখলের প্ল্যান তৈরি করেছিলেন যোধপুর ল্যান্সার বাহিনীর প্রধান মেজর দলপত সিং শেখাওয়াত। তাঁর নেতৃত্বে অতর্কিতে শত্রুর উপর হামলা হয়। পাহাড়ের বাঁকে, বাঁকে যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধ হয়েছিল নদীর পাড়ে, বালির উপর। ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধে ৭ টা নাগাদ হাইফা শহরের দোরগড়ায় পৌঁছে যান মেজর দলপতের ডেপুটি অমর সিং যোধা। সেখানে আরও একপ্রস্থ যুদ্ধ। রাত সাড়ে বারোটার পর হাইফা বন্দর দখল করে যোধপুর ল্যান্সার। তারপরেও বেশ কিছুক্ষণ যুদ্ধ চলেছিল। অবশেষে ভোর তিনটে-চারটে নাগাদ যুদ্ধজয়। ২২ ঘণ্টার যুদ্ধে শক্রসেনার ২ কমান্ড্যার সহ ১ হাজার ৩০০ জনকে যুদ্ধবন্দী করেছিল যোধপুর ল্যান্সার। ১৭টি আর্টিলারি গান, ৮টি সেভেনটি সেভেন এমএম বন্দুক, ১১টি মেশিনগান সহ বহু অস্ত্র ভারতীয় সেনার হাতে আসে। হাইফা দখল করতে গিয়ে নিহত হন মেজর দলপত সহ আট ভারতীয় সেনা। হাইফা জয়ের খবর যখন ব্রিটিশ আর্মির ইউনিটে ব্রুস উইলির কাছে পৌঁছয় তখন ব্রিটিশ অফিসার সেই খবর বিশ্বাসই করে উঠতে পারেননি। সেই প্রথম অটোমান সাম্রাজ্যের কবল থেকে মুক্তির স্বাদ পায় হাইফার মানুষ। সেই ঘটনাকে এখনও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে ইজরায়েল। তাই ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর ইজরায়েল – ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষ দুটো দিন। ২৩ সেপ্টেম্বর হাইফা ডে। পরের দিন অর্থাত্‍ ২৪ সেপ্টেম্বর ভিকট্রি প্যারেড ডে।

গাজা ও লেবানন ফ্রন্টে যুদ্ধ চলছে। তার মধ্যেও হাইফা ডে ও ভিকট্রি ডে সেলিব্রেট করল ইজরায়েল। নিরাপত্তার কারণে হাইফা সিটিতে ভারতীয় দূতাবাসের অনুষ্ঠান বাতিল হয়। তবে তেল আভিভ ও হাইফায় ইজরায়েল সরকারের অনুষ্ঠানে কোনও প্রভাব পড়েনি। তেল আভিভে হাইফা ডে’র সেলিব্রেশনে ইজরায়েলের প্রতিনিধি বললেন, হাইফাকে মুক্ত করতে ভারতীয় সৈন্যদের আত্মত্যাগ আমরা কখনও ভুলব না। ভারতীয় সেনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হাইফার একটি রাস্তার নাম এখন যোধপুর ল্যান্সারের নামে হয়েছে। হাইফা ডে-র কথা বলতে গিয়ে এর পিছনে লুকিয়ে থাকা গল্পটা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

Next Video