Election: ১৯৫২ থেকে ২০২৪, গণতন্ত্রের নানা চড়াই-উতরাই, নির্বাচনের নানা অজানা গল্প

TV9 Bangla Digital | Edited By: Tapasi Dutta

Apr 01, 2024 | 12:20 AM

১৯৫২ সালে পথ চলা শুরু নির্বাচনী গণতন্ত্রের। কীভাবে বাঁক নিল তারপর? কোন কোন চ্যালেঞ্জ এসেছে তার পথে? এগিয়ে চলেছে কোন দিকে? এখন সেই কাহিনীর পালা। আজকের TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ভোটযুদ্ধ দেশের লড়াইয়ের চতুর্থ পর্ব।

Follow Us

ভোট। গোটা দেশের ভোট। ১৪০ কোটি মানুষের এই দেশে, পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের ভোট। ভারতীয় উপমহাদেশে ভোট মানে অনেক কিছু। তার একদিকে যেমন আছে শাসনতন্ত্র, প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য-অর্থনীতি- আবার অন্য দিকে এ এক উৎসব। মতামত প্রকাশের উৎসব। তাদের চাওয়া পাওয়ার হিসেবে মেলানোর উৎসব। ১৯৫২ সালে পথ চলা শুরু নির্বাচনী গণতন্ত্রের। কীভাবে বাঁক নিল তারপর? কোন কোন চ্যালেঞ্জ এসেছে তার পথে? এগিয়ে চলেছে কোন দিকে? এখন সেই কাহিনীর পালা। আজকের TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ভোটযুদ্ধ দেশের লড়াইয়ের চতুর্থ পর্ব।

১৯৮৪-র ২৪ ডিসেম্বর শুরু হল লোকসভা নির্বাচন। ইন্দিরা হত্যা তখন কংগ্রেসের তুরুপের তাস। হত্যাকারীর জন্য বিক্ষোভ আর নিহত প্রধানমন্ত্রীর জন্য আবেগ। তখন দিকে দিকে। কংগ্রেসের মিছিলে, প্রচারে, বক্তৃতায় উঠে আসছে একটাই নাম। ইন্দিরা। ইন্দিরা গান্ধী।

 

এত সাফল্য তাঁর মা পাননি, তাঁর দাদুও নয়। এই নির্বাচনে কংগ্রেসের হয়ে ভোটে দাঁড়ান অমিতাভ বচ্চন। আগের বছর ১৯৮৩ তেই মুক্তি পেয়েছিল তাঁর হিট সিনেমা কুলি। কুলি চলচ্চিত্রের সেই ইমেজকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছিল কংগ্রেস। রুপোলি পর্দার নায়ক হয়ে উঠলেন মেহনতি মানুষের মুখ। এলাহাবাদ থেকে ৬৮ শতাংশ ভোট পেয়ে, বিপুল ভোটে জিতলেন অমিতাভ। আটের শোষকেই ভাগ হয়েছিল জনতা পার্টি। তৈরি হল নতুন দল বিজেপি। অটল বিহারি বাজপেয়ির নেতৃত্বে প্রথম ভোটে লড়লো চুরাশিতেই। পেল মাত্র দুটো আসন।

 

চুরাশির ভোটের হাওয়া যখন তুঙ্গে সেই সময়ই আরও একটা মারাত্নক বিপর্যয় ঘটে গিয়েছিল। ৩ ডিসেম্বর ১৯৮৪। মাঝরাত। কিন্তু এই ঘটনাও দমাতে পারলো না রাজীবকে। সেপ্টেম্বরের শেষ পঞ্জাবে বিধানসভা ভোট করাল কেন্দ্র। অকালি দল বিপুল ভোটে জিতল। অকালি দল পেল ৭৩ টি আসন। কংগ্রেস মাত্র ৩২। বিজেপিও কংগ্রেসের ঘরে নিঃশ্বাস ফেলছিল। ২৬ টি আসন পেল বিজেপি। অসমেও বিপুল জয় পেল আন্দোলনকারী অসম গণ পরিষদ। ৯২ টি সিট পেল তারা। কংগ্রেস পেল মাত্র ২৫ টি আসন। কংগ্রেস নেতারা বললেন, আমরা হেরেছি ঠিক আছে, কিন্তু গণতন্ত্র তো জিতেছে।

তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথা ছাড়া দিয়ে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তুলছিল। রাজীব পুনর্মিলনের বার্তা নিয়ে এসে তাকে নতুন আলো দেখালেন। পাঞ্জাব, আসাম, মিজোরাম তিন রাজ্যেই কংগ্রেস বিরোধীরা ক্ষমতায় এলেন। স্পষ্ট হল গণতন্ত্রের বহুত্ববাদী চরিত্র। দূরদর্শনে প্রচার হতে শুরু করল সংহতির বার্তা, মিলে সুর মেরা তুমহারা। মেরা ভারত মহান।

১৯৮৬-র ফেব্রুয়ারিতে রাজীব মুসলিম মহিলা বিল এনে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে উল্টে দিলেন। নতুন আইনে বলা হল, তিন তালাক দেওয়া স্ত্রীকে স্রেফ তিন মাসের খোরপোষ দিয়েই স্বামী তাঁর দায় ঝেড়ে ফেলতে পারবেন। এই আইনের প্রতিবাদে কংগ্রেস ছাড়লেন রাজীবের ঘনিষ্ঠ নেতা এবং পরামর্শদাতা আরিফ মহম্মদ খান।

একদিকে টার্গেট মুসলমান ভোট! আবার হিন্দু ভোটকেও হাতে রাখতে হবে। মাথা ছাড়া দিচ্ছে বিশ্বহিন্দু পরিষদের আন্দোলন। কি পদক্ষেপ করলেন রাজীব? কোন পথে ঘুরলো ভারতের রাজনীতি? ধর্ম কেন্দ্রিক রাজনীতির প্রকাশ্যে শুরু কি এই আটের দশকেই?

শাহ বানু মামলা মুসলিম ভোট নিয়ে সংশয় তৈরি করেছিল। এই পরিস্থিতিতে হিন্দু ভোটকে কোনভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি ছিলেন না রাজীব। তিনি শরণ নিলেন শ্রীরামচন্দ্রের। অন্যদিকে এই আবেগকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলেছে বিজেপি।

১৯৮৪ সাল। লোকসভায় বিজেপির ঝুলিতে মাত্র দুটো আসন। ১৯৮০ সালে পার্টি তৈরি হওয়ার পর এটাই ছিল বিজেপির প্রথম লোকসভার লড়াই। বিজেপির তখন লক্ষ্য হিন্দু ভোটকে এক ছাতার তলায় আনা। পালে হাওয়া দিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।

তার পর থেকেই ওই বিতর্কিত কাঠামোতে রামের পুজোর জন্য উন্মাদনা বাড়তে থাকে। উত্তেজনা কমাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সারা বছরের মধ্যে শুধু ডিসেম্বরের এক দিন রামলালার পুজো করা যাবে। বাকি সময় মূর্তি তালাবন্দি থাকবে। এই স্থিতাবস্থার বদল ঘটাল রাজীব গান্ধীর সরকার।

কংগ্রেস বুঝতে পারছিল, শাহবানু মামলায় তাদের অবস্থান এমনকি উদারবাদী হিন্দুদেরও বিরূপ করেছে। আর কট্টরবাদী হিন্দুরা তো কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই সরব। এই অবস্থায় মূলত হিন্দু ভোট ধরে রাখতেই ভারসাম্যের খেলা হিসেবে বিতর্কিত কাঠামোর অভ্যন্তরে রামলালার মূর্তি পুজো শুরু করার তোড়জোড় শুরু হল। ১৯৮৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেই অনুমতি দিলেন অযোধ্যা শহরের জেলা বিচারক। অনেকেরই বিশ্বাস, নির্দেশটা এসেছিল খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে।

হ্যাঁ, এই দৃশ্যও দেখতে হয়েছে দেশবাসীকে আটের দশকে। পরিস্থিতি হাতের মুঠোয় আসা তো দূর, রাজীবের সিংহাসনে কাঁটা দিনকে দিন আরও বাড়ছিল। কিছু দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর নাম জড়ালো দুর্নীতিতে। পাশাপাশি গলার কাঁটা হয়ে উঠলো তামিল সমস্যা ও শ্রীলঙ্কা? কাঁটা ছড়ানো পথে কীভাবে এগোলেন রাজীব?

দেশের হিন্দু আর মুসলিম ভোটব্যাংকের ভাগাভাগি নিয়ে যখন রাজীবের কপালে ভাঁজ, তখনই আর একটু অস্বস্তি বাড়ালো প্রতিবেশী দ্বীপ রাজ্য শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার তামিলদের ওপর ব্রিটিশদের পক্ষপাত ছিল। এই ঘটনা সিংহলি জনগণের ক্ষোভের কারণ হয়ে ওঠে স্বাধীনতার আগে থেকেই। 1948 সালে ব্রিটিশরা দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরপরই সংখ্যাগরিষ্ট সিংহলীরা ক্ষমতা লাভ করে এবং আস্তে আস্তে তামিলদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে।

শ্রীলঙ্কা আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন এলটিটিই নেতা প্রভাকরণ। তখন তামিলনাড়ুতে হাজার হাজার রেফুজির ভিড়। হস্তক্ষেপ করলেন রাজীব গান্ধী। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম সেনা শান্তির খোঁজে পাড়ি দিল প্রতিবেশী দ্বীপে।

কিন্তু শান্তি আনার চেষ্টাই ব্যাক ফায়ার করল রাজীবের জন্য। ভারতীয় সেনা এলটিটিইকে নিরস্ত্র করতে ব্যর্থ হল। এবার শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি। তামিলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল ভারতীয় সেনা। রাজীবের কাছে এই পিস ফোর্স পাঠানো যেন অনেকটা আমেরিকার কাছে ভিয়েতনাম যুদ্ধের মত হল।

৮৯-এর ভোটে হেরে গেলেন রাজীব গান্ধী। কংগ্রেস ৪০১ থেকে নেমে গেলো ১৯৭ টি আসনে। জনতা দল পেল ১৪৩ টি আসন। বিজেপি দুই থেকে বেড়ে এবার পঁচাশি। সিপিএম ৩৩। বিজেপি আর বামেদের সমর্থন নিয়ে প্রদাহন মন্ত্রী হলেন জনতা দলের নেতা ভি পি সিং। তৈরি হল ন্যাশনাল ফ্রন্টের সরকার।

কিন্তু বাস্তবে সংহতি আর শান্তি রক্ষা করতে পারেননি ভিপি। ক্ষমতায় এসেই তাঁর নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক তৈরির তাগিদে মোরারজি সরকারের সময়কালের মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ মাটি খুঁড়ে তুলে আনলেন। আর তার অভিঘাতে গোটা দেশ জুড়ে আগুন লেগে গেল। ১৯৯০-এর ১৯ সেপ্টেম্বর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজীব গোস্বামী। প্রাণ গেল ৬২ জনের। হিন্দুদের বিভাজনের অভিযোগে সরব হল জোটসঙ্গী বিজেপি। রামমন্দির তখন বিজেপির কাছে হিন্দু ঐক্যের তুরুপের তাস হয়ে উঠল। রাজীবের আমলে যা হয়েছিল, তার থেকেও জোরদার দাবী উঠল ভিপি সিংয়ের আমলে।

৩০ অক্টোবর ১৯৯০। বাবরির সামনে বিরাট জমায়েত আন্দোলনকারীদের। ব্যারিকেড ভেঙে পড়ল, রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বিতর্কিত কাঠামোর সামনের এলাকা।

এই গ্রেফতারিতে ছিঁড়ে গেল গাটবন্ধন।জোট ছাড়ল বিজেপি। টলে গেল গদি। সিংহাসন হারালেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং।কীভাবে গঠন হল পরবর্তী সরকার? রাজীবের কামব্যাক প্ল্যানই বা কী ছিল? দেখাব একটা ব্রেকের পর।

১৯৭৯তে মোরারজি সরকার যখন টলমল তখন চরণ সিংকে বাইরে থেকে শর্তসাপেক্ষ সমর্থন দিয়ে সরকার গড়েছিলেন ইন্দিরা। বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংয়ের সরকার পড়ার পর অনেকটা সেরকমই করলেন রাজীব। ন্যাশনাল ফ্রন্ট ভেঙে গেছে। ভেঙেছে জনতা দলও। চন্দ্রশেখর গঠন করেছেন নতুন দল। সমাজবাদী জনতা পার্টি। রাজীব বাইরে থেকে সমর্থন দিলেন চন্দ্রশেখরকে। প্রধানমন্ত্রী হলেন চন্দ্রশেখর।

সে সরকারও বেশিদিন টিকলো না দিল্লির গদিতে। এক অদ্ভুত ঘটনায় সমর্থন তুলে নিল কংগ্রেস। দুই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে উঠল চরবৃত্তির অভিযোগ। রাজীব গান্ধীর বাড়িতে তাঁরা নাকি দীর্ঘদিন চরবৃত্তি করছেন! আর এই ঘটনায় প্রতক্ষ্য মদতের অভিযোগ উঠল সমাজবাদী জনতা পার্টির প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে। দেশের অর্থনীতির তখন টালমাটাল অবস্থা। একদিকে শিল্প সংস্থার হাতে টাকা বাড়ছে। আর ঠিক সেই সময় ওড়িশার কোরাপুট আর কালাহান্ডিতে চলছে খরা। প্রাণ যাচ্ছে হাজারো মানুষের। এই পরিস্থিতিতেই আবার প্রশ্নের মুখে ভারতের গণতন্ত্র। আবার ঘোষণা হল ভোট।

কংগ্রেসকে এক ইঞ্চিও জমি ছেড়ে দিতে রাজি নন বিরোধীরা। রাজীবও বোফোর্সের কালি মুছে ফেলে নেমেছেন পুরো দমে ভোটের প্রচারে। ২০ মে একদফা ভোট হয়েছে দেশ জুড়ে। সামনে আরও দু দফা ভোট। ২১ মে ১৯৯১। রাজীব গান্ধী শুরু করলেন দক্ষিন ভারতের প্রচার।

রাত ১০.২১। রাজীব এগিয়ে চলেছেন মঞ্চের দিকে। একজন মহিলা হাতে মালা নিয়ে এগিয়ে এলেন। অভিবাদন জানালেন রাজীবকে। হঠাৎ একটা বিস্ফোরণের শব্দ। আর ডি এক্স। মৃত রাজীব গান্ধী। এলটিটিই-র প্রতিশোধ। রাজীব গান্ধীকে শ্রীলঙ্কায় পিসফোর্স পাঠানোর ফল ভুগতে হল প্রাণ দিয়ে।

 

ভোট। গোটা দেশের ভোট। ১৪০ কোটি মানুষের এই দেশে, পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের ভোট। ভারতীয় উপমহাদেশে ভোট মানে অনেক কিছু। তার একদিকে যেমন আছে শাসনতন্ত্র, প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য-অর্থনীতি- আবার অন্য দিকে এ এক উৎসব। মতামত প্রকাশের উৎসব। তাদের চাওয়া পাওয়ার হিসেবে মেলানোর উৎসব। ১৯৫২ সালে পথ চলা শুরু নির্বাচনী গণতন্ত্রের। কীভাবে বাঁক নিল তারপর? কোন কোন চ্যালেঞ্জ এসেছে তার পথে? এগিয়ে চলেছে কোন দিকে? এখন সেই কাহিনীর পালা। আজকের TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ ভোটযুদ্ধ দেশের লড়াইয়ের চতুর্থ পর্ব।

১৯৮৪-র ২৪ ডিসেম্বর শুরু হল লোকসভা নির্বাচন। ইন্দিরা হত্যা তখন কংগ্রেসের তুরুপের তাস। হত্যাকারীর জন্য বিক্ষোভ আর নিহত প্রধানমন্ত্রীর জন্য আবেগ। তখন দিকে দিকে। কংগ্রেসের মিছিলে, প্রচারে, বক্তৃতায় উঠে আসছে একটাই নাম। ইন্দিরা। ইন্দিরা গান্ধী।

 

এত সাফল্য তাঁর মা পাননি, তাঁর দাদুও নয়। এই নির্বাচনে কংগ্রেসের হয়ে ভোটে দাঁড়ান অমিতাভ বচ্চন। আগের বছর ১৯৮৩ তেই মুক্তি পেয়েছিল তাঁর হিট সিনেমা কুলি। কুলি চলচ্চিত্রের সেই ইমেজকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছিল কংগ্রেস। রুপোলি পর্দার নায়ক হয়ে উঠলেন মেহনতি মানুষের মুখ। এলাহাবাদ থেকে ৬৮ শতাংশ ভোট পেয়ে, বিপুল ভোটে জিতলেন অমিতাভ। আটের শোষকেই ভাগ হয়েছিল জনতা পার্টি। তৈরি হল নতুন দল বিজেপি। অটল বিহারি বাজপেয়ির নেতৃত্বে প্রথম ভোটে লড়লো চুরাশিতেই। পেল মাত্র দুটো আসন।

 

চুরাশির ভোটের হাওয়া যখন তুঙ্গে সেই সময়ই আরও একটা মারাত্নক বিপর্যয় ঘটে গিয়েছিল। ৩ ডিসেম্বর ১৯৮৪। মাঝরাত। কিন্তু এই ঘটনাও দমাতে পারলো না রাজীবকে। সেপ্টেম্বরের শেষ পঞ্জাবে বিধানসভা ভোট করাল কেন্দ্র। অকালি দল বিপুল ভোটে জিতল। অকালি দল পেল ৭৩ টি আসন। কংগ্রেস মাত্র ৩২। বিজেপিও কংগ্রেসের ঘরে নিঃশ্বাস ফেলছিল। ২৬ টি আসন পেল বিজেপি। অসমেও বিপুল জয় পেল আন্দোলনকারী অসম গণ পরিষদ। ৯২ টি সিট পেল তারা। কংগ্রেস পেল মাত্র ২৫ টি আসন। কংগ্রেস নেতারা বললেন, আমরা হেরেছি ঠিক আছে, কিন্তু গণতন্ত্র তো জিতেছে।

তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথা ছাড়া দিয়ে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে তুলছিল। রাজীব পুনর্মিলনের বার্তা নিয়ে এসে তাকে নতুন আলো দেখালেন। পাঞ্জাব, আসাম, মিজোরাম তিন রাজ্যেই কংগ্রেস বিরোধীরা ক্ষমতায় এলেন। স্পষ্ট হল গণতন্ত্রের বহুত্ববাদী চরিত্র। দূরদর্শনে প্রচার হতে শুরু করল সংহতির বার্তা, মিলে সুর মেরা তুমহারা। মেরা ভারত মহান।

১৯৮৬-র ফেব্রুয়ারিতে রাজীব মুসলিম মহিলা বিল এনে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে উল্টে দিলেন। নতুন আইনে বলা হল, তিন তালাক দেওয়া স্ত্রীকে স্রেফ তিন মাসের খোরপোষ দিয়েই স্বামী তাঁর দায় ঝেড়ে ফেলতে পারবেন। এই আইনের প্রতিবাদে কংগ্রেস ছাড়লেন রাজীবের ঘনিষ্ঠ নেতা এবং পরামর্শদাতা আরিফ মহম্মদ খান।

একদিকে টার্গেট মুসলমান ভোট! আবার হিন্দু ভোটকেও হাতে রাখতে হবে। মাথা ছাড়া দিচ্ছে বিশ্বহিন্দু পরিষদের আন্দোলন। কি পদক্ষেপ করলেন রাজীব? কোন পথে ঘুরলো ভারতের রাজনীতি? ধর্ম কেন্দ্রিক রাজনীতির প্রকাশ্যে শুরু কি এই আটের দশকেই?

শাহ বানু মামলা মুসলিম ভোট নিয়ে সংশয় তৈরি করেছিল। এই পরিস্থিতিতে হিন্দু ভোটকে কোনভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি ছিলেন না রাজীব। তিনি শরণ নিলেন শ্রীরামচন্দ্রের। অন্যদিকে এই আবেগকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে চলেছে বিজেপি।

১৯৮৪ সাল। লোকসভায় বিজেপির ঝুলিতে মাত্র দুটো আসন। ১৯৮০ সালে পার্টি তৈরি হওয়ার পর এটাই ছিল বিজেপির প্রথম লোকসভার লড়াই। বিজেপির তখন লক্ষ্য হিন্দু ভোটকে এক ছাতার তলায় আনা। পালে হাওয়া দিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।

তার পর থেকেই ওই বিতর্কিত কাঠামোতে রামের পুজোর জন্য উন্মাদনা বাড়তে থাকে। উত্তেজনা কমাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, সারা বছরের মধ্যে শুধু ডিসেম্বরের এক দিন রামলালার পুজো করা যাবে। বাকি সময় মূর্তি তালাবন্দি থাকবে। এই স্থিতাবস্থার বদল ঘটাল রাজীব গান্ধীর সরকার।

কংগ্রেস বুঝতে পারছিল, শাহবানু মামলায় তাদের অবস্থান এমনকি উদারবাদী হিন্দুদেরও বিরূপ করেছে। আর কট্টরবাদী হিন্দুরা তো কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই সরব। এই অবস্থায় মূলত হিন্দু ভোট ধরে রাখতেই ভারসাম্যের খেলা হিসেবে বিতর্কিত কাঠামোর অভ্যন্তরে রামলালার মূর্তি পুজো শুরু করার তোড়জোড় শুরু হল। ১৯৮৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেই অনুমতি দিলেন অযোধ্যা শহরের জেলা বিচারক। অনেকেরই বিশ্বাস, নির্দেশটা এসেছিল খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে।

হ্যাঁ, এই দৃশ্যও দেখতে হয়েছে দেশবাসীকে আটের দশকে। পরিস্থিতি হাতের মুঠোয় আসা তো দূর, রাজীবের সিংহাসনে কাঁটা দিনকে দিন আরও বাড়ছিল। কিছু দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর নাম জড়ালো দুর্নীতিতে। পাশাপাশি গলার কাঁটা হয়ে উঠলো তামিল সমস্যা ও শ্রীলঙ্কা? কাঁটা ছড়ানো পথে কীভাবে এগোলেন রাজীব?

দেশের হিন্দু আর মুসলিম ভোটব্যাংকের ভাগাভাগি নিয়ে যখন রাজীবের কপালে ভাঁজ, তখনই আর একটু অস্বস্তি বাড়ালো প্রতিবেশী দ্বীপ রাজ্য শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার তামিলদের ওপর ব্রিটিশদের পক্ষপাত ছিল। এই ঘটনা সিংহলি জনগণের ক্ষোভের কারণ হয়ে ওঠে স্বাধীনতার আগে থেকেই। 1948 সালে ব্রিটিশরা দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরপরই সংখ্যাগরিষ্ট সিংহলীরা ক্ষমতা লাভ করে এবং আস্তে আস্তে তামিলদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে।

শ্রীলঙ্কা আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন এলটিটিই নেতা প্রভাকরণ। তখন তামিলনাড়ুতে হাজার হাজার রেফুজির ভিড়। হস্তক্ষেপ করলেন রাজীব গান্ধী। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম সেনা শান্তির খোঁজে পাড়ি দিল প্রতিবেশী দ্বীপে।

কিন্তু শান্তি আনার চেষ্টাই ব্যাক ফায়ার করল রাজীবের জন্য। ভারতীয় সেনা এলটিটিইকে নিরস্ত্র করতে ব্যর্থ হল। এবার শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর পাশাপাশি। তামিলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল ভারতীয় সেনা। রাজীবের কাছে এই পিস ফোর্স পাঠানো যেন অনেকটা আমেরিকার কাছে ভিয়েতনাম যুদ্ধের মত হল।

৮৯-এর ভোটে হেরে গেলেন রাজীব গান্ধী। কংগ্রেস ৪০১ থেকে নেমে গেলো ১৯৭ টি আসনে। জনতা দল পেল ১৪৩ টি আসন। বিজেপি দুই থেকে বেড়ে এবার পঁচাশি। সিপিএম ৩৩। বিজেপি আর বামেদের সমর্থন নিয়ে প্রদাহন মন্ত্রী হলেন জনতা দলের নেতা ভি পি সিং। তৈরি হল ন্যাশনাল ফ্রন্টের সরকার।

কিন্তু বাস্তবে সংহতি আর শান্তি রক্ষা করতে পারেননি ভিপি। ক্ষমতায় এসেই তাঁর নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক তৈরির তাগিদে মোরারজি সরকারের সময়কালের মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ মাটি খুঁড়ে তুলে আনলেন। আর তার অভিঘাতে গোটা দেশ জুড়ে আগুন লেগে গেল। ১৯৯০-এর ১৯ সেপ্টেম্বর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজীব গোস্বামী। প্রাণ গেল ৬২ জনের। হিন্দুদের বিভাজনের অভিযোগে সরব হল জোটসঙ্গী বিজেপি। রামমন্দির তখন বিজেপির কাছে হিন্দু ঐক্যের তুরুপের তাস হয়ে উঠল। রাজীবের আমলে যা হয়েছিল, তার থেকেও জোরদার দাবী উঠল ভিপি সিংয়ের আমলে।

৩০ অক্টোবর ১৯৯০। বাবরির সামনে বিরাট জমায়েত আন্দোলনকারীদের। ব্যারিকেড ভেঙে পড়ল, রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বিতর্কিত কাঠামোর সামনের এলাকা।

এই গ্রেফতারিতে ছিঁড়ে গেল গাটবন্ধন।জোট ছাড়ল বিজেপি। টলে গেল গদি। সিংহাসন হারালেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং।কীভাবে গঠন হল পরবর্তী সরকার? রাজীবের কামব্যাক প্ল্যানই বা কী ছিল? দেখাব একটা ব্রেকের পর।

১৯৭৯তে মোরারজি সরকার যখন টলমল তখন চরণ সিংকে বাইরে থেকে শর্তসাপেক্ষ সমর্থন দিয়ে সরকার গড়েছিলেন ইন্দিরা। বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংয়ের সরকার পড়ার পর অনেকটা সেরকমই করলেন রাজীব। ন্যাশনাল ফ্রন্ট ভেঙে গেছে। ভেঙেছে জনতা দলও। চন্দ্রশেখর গঠন করেছেন নতুন দল। সমাজবাদী জনতা পার্টি। রাজীব বাইরে থেকে সমর্থন দিলেন চন্দ্রশেখরকে। প্রধানমন্ত্রী হলেন চন্দ্রশেখর।

সে সরকারও বেশিদিন টিকলো না দিল্লির গদিতে। এক অদ্ভুত ঘটনায় সমর্থন তুলে নিল কংগ্রেস। দুই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে উঠল চরবৃত্তির অভিযোগ। রাজীব গান্ধীর বাড়িতে তাঁরা নাকি দীর্ঘদিন চরবৃত্তি করছেন! আর এই ঘটনায় প্রতক্ষ্য মদতের অভিযোগ উঠল সমাজবাদী জনতা পার্টির প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে। দেশের অর্থনীতির তখন টালমাটাল অবস্থা। একদিকে শিল্প সংস্থার হাতে টাকা বাড়ছে। আর ঠিক সেই সময় ওড়িশার কোরাপুট আর কালাহান্ডিতে চলছে খরা। প্রাণ যাচ্ছে হাজারো মানুষের। এই পরিস্থিতিতেই আবার প্রশ্নের মুখে ভারতের গণতন্ত্র। আবার ঘোষণা হল ভোট।

কংগ্রেসকে এক ইঞ্চিও জমি ছেড়ে দিতে রাজি নন বিরোধীরা। রাজীবও বোফোর্সের কালি মুছে ফেলে নেমেছেন পুরো দমে ভোটের প্রচারে। ২০ মে একদফা ভোট হয়েছে দেশ জুড়ে। সামনে আরও দু দফা ভোট। ২১ মে ১৯৯১। রাজীব গান্ধী শুরু করলেন দক্ষিন ভারতের প্রচার।

রাত ১০.২১। রাজীব এগিয়ে চলেছেন মঞ্চের দিকে। একজন মহিলা হাতে মালা নিয়ে এগিয়ে এলেন। অভিবাদন জানালেন রাজীবকে। হঠাৎ একটা বিস্ফোরণের শব্দ। আর ডি এক্স। মৃত রাজীব গান্ধী। এলটিটিই-র প্রতিশোধ। রাজীব গান্ধীকে শ্রীলঙ্কায় পিসফোর্স পাঠানোর ফল ভুগতে হল প্রাণ দিয়ে।

 

Next Video