আজ শিবরাত্রি, শিবকে বলা হয় নটরাজ। নাটকের রাজা। বাস্তবের নটদের রঙ্গমঞ্চের এক করুণ কাহিনি আজ। ৯৯৯ টি দর্শকাসন ছিল এই হলের। মানিকতলার খালের ধারে ক্যানাল ওয়েস্ট রোডের কাশি বিশ্বনাথ মঞ্চের। ব্যালকনি ছিল, ঝুল বারান্দা ছিল। মার্চেন্ট অফ ভেনিস ছিল, নামজীবন ছিল, শকুনির পাশা ছিল, এক গৌরবের অতীত ছিল, হাউসফুল ছিল, বোর্ড শো ছিল, থার্ড বেল ছিল, কার্টেন কল ছিল, এই মঞ্চের। কাশি বিশ্বনাথের। আর আজ যেন পোড়ো, হানা বাড়ি।
হলের প্রবেশপথে ‘ওয়েলকাম’ লেখা কাচের ফলকটা আজও জেগে আছে। ভেঙে গিয়ে হেলে পড়লেও যেন জেগে আছে। জেগে আছেন তার নিচেই দেবাদিদেব বিশ্বনাথ। কাচের ফ্রেমে বন্দি হয়ে। আছেন দেওয়াল থেকে আশ্বাস দেওয়া পবনপুত্র হনুমান। আর আছে অবজ্ঞার পাহাড়। অবহেলার পর্বত। বঞ্চনার স্তুপ। একসময়ে এই হলে চা আর স্ন্যাক্স ফেরি করতেন মদন গোপাল হালদার। মদন বাবু এখন নাটকের সেট তৈরি করেন। তিনি বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন এই মঞ্চটাকে। মদনবাবু বলছেন বিভিন্ন নাটকের দলের সেটের স্তুপে ভর্তি এখন হলের ভিতরটা। নষ্ট হয়ে গেছে স্টেজটা। অনেকবার চেষ্টা হয়েছে মঞ্চটাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে বহুতল তোলার। উত্তম কুমার, সাবিত্রি দেবী, সুমিত্রা দেবী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিধন্য এই প্রেক্ষাগৃহে নাটক দেখেছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও।
অতীতের সে গৌরব আজ চাপা পড়েছে পুরু ধুলোর তলায়। পরতে পরতে জমে অবজ্ঞার ঝুল, কালি আর মরচে। একসময়ে বিখ্যাত মুখেদের দেখতে ভিড় জমত যে কাশি বিশ্বনাথে আজ যেন সে শ্মশানবাসী। কোন ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে আজও বসে আছে এই বিশ্বনাথ?
নাট্যজগতের মানুষরা বলছেন কাশি বিশ্বনাথ মঞ্চের মত শহরের পুরনো নাটকের হল গুলিকে সাজিয়ে গুজিয়ে সারালে করা যেতেই পারত একটা কালচারাল টুরিজম। নাট্যমোদী তরুণবাবু বিজ্ঞাপন জগতের চেনামুখ। তাঁর চোখে আজও উজ্জল এই বিশ্বনাথের সোনালি দিন গুলো।
অভিনেতা দেবদূত ঘোষ বলছেন “শুধু কাশি বিশ্বনাথ নয়, সম্প্রতি গিরীশ মঞ্চে আগুন লেগেছিল, মিনার্ভার মেকআপ রুমের অবস্থা এমন যে কাজ করা কঠিন , ব্যারাকপুর সুকান্ত সদনের সাজঘরে জল ঢুকে যায়। এই সরকারের চরম অবহেলারই নিদর্শন এগুলো। আগের সরকারের আমরা সমর্থক হই বা না হই, সেই সরকার থিয়েটারের সমর্থক ছিল। থিয়েটার বা শিল্প বান্ধব নয় এই সরকার।”