অন্যদের থেকে একটু আলাদা দেখতে চেয়েছিলেন নিজেকে। না-পাওয়া, না-দেখার দুনিয়ায় সকলের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছিলেন। আর সেই নজর কাড়ার কায়দাই তাঁর জীবনে ডেকে আনল মহা বিপদ! হতে চেয়েছিলেন এলিয়েন। কিন্তু মানুষ কি আবার এলিয়েন হতে পারে? তাই, সং সেজেছিলেন সেই ফ্রেঞ্চম্যান। নিজেই নিজেকে ‘ব্ল্যাক এলিয়েন’ (Black Alien)-এর রূপ দিয়েছিলেন। গোটা মাথায় আঁকিবুকি, সারা শরীরে তাঁর ট্যাটু (Tattoo)। আর এরকম উদ্ভট সাজের জন্যই তিনি কোথাও কাজ (Job) পাচ্ছেন না। শখ করে সং সাজার যে কী পরিণাম হতে পারে, হারে হারে টের পাচ্ছেন অ্যান্থনি লোফরেডো নামের সেই ব্যক্তি। জানালেন, তিনি কেমন দেখতে, তার উপরে ভিত্তি করে মানুষজন আজকাল বড়ই জাজ করছেন তাঁকে।
অ্যান্থনি নিজেই নিজেকে ‘ব্ল্যাক এলিয়েন’ বলে থাকেন। সারা শরীরময় তাঁর ট্যাটু। এমনকী বাদ যায়নি চোখের মণিও। সেই সঙ্গেই আবার অতিরিক্ত বডি মডিফিকেশনও করেছেন। ধারালো ভাবের জন্য জিভটা কেটে ফেলেছেন, কাল্পনিক জগতের এলিয়েনদের যে রকম রূপটা আমরা দেখে এসেছি, তার থেকে কোনও অংশে কম নয়। তবে অ্যান্থনি বলছেন, পপ কালচারকে উৎসর্গ করেই এই লুকটা তিনি রেখেছেন। বাম হাতের শেষ দুটি আঙুল একই সঙ্গে মেলাতে তিনি ওই আঙুল দুটিও কেটে ফেলেছেন। একবার ভাবুন, অন্যরকম লুকে পরিচিত হতে শরীর নিয়ে কী কাটাছেঁড়াটাই না করেছেন অ্যান্থনি।
ক্লাব 113 নামক একটি পটকাস্ট অনুষ্ঠানে এসে নিজের জীবনের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার দিকগুলি তুলে ধরেছেন ব্ল্যাক এলিয়েন। তাঁর কথায়, “আমি কোথাও কাজ পাচ্ছি না, চারিদিকে মানুষজনের নেতিবাচক মনোভাব। আমি যদি কিছু করে ভাল থাকি, তাহলে তো সবার ইতিবাচক থাকার কথা। কিন্তু না। এর পিছনে একটা অন্ধকার দিক লুকিয়ে রয়েছে, সেটাও সকলের জানা দরকার।”
অ্যান্থনি যখন রাস্তায় বেরোন, তখন লোকজনের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সে কথাও খোলসা করে জানিয়েছেন তিনি। রাস্তায় চলাটাই যে তাঁর জন্য কতটা অসম্মানজনক, কতটা সমস্যার, সে কথাও বললেন অ্যান্থনি। তবে লোকে যে তাঁকে দেখলে অবাক হবেন, সে কথাটা ভেবেই এমন লুকওভার দিয়েছেন নিজেকে। স্বীকারও করে নিয়েছেন তা। কিন্তু তারপরই অন্ধকার দিকটার প্রসঙ্গ তুলে বললেন, “আমার পাশ দিয়ে লোকজন যাওয়ার সময় সকলে ছুটে পালিয়ে যেত। তাই, রাস্তার একপাশ দিয়ে যেতাম। কিন্তু তাতেও সেই একই সমস্যা।” অর্থাৎ, তাঁর যেন রাস্তায় চলাফেরা করাটাই এখন নিদারুণ সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
“প্রতিদিন এ যেন একটা নতুন লড়াই। নতুন কোনও মানুষ আমাকে দেখে, কিছু না জেনে, না বুঝেই জাজ করে ফেলে। এটা জীবন, আমার জীবন। সবাই সব কিছু বোঝে না। যেমন আমি, অনেকের অনেক কিছু বুঝতে পারি না। কিন্তু তা বলে কাউকে জাজ করি না। কার মাথায় কী চলছে, তা কেউ বাইরে থেকে দেখে বুঝতে পারবে না। কেন এমনটা করেছেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলা দরকার, জাজ করা একদমই না”, বললেন অ্যান্থনি লোফরেডো।
তাঁর বক্তব্য, আর পাঁচটা মানুষের মতো তিনিও খুব সাধারণ। তাই, সাধারণ মানুষের মতোই আচরণ আশা করেন অন্য লোকজনের কাছে, জানালেন ব্ল্যাক এলিয়েন। বলছেন, “আমি একটা সাধারণ মানুষ। কাজ করি, খেটে খাই, পরিবার রয়েছে। একটটা চাকরির খোঁজ করছি, যেখানে মানুষ আমাকে সাধারণের চোখেই দেখবেন। এক্কেবারে সাধারণ, যাঁর পরিবার আছে, বন্ধু আছে, আছে প্রেমিকাও। এগুলোই আমাকে সাধারণ রাখে।”