Viral: ‘স্কুল শিক্ষক ব্যতীত’ পাত্র চাই! ভাইরাল বিজ্ঞাপনী পোস্ট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র বিতর্ক, চলছে ব্যঙ্গবিদ্রুপও

TV9 Bangla Digital | Edited By: সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়

Jun 29, 2022 | 12:43 PM

North Dinajpur News: পাত্র চাইয়ের একটি বিজ্ঞাপন ভাইরাল হল এবার। পাত্রীপক্ষ এমনই পাত্রের সন্ধানে রয়েছেন, যিনি স্কুলে শিক্ষকতা করেন না। সেই বিজ্ঞাপন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম। TV9 Bangla-র পক্ষ থেকে পাত্রীর পরিবারে ফোন করা হয়। উত্তর আসে...

Viral: স্কুল শিক্ষক ব্যতীত পাত্র চাই! ভাইরাল বিজ্ঞাপনী পোস্ট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র বিতর্ক, চলছে ব্যঙ্গবিদ্রুপও
প্রতীকী ছবি।

Follow Us

রবিবারের সকালবেলা। খবরের কাগজে চোখ বোলানোর সময় তখন। ব্যস্ততম সপ্তাহটা পার করে একটা ঝঞ্ঝাটহীন রবিবার। কোনও খবর যাতে মিস করে না যাই, এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সংবাদপত্রে নজর রাখা আম বাঙালির নজর ঘুরল একটা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে। যা ঘুরে বেড়াচ্ছিল ফেসবুক থেকে শুরু করে ট্যুইটার, এমনকী হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসেও। ভাইরাল পোস্টে ছিল, জনপ্রিয় সংবাদপত্রের পাত্র-পাত্রী চাই শীর্ষক বিশেষ পাতাটির একটি ছবি। বিজ্ঞাপনে এমনই এক সুযোগ্য পাত্রের সন্ধান করা হয়েছে, যা এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতির হট টপিক! স্নাতক পাশ পাত্রী সুশ্রী, চাকরি করেন, কর্মস্থল ধূপগুড়ি এবং নিজেদের বাড়ি রয়েছে উত্তর দিনাজপুরে। উপযুক্ত পাত্রকে উত্তরবঙ্গ সংলগ্ন হতে হবে বলেই পোস্টে লেখা হয়। আর সেই সঙ্গেই ব্র্যাকেটে জুড়ে দেওয়া হয়, ‘স্কুল শিক্ষক ব্যতীত।’

গত রবিবার থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিউতি যে ভাইরাল ছবিটি ঘোরাফেরা করছে, তার শিরোনামে লেখা, ‘স্কুল শিক্ষকদের বাজার শেষ’। হাসতে হাসতে চোখে জল আসার ইমোটিকনও যোগ করা হয়েছে সেই পোস্টের সঙ্গে। ছবিতে যোগ করা হয়েছে সংবাদপত্রের সেই পাত্র চাই শীর্ষক বিতর্কিত বিজ্ঞাপন। তার সঙ্গে লাল কালিতে মার্ক করে দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞাপনের ‘স্কুল শিক্ষক ব্যতীত’, এই বিশেষ অংশটি।

এই বিজ্ঞাপনের সত্যতা যাচাই করতে TV9 বাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় পাত্রীর বাড়ির ফোন নম্বরে। বিজ্ঞাপনেই সেই নম্বরটি উল্লেখ করা হয়েছিল। রিং করা মাত্রই ফোনের ওপার থেকে এক মহিলা কণ্ঠের জবাব, “বেশ ফ্যাসাদে পড়লাম তো!” আর এই কথা বলতে না বলতেই ফোনটা তিনি হুট করে কেটে দেন। এরপর আমরা একটা অন্য ফোন নম্বর থেকে যোগাযোগ করি। তখন উত্তর আসে, “এই বিজ্ঞাপন আমাদের নয়।” তখন আমরা প্রশ্ন করি, “আপনাদের নম্বরই তো দেওয়া আছে। কেন স্কুল শিক্ষককে ভয়? আপনারা যদি বিজ্ঞাপন না দিয়ে থাকেন, তাহলে পুলিশকে জানাচ্ছেন না কেন?” কোনও প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফোনটা আবারও কেটে দেন তিনি।

বিতর্কিত সেই স্কুল শিক্ষক ব্যতীত পাত্র চাই বিজ্ঞাপনের ছবি।

এসএসসি এবং টেট দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যজুড়ে টালমাটাল পরিস্থিতি। দুর্নীতির জেরে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে ইতিমধ্যেই চাকরি গিয়েছে ২৬৯ জন শিক্ষকের, যার মধ্য রয়েছেন উত্তর দিনাজপুরেরই ৪০ জন। এদের প্রত্যেকেই বেআইনি ভাবে, অর্থের বিনিময়ে চাকরি পেয়েছেন বলে জানিয়েছে আদালত। এখন পাত্র চাইয়ের বিজ্ঞাপনেও উত্তর দিনাজপুরের পাত্রীর পরিবার চেয়ে বসলেন এমনই পাত্র, যিনি স্কুলে শিক্ষকতা করলে চলবে না। স্বাভাবিক ভাবেই এই বিজ্ঞাপন যে ভাইরাল হবে, তা অনুধাবন করতে রকেট সায়েন্স বোঝার দরকার হয় না। তবে নজর ঘোরানোর মতো বিষয়টি হল, এই পোস্ট যে বর্তমানে শিক্ষকতার চাকরি নিয়েই বড় প্রশ্ন তুলে দিল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মানুষ নানাবিধ মন্তব্য করেছেন এই পোস্টটিকে নিয়ে। কেউ সমালোচনা করেছেন, কেউ পক্ষে বলেছেন, কেউ বা বিপক্ষে। ফেসবুকে একজন এই ভাইরাল ছবিটি পোস্ট করে লিখছেন, “দেখেও ভাল লাগছে, কাল যে শিক্ষকরা মোস্ট এলিজিবল বলে বিবেচিত হতেন, এখন তাঁদেরও সুপাত্রের তালিকায় রাখছেন না পাত্রীরা। একেই বোধহয় খেলা ঘুরে যাওয়া বলে।” আর একজনের বক্তব্য, “স্কুলের চাকরি পাইনি ভালই হয়েছে। কসরত করে স্কুলে চাকরি পেতাম আর লোকে সন্দেহ করত, ঘুষ দিয়ে মাস্টারমশাই হয়েছি।” অন্যজন একটু অন্যরকম মন্তব্য করে লিখছেন, “একটা ভাল ছেলে চাই কেউ লেখে না কেন। যোগ্য পাত্র মানেই কী, তাঁকে স্কুলে শিক্ষকতা করতে হবে বা হবে না।”

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন কারণে সত্যিটা এড়িয়ে যেতে চাইছেন ওই পাত্রীর পরিবারের সদস্যরা? সংবাদমাধ্যমের খবরে এলে নতুন করে ‘ট্রোলড’ হওয়ার ভয়? নাকি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিউতি ঘুরে বেড়ানো বিভিন্ন ভাইরাল পোস্ট নজরে আসতে মনের মধ্যে একটা চাপা ভয় কাজ করছে? এই দু’টোর সম্ভাবনাই সবথেকে জোরালো। কারণ, শুধু এই ‘বিতর্কিত’ ‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপনই—নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে দেখা গিয়েছে, কোনও কিছু ঘটে গেলে তা যদি কারণে বা অকারণে ভাইরাল হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিতর্ক এড়াতে সত্যিটাকে সত্যি বলতে ভয় পান। আখছারই শোনা যায়, ‘ওটা আমার লেখা নয়’, বা ‘ওই পোস্ট আমি করিনি’ অথবা, ‘এমন তো আমি বলিনি’। ঠিক যেন, ভাইরাল পোস্টের মালিক হয়েও অন্যের ঘাড়ে সেই মালিকানা ঠেলে দেওয়ার একটা সহজাত প্রবৃত্তি।

কিন্তু সত্যিটা এড়িয়ে গিয়ে লাভ কী? সবকিছু যখন চোখের সামনে পরিষ্কার, তখন কে, কী বললেন, তাতে কী-ই বা যায় আসে! আসলে এই সমস্যাটা গোঁড়ায়। সমস্যাটা ঠিক সেখানে, যেখানে একটা পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পরই শুরু হয়ে যায় ট্রোলিং। আর সেই ট্রোলিংয়ের কারণেই ‘ভাইরাল’ ব্যক্তিরা ফোনের ওপার থেকে উত্তর দিয়ে থাকেন, ‘‘এই বিজ্ঞাপন আমার নয়।’’ বাড়তি চাপটা তাঁরা কাঁধে করে বয়ে নিয়ে বেড়াতে চান না। তাই গোড়ার সমস্যা ও তার সমাধানে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুজিত সরখেলের সঙ্গে। দু’টি প্রশ্ন রাখা হয়েছিল তাঁর কাছে। এক, সোশ্যাল মিডিয়ায় কাউকে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করার পিছনে কাজ করে কোন মনস্তত্ব? দুই, ভাইরাল হওয়া ছবি-ভিডিয়ো থেকে উদ্ভূত চাপ এড়াতে কী করণীয়?

প্রথম প্রশ্নের উত্তরে ডাঃ সরখেল বলছেন, ‘‘এর পিছনে রয়েছে সেই বহু পুরাতন এবং একমাত্র তত্ত্ব। কাউকে ছোট করা এবং তার মধ্যে দিয়ে নিজের দশটা সমস্যা ঢেকে ক্ষণিকের জন্য আনন্দ উপভোগ করা। সামনাসামনি কাউকে ছোট করা বা হাসির খোরাক বানানো যতটা কঠিন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ততটাই সহজ। কারণ, ফেসবুক বা অন্য কোনও প্ল্যাটফর্মে তো আর কাউকে আইসোলেট করার ব্যাপার নেই। খুল্লমখুল্লাও কিছু নেই। কেউ কাউকে দেখতেও পাচ্ছে না। তাই নিজের আনন্দের জন্য অন্যকে যত পারো ছোট করে যাও। সমাজের হায়ারার্কি নষ্ট করে দিচ্ছে ছোট্ট মোবাইল ফোনে আবদ্ধ থাকা সমাজমাধ্যম নামক ক্ষেত্রটা।’’

কিন্তু এই ধরনের ট্রোলিং এবং সর্বোপরি একটা ভাইরাল পোস্ট থেকে উদ্ভূত চাপ এড়াতে কী করা উচিৎ? ডাক্তারবাবুর উত্তর, ‘‘ওই ব্যাপারটার মধ্যে না থাকা। যতদিন সম্ভব সোশ্যাল মিডিয়া থেকে একটা লম্বা ব্রেক নেওয়া। কে, কী রিপ্লাই করছেন, কী বলছেন—মানুষ তার নিজ সত্ত্বাকে নিয়ে কোথায়, কী আলোচনা হচ্ছে, এগুলো জানতে ভালবাসেন। খারাপ কিছু দেখলে বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। আর ভাল কিছু হলে তো মানুষ বয়ে যান। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলড হলে সেই প্ল্যাটফর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখুন। পারলে কয়েকদিন ঘুরে আসুন, ভাল লাগবে।’’

Next Article