আলিপুরদুয়ার: একের পর এক নির্বাচন পেরিয়ে গিয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে একাধিক জনমুখী প্রকল্প। কিন্তু যে আধার কার্ডের দৌলতে সরকারি সমস্ত সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে সেই আধার কার্ডই (Aadhar Card) পাননি অনেকে। অবশেষে আধার কার্ড করাতে সেন্টারের বাইরে দীর্ঘ লাইন দিয়েছেন মানুষ। আর তাতেই সক্রিয় হয়েছে বেশ কিছু দালাল গোষ্ঠী। মোটা টাকা দিলেই আগে আগে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে টোকেন। দ্রুত মিলছে আধার কার্ড! এমনই চাঞ্চল্যকর ছবি আলিপুরদুয়ার শহরের মায়া টকিজ মোড়ে।
ঠিক কী অভিযোগ এলাকাবাসীর?
তাঁদের অভিযোগ, অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও আধার কার্ড পাননি কেউ। অবশেষে যখন আধার কার্ড ফের তৈরির ব্যবস্থা করা হল, তখন সেন্টারের বাইরে রীতিমতো নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হল প্রতিদিন মোট ১২০ জনের আধার কার্ড তৈরির টোকেন মিলবে। তারমধ্যে ৬০ জন পুরুষ ও ৬০ জন মহিলা। এদিকে, আধার কার্ড না পাওয়ার সংখ্যা প্রায় হাজার ছাড়িয়েছে। এতজনের আধার কার্ড তাহলে কবে মিলবে? অগত্যা, সেন্টারের বাইরেই একরকম সংসার পেতে ফেলেছেন তাঁরা।
হাড়কাঁপানো শীতের রাতে মশারী টাঙিয়ে কম্বলমুড়ি দিয়ে সেখানেই শুয়ে থাকছেন পুরুষ-মহিলা উভয়েই। বাদ নেই শিশুরাও। কিন্তু, তারপরেও মিলছে না আধার কার্ড। কারণ সর্ষের মধ্যেই ভূত! ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা দিলেই আগেভাগে মিলছে টোকেন। সেই টোকেন জমা দিলেই মিলছে আধার কার্ড। আর এই টাকার বদলে টোকেন দিচ্ছেন দালালরা, অভিযোগ এমনটাই।
সক্রিয় এই দালাল চক্রের দাপটে বিপদে পড়েছেন দুঃস্থরা। কারণ, মোটা টাকা দিয়ে টোকেন কেনার সাধ্য তাঁদের নেই। অগত্যা উপায়? সেন্টারের বাইরে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকা ও অপেক্ষার দিন গোনা।
বৃহস্পতিবার রাতে ছোটো তিন সন্তানকে আধার কার্ড বানাতে নিয়ে এসেছিলেন আমিনা খাতুন। তিনি আইটিআই মোড় থেকে আলিপুরদুয়ারে আসেন। ওইদিন রাত্রি আটটা নাগাত তিন সন্তান-সহ মশারি,কম্বল নিয়ে আধার সেন্টারের সামনেই বিছানা করে বসে পড়েন। সেখানেই রাত্রিবাস। আমিনার কথায়, “আমি তিন দিন ধরে আধার কার্ড করাতে এসে ঘুরে যাচ্ছি। তিন-তিনটে ছোট বাচ্চা। টোকেনের জন্য টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। লাইনে দাঁড়ালেও কার্ড পাচ্ছিনা। তাই ঠিক করেছি কার্ড নিয়েই ফিরব। এখানেই এভাবে থাকব, যতদিন না কার্ড হচ্ছে।” শুধু আমিনা নন, তাপস দে,রফিকুল ইসলাম,পার্থ মণ্ডল সকলের অবস্থাই এক।
তাহলে উপায়?
যে আধার সেবা কেন্দ্রে এই কার্ড তৈরির কাজ চলছে সেই কেন্দ্রের কোনও কর্মীই এর সদুত্তর দিতে পারেননি। তাঁদের সাফ দাবি, টোকেন জমা দিলেই আধার কার্ড পাওয়া যাবে। কীভাবে টোকেন জমা পড়ছে তা জানা নেই। তবে, ১২০ জনের বেশি একদিনে আর আধার কার্ড করে দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।