আলিপুরদুয়ার: রাজ্যের নারী নিরাপত্তা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠে গেল আলিপুরদুয়ারের এক ঘটনায়। আলিপুরদুয়ার জেলার এক আদিবাসী ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। জানা যাচ্ছে, ঘটনাটি ঘটেছিল মঙ্গলবার রাতে। গতকাল পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে শামুকতলা থানার পুলিশ। আরও দুই অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। এদিকে ওই নাবালিকা ওই কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে এদিন দেখা করতে গিয়েছিলেন বিজেপির এক প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওঁরাও, বিজেপি মহিলা মোর্চার সহসভাপতি কল্পনা নাগ সহ অন্যান্যরা। রাজ্যে আদিবাসীরা সুরক্ষিত নয় বলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুর চড়াল বিজেপি। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের তরফেও ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার সন্ধেয় অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ওই আদিবাসী ছাত্রী মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়েছিল। মাঠে গরু না পেয়ে, পাশেই একটি নদীর ধারে সে গরু খুঁজতে গিয়েছিল। সেই সময়েই ওই নাবালিকাকে কুপ্রস্তাব দেয় কয়েকজন কিশোর। নাবালিকা কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় প্রথমে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এরপর ওই কিশোররা মেয়েটিকে জোর করে নদীর ধারে একটি জঙ্গলে টেনে নিয়ে যায় এবং সেখানেই পাঁচজনের মধ্যে তিনজন মিলে নাবালিকার গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। অভিযুক্তরা নাবালিকার পূর্ব পরিচিত বলে জানা যাচ্ছে।
গতকাল অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেয় পুলিশ প্রশাসন। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ শামুকতলা থানা ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অভিষেক ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা আলিপুরদুয়ার থানা এলাকায় এক অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে। বাকি দুই অভিযুক্তের খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। শামুকতলা থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অভিষেক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, রাতে ধর্ষণের অভিযোগ হওয়ার পরেই অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা করা হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশি জানাচ্ছেন, ‘একটি গণধর্ষণের অভিযোগ হয়েছে। আমরা তিনজনকে গ্রেফতার করেছি। ধৃতদের হেফাজতে চেয়েছি। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’
এদিকে আলিপুরদুয়ারের এই ঘটনায় বিজেপির মহিলা মোর্চার সহসভানেত্রী কল্পনা নাগ বলেন, এ রাজ্যে আদিবাসীরা সুরক্ষিত নয়। একজন আদিবাসী ছাত্রী গনধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। ওই পরিবারের পাশে থাকারও বার্তা দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে বিজেপি বিধায়ক মনোজ ওরাও রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। বললেন, ‘রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মহিলা। সেখানে মহিলারা নির্যাতিত হচ্ছে। এটাকে ধিক্কার জানাচ্ছি।’
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব জানাচ্ছে, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক। হিংসাত্মক ঘটনা। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। পুলিশ ব্যাবস্থা নিচ্ছে। ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। আজ ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যাবস্থা করছি। পুলিশ প্রশাসনকে কড়া ব্যাবস্থা নিতে বলেছি।’