আলিপুরদুয়ার: চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণার অভিযোগ উঠল এক তৃনমূল নেতার বিরুদ্ধে। ওই তৃনমূল নেতা ইতিমধ্যে আলিপুরদুয়ার শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকার শিক্ষিত যুবকদের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। টাকা নিলেও কাউকে চাকরি দেননি বলে অভিযোগ। উল্টে টাকা চাইতে গেলে ওই তৃণমূল নেতা প্রতারিত যুবকদের হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণায় অভিযুক্ত ওই তৃণমূল নেতার নাম বিপ্লব কুমার ঘোষ। তিনি একসময় কিসান ক্ষেত মজুর কমিটির জেলা সম্পাদক ছিলেন। এবং প্রতিটি নির্বাচনে ১২/১১১ বুথের দায়িত্ব সামলাতেন। ঘটনার শুরু হয়েছিল ২০১৮ সাল থেকে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত বহু চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে নগদে কিংবা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লক্ষ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ বিপ্লবের বিরুদ্ধে। তিনি টাকা নেওয়ার জন্য আলিপুরদুয়ারে বেশ কয়েকজন এজেন্টও নিয়োগ করেছিলেন। সেই এজেন্টের মাধ্যমে তার হাতে পৌঁচ্ছে যেত লক্ষ লক্ষ টাকা।
আলিপুরদুয়ার শহর থেকে ৭/৮ কিলোমিটার দূরে বনচুকামারী গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২/১১১ বুথে বাড়ি অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার। তিনি প্রতিটি নির্বাচনে ওই বুথের দায়িত্বে থাকতেন। কিসান ক্ষেত মজুর কমিটির জেলা সম্পাদকও ছিলেন। যদিও ওই পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃদুল গোস্বামী, কিসান ক্ষেত মজুর নেতা বেচারাম মান্না, প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে তাঁর ছবি রয়েছে। তিনি বেকার ছেলে মেয়েদের চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তুলতেন বলে অভিযোগ। স্কুলের গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি বা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়া হবে বলে তিনি বেকার যুবকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
টিভি৯ বাংলা এরকম প্রতাড়িত ৩ যুবকের সন্ধান পায়। কারও কাছে ১১ লক্ষ, কারও কাছ থেকে ১২ লক্ষ, কারও কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা করে নিয়েছেন ওই কীর্তিমান নেতা। আলিপুরদুয়ার জেলায় এই সংখ্যাটা ৫০ ছাড়িয়ে যাবে। টাকা দিয়ে চাকরি না পেয়ে হতাশ বেকার যুবকরা। তাঁরা অভিযুক্ত নেতার বাড়িতে টাকা চাইতে গেলেও হদিশ পাচ্ছেন না প্রতারক তৃণমূল নেতা বিপ্লব ঘোষের। উল্টে বাড়িতে তাঁর স্ত্রী বেকার যুবকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ। আলিপুরদুয়ার থানার পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করেছেন প্রতারিত যুবকরা।
বিষয়টি নিয়ে প্রতারিত এক যুবকের অভিভাবক জানিয়েছেন, রেল থেকে অবসর নিয়ে যে টাকা পেয়েছিলেন তা ছেলের চাকরির জন্য বিপ্লব ঘোষকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চাকরি হয়নি। এ নিয়ে তৃনমূলের চেয়ারম্যান মৃদুলবাবুর কাছে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে বিজেপি নেতা জয়ন্ত রায় তৃণমূলকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “তৃণমূল কংগ্রেস মানেই চোর। ৪০-৫০ জন বেকার যুবককে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা নিয়েছে। সেই ধারাটা ওই তৃণমূল নেতা বজায় রেখেছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”
অন্য দিকে তৃঁমূলের আলিপুরদুয়ারের চেয়ারম্যান মৃদুল গোস্বামী দায় এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “কার কাছে টাকা নিয়েছে তাদের নিজস্ব ব্যাপার। কারা দিয়েছে তাদেরকেও দেখতে হবে। আমার নলেজে অভিযুক্ত নেতা নন। এটা অন্যায়। কেউ এরকম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ প্রশাসন। দল এটা বরদাস্ত করে না।” অভিযুক্ত তৃণণূল নেতা বিপ্লব ঘোষের বাড়িতেও গিয়েছিলেন টিভি৯ বাংলার প্রতিনিধি। সেখানে বলা হয়, বিপ্লব ঘোষ বাড়িতে নেই। পাশাপাশি টিভি৯ কেন বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে, তা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন অভিযুক্তের বাড়ির লোক।