আলিপুরদুয়ার: বছর পেরিয়ে গিয়েছে। তবে মেলেনি আধার কার্ড। হাড়কাঁপানো শীতে কার্ড করাতে সেন্টারের বাইরেই লাইন দিয়েছেন অগুনতি মানুষ। কম্বল বিছিয়ে সেখানেই কেউ নিদ্রা যাচ্ছেন, কেউ বা ঠায় জেগে থাকছেন সারারাত! বাদ নেই শিশুরাও। পাল্লা দিয়ে জেগে থাকতে দেখা গিয়েছে তাদেরও। অবশেষে TV9 বাংলায় খবর সম্প্রচার হতেই এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়াল যুব তৃণমূল। অপেক্ষারত এলাকাবাসীর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করলেন তৃণমূল কর্মী সদস্যরা (TMC) ।
আলিপুরদুয়ারের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল যুবকর্মীরা আধার সেন্টারে অপেক্ষারত জেলাবাসীর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন। সকলকে পেট ভরে খিচুড়ি খাওয়ানো হয়। বাচ্চাদের জন্য দেওয়া হয় শীতের পোষাক। এছাড়াও ওই দালাল চক্রকে যাতে উৎখাত করা যায় ও দোষীদের শাস্তি দেওয়া যায় তার জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে যুব তৃণমূল নেতৃত্ব। কে বা কারা এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এক যুব তৃণমূল নেতার কথায়, “আমরা খবরে দেখলাম এভাবে আধার সেন্টারের সামনে লোকে বসে রয়ছেন। অনেক দূর থেকে মানুষ এসছেন। পেটে খাবার নেই। তারমধ্যে এত ঠান্ডা। আমরা ওদের জন্য সামান্য কিছু খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া আধার সেন্টার যাতে বাড়ানো যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে। যাঁরা টাকার বদলে টোকেন বিলি করছেন, তাঁরা রেহাই পাবেন না। ওই দালাল চক্র উৎখাত করা হবে।”
ঠিক কী অভিযোগ এলাকাবাসীর?
তাঁদের অভিযোগ, অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও আধার কার্ড পাননি কেউ। অবশেষে যখন আধার কার্ড ফের তৈরির ব্যবস্থা করা হল, তখন সেন্টারের বাইরে রীতিমতো নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হল প্রতিদিন মোট ১২০ জনের আধার কার্ড তৈরির টোকেন মিলবে। তারমধ্যে ৬০ জন পুরুষ ও ৬০ জন মহিলা। এদিকে, আধার কার্ড না পাওয়ার সংখ্যা প্রায় হাজার ছাড়িয়েছে। এতজনের আধার কার্ড তাহলে কবে মিলবে? অগত্যা, সেন্টারের বাইরেই একরকম সংসার পেতে ফেলেছেন তাঁরা।
হাড়কাঁপানো শীতের রাতে মশারী টাঙিয়ে কম্বলমুড়ি দিয়ে সেখানেই শুয়ে থাকছেন পুরুষ-মহিলা উভয়েই। বাদ নেই শিশুরাও। কিন্তু, তারপরেও মিলছে না আধার কার্ড। কারণ সর্ষের মধ্যেই ভূত! ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা দিলেই আগেভাগে মিলছে টোকেন। সেই টোকেন জমা দিলেই মিলছে আধার কার্ড। আর এই টাকার বদলে টোকেন দিচ্ছেন দালালরা, অভিযোগ এমনটাই।
সক্রিয় এই দালাল চক্রের দাপটে বিপদে পড়েছেন দুঃস্থরা। কারণ, মোটা টাকা দিয়ে টোকেন কেনার সাধ্য তাঁদের নেই। অগত্যা উপায়? সেন্টারের বাইরে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকা ও অপেক্ষার দিন গোনা।
বৃহস্পতিবার রাতে ছোটো তিন সন্তানকে আধার কার্ড বানাতে নিয়ে এসেছিলেন আমিনা খাতুন। তিনি আইটিআই মোড় থেকে আলিপুরদুয়ারে আসেন। ওইদিন রাত্রি আটটা নাগাত তিন সন্তান-সহ মশারি,কম্বল নিয়ে আধার সেন্টারের সামনেই বিছানা করে বসে পড়েন। সেখানেই রাত্রিবাস। আমিনার কথায়, “আমি তিন দিন ধরে আধার কার্ড করাতে এসে ঘুরে যাচ্ছি। তিন-তিনটে ছোট বাচ্চা। টোকেনের জন্য টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। লাইনে দাঁড়ালেও কার্ড পাচ্ছিনা। তাই ঠিক করেছি কার্ড নিয়েই ফিরব। এখানেই এভাবে থাকব, যতদিন না কার্ড হচ্ছে।” শুধু আমিনা নন, তাপস দে,রফিকুল ইসলাম,পার্থ মণ্ডল সকলের অবস্থাই এক।
তাহলে উপায়?
যে আধার সেবা কেন্দ্রে এই কার্ড তৈরির কাজ চলছে সেই কেন্দ্রের কোনও কর্মীই এর সদুত্তর দিতে পারেননি। তাঁদের সাফ দাবি, টোকেন জমা দিলেই আধার কার্ড পাওয়া যাবে। কীভাবে টোকেন জমা পড়ছে তা জানা নেই। তবে, ১২০ জনের বেশি একদিনে আর আধার কার্ড করে দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।