‘মোদী দাদা, মমতা বোন, ওঁদের বৈঠকের অন্তরায় রাজ্য বিজেপি’, বিস্ফোরক তৃণমূল সাংসদ

শনিবার, সাংবাদিক বৈঠকে আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাইবোনের সম্পর্ক। নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) দাদা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিদি। দাদা-দিদি দুজন মিলে বাংলার উন্নয়ন করতে চান। কিন্তু, সেখানে প্রধান বাধা বঙ্গ বিজেপি।"

'মোদী দাদা, মমতা বোন, ওঁদের বৈঠকের অন্তরায় রাজ্য বিজেপি', বিস্ফোরক তৃণমূল সাংসদ
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 29, 2021 | 11:20 PM

হুগলি: ‘নরেন্দ্র মোদী দাদা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওঁর বোন। রাজ্য বিজেপি ওদের সম্পর্কের অন্তরায়।’ শুক্রবার মমতা-মোদীর ‘সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ’-কে কেন্দ্র করে এমনই বিস্ফোরক দাবি আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ (TMC MP) অপরূপা পোদ্দারের। তাঁর স্পষ্ট দাবি, বঙ্গ বিজেপির চক্রান্তের জেরেই শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক সম্ভবপর হয়নি। সম্প্রতি, নারদ মামলায় হেভিওয়েট তিন তৃণমূল নেতার গ্রেফতারিতে মুখ খুলেছিলেন সাংসদ। তাঁর দাবি ছিল, রাজ্য বিজেপি নির্বাচনে হেরে গিয়ে এই চক্রান্ত করেছে। ফের একবার, মমতা-মোদী সাক্ষাৎ-কে (Modi-Mamata Meet) কেন্দ্র সেই একই অভিযোগ তুললেন তৃণমূল নেত্রী।

শনিবার, সাংবাদিক বৈঠকে আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাইবোনের সম্পর্ক। নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) দাদা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিদি। দাদা-দিদি দুজন মিলে বাংলার উন্নয়ন করতে চান। কিন্তু, সেখানে প্রধান বাধা বঙ্গ বিজেপি। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে বিজেপি। দাদা-দিদি যাতে বাংলার উন্নয়ন না করতে পারে তার জন্যই এই কাজ করেছে বিজেপি। কলাইকুণ্ডায় যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল তা পরিকল্পনা করেই নষ্ট করেছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু, এখন যে লড়াইয়ের সময় নয়, তাও কি ওরা বুঝতে পারছে না! এই করোনা পরিস্থিতিতে, সকলকে একসঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে। সেখানে কেন এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হবে?” এখানেই অবশ্য থামেননি তৃণমূল সাংসদ। রাজ্যের মুখ্যসচিব (Chief Secretary) আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Alapan Banerjee) কেন্দ্রের তরফে পদত্যাগের নোটিশ দেওয়া হলে, সে প্রসঙ্গে অপরূপাদেবী বলেন, “আলাপনবাবুকে ডেকে নিলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে বাংলার। গোটা করোনা পরিস্থিতিতে তিনি যেভাবে কাজ করেছেন তার সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত রয়েছে আলাপনবাবুর কাছেই। ওঁ দিল্লি চলে গেলে বাংলার সমূহ ক্ষতি। বিজেপি এসব ইচ্ছে করেই করছে, বাংলার যাতে উন্নতি না হয়। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, কোনও দলীয় রাজনীতি না করে বাংলার মানুষের কথা ভেবে এই সিদ্ধান্তটি বিবেচনা করে দ্রুত প্রত্যাহার করুন।”

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বাংলার ক্ষয়ক্ষতি সমূহ নিয়ে শুক্রবার একটি রিভিউ বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই বৈঠকে অতিথিদের তালিকায় রাজ্যের বিরোধী বিজেপি দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম থাকার পরেই উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু বৈঠকে থাকলে তিনি থাকবেন না এমন একটি জল্পনাও তৈরি হয়। পরবর্তীতে, কলাইকুণ্ডায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রিভিউ মিটিংয়ে থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাঁকে প্রায় কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। এরপর, প্রধানমন্ত্রীর রিপোর্ট সংক্রান্ত কাগজ দিয়েই মুখ্যসচিব ও আমলাদের নিয়ে চলে আসেন মমতা। পাল্টা বিজেপির অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে প্রায় ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। বাংলার মানুষের থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ‘ইগো’ ও রাজনীতিই বড় হল এমনও অভিযোগ তুলেছেন বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বরা। এরপরেই, মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়ে কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হয়। সেই নির্দেশ শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিক বৈঠকে সে বিষয়ে আলোচনাও করেন মমতা। পাল্টা, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যা করেছেন তা সংবিধান বিরোধী। এইভাবে রাজ্যশাসন চলে না। বিরোধী দলনেতার মতামত নেওয়া জরুরি। উনি একজন নন এমএলএ মুখ্যমন্ত্রী। আমি নন্দীগ্রামে জিতেছি, উনি হেরেছেন। তাই লজ্জা! মুখ্যসচিবের দিল্লি যাওয়া ওঁর হাতে নেই। এটা পার্লামেন্টরি ব্যাপার।” কার্যত, প্রায় একই সুর শোনা গিয়েছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের গলায়। ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় কেন্দ্র রাজ্যের এই সংঘাত কার্যত রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্ব বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহালমহলের একাংশ।

আরও পড়ুন: ‘মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের নাম ভোরের আলো, তাঁর নির্দেশই শেষ কথা’, কর্মীদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালেন প্রতিমন্ত্রী সাবিনা