বালুরঘাট: বিয়ের ছয় বছরের মাথায় শ্বশুরবাড়িতে ঘরের ভিতর থেকে উদ্ধার হয়েছে গৃহবধূর ঝুলন্ত দেহ। এই ঘটনায় স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হলেন স্বামী। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের (South Dinajpur) বালুরঘাট থানা এলাকায়। গৃহবধূকে খুনের অভিযোগে তাঁর স্বামী ছাড়াও শ্বশুর, শাশুড়ি সহ শ্বশুরবাড়ির ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে বালুরঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, বাপেরবাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসার জন্য ক্রমাগত তাঁকে চাপ দেওয়া হত এবং তার জেরেই তাঁকে খুন করা হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বালুরঘাট থানার পুলিশ (Balurghat Police)।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতার নাম খুশি মণ্ডল(২৪)। হরিরামপুর ব্লকের মালিয়ান দিঘি সংলগ্ন এলাকার মেয়ে খুশির বালুরঘাট ব্লকের বোয়ালদার গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্লভপুর গ্রামে বিয়ে হয়েছিল। শ্বশুরবাড়ি থেকেই রবিবার রাতে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। খুশিকে খুন করা হয়েছে বলে তাঁর স্বামী সুধীর মণ্ডল সহ শ্বশুরবাড়ির ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে বালুরঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে তাঁর পরিবার। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখছে বালুরঘাট থানার পুলিশ। ইতিমধ্যে খুশির স্বামী সুধীর মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে, খুশির দেহটি উদ্ধার করে সোমবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ছয়েক আগে দেখাশোনা করেই খুশি ও সুধীরের বিয়ে হয়। বর্তমানে তাঁদের সাড়ে তিন বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। সুধীর পেশায় কৃষক। বিয়ের বছর দুয়েক পর থেকেই খুশি ও সুধীরের মধ্যে টাকা নিয়ে অশান্তি শুরু হয়। সুধীর সহ তাঁর পরিবারের লোকেরা খুশিকে বাপেরবাড়ি থেকে টাকা আনার চাপ জন্য চাপ দিতেন এবং খুশি সেকথা মেনে না নেওয়ায় তাঁর উপর অত্যাচার করা হত বলে অভিযোগ। স্বামী সহ শ্বশুর, শাশুড়ি ও অন্যান্য আত্মীয়রাও খুশিকে মারধর করত বলে অভিযোগ। এমনকি, যিনি বিয়ের ঘটকালি করেছিলেন তিনিও মারধর করতেন বলে অভিযোগ খুশির পরিবারের। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মাস ছয়েক আগে একবার গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন খুশি। তবে সেবার খুশি বাপেরবাড়িতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন এবং পরিবারের নজরে আসায় তাঁকে আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু, এবার আর শেষরক্ষা হয়নি।
খুশির দাদা পঙ্কজ মণ্ডল জানান, জামাই সহ তাঁর বাবা, মা ও অন্যান্য আত্মীয়রাও খুশিকে মারধর করতেন। মাস ছয়েক আগে তিনি বোনকে বাড়ি নিয়ে চলে এসেছিলেন। পরে খুশির শ্বশুরবাড়ির লোকজন সালিশি সভা বসিয়ে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। এরপর গতকাল পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকেদের কাছে খবর পান যে, তাঁর বোন আত্মঘাতী হয়েছেন। পঙ্কজের অভিযোগ, তাঁর বোনকে খুন করা হয়েছে। আর বোন যদি আত্মহত্যাও করে থাকেন, তাহলে তাঁকে সেটা করতে বাধ্য করা হয়েছে। অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
খুশির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে তাঁর স্বামী সুধীর মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান বালুরঘাট থানার আইসি শান্তিনাথ পাঁজা। তিনি বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। এক অভিযুক্তে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এদিন সকালেই খুশির দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান আইসি।