‘আমি আর বাঁচবুনি…’, মিলে গেল মইদুলের শেষ কথা

তখনই চেঁচিয়ে বলছেন,'আন্দোলনে যাচ্ছি বলল, বলল ফিরে আসবে সন্ধ্যাতেই, ফিরল না কেন? আন্দোলনেই শেষ হল ও...'

'আমি আর বাঁচবুনি...', মিলে গেল মইদুলের শেষ কথা
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Feb 15, 2021 | 4:24 PM

বাঁকুড়া: ডান পায়ে গভীর ক্ষত। রক্ত বেরোচ্ছিল। ‘কমরেডরা’ তাঁকে ঘিরে ধরে বুকটা ডলে দিচ্ছেন। যন্ত্রণা যতটা লাঘব করা যায়, সেই চেষ্টা। চোখের মনি দুটো ঘুরছিল। আর তখনই যন্ত্রণায় কাতর মইদুল বলেন, ‘আমি আর বাঁচবু নি…’। এই ছবি দেখে বোঝবার উপায় ছিল না ভিতরের ক্ষতটা কতটা গভীর। বৃহস্পতিবার থেকে লড়াই চালাচ্ছিলেন চিকিৎসকরা। এরপর সোমবার সব শেষ। বাঁচলেন না বাঁকুড়ার টোটোচালক মইদুল ইসলাম মিদ্যা (DYFI Worker Maidul Islam)। বামেদের নবান্ন অভিযানের শহীদের তকমা পেলেন তিনি। এদিনের এই মর্মান্তিক পরিণতি ফের মনে করিয়ে দিলেন বছর বাইশের তরতাজা যুবক সুদীপ্ত গুপ্তকে।

সুদীপ্ত গুপ্ত আর মইদুল ইসলাম মিদ্যা। এক জন খোদ কলকাতার ছেলে আরেক জন বাঁকুড়া। রাজনৈতিক আদর্শে তাঁরা সতীর্থ। আন্দোলনের ধরনও অনেকটা এক, প্রেক্ষাপটও অভিন্ন। তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়ে শেষ পর্যন্ত একই পরিণতি হল দুই যুবার।

বাঁকুড়ার ছেলে মইদুলের লেখাপড়া, বেড়ে ওঠা সবই জেলায়। চাকরি না জোটেনি। ফলে বাধ্য হয়েই টোটো চালিয়েই চলত সংসার। মইদুলের বাবা মারা গিয়েছেন। বাড়িতে রয়েছেন তাঁর মা তাহমিনা বিবি, স্ত্রী আলেয়া বিবি। রয়েছে দুই সন্তানও। বড় মেয়ে সুরিয়া পারভিন পঞ্চম শ্রেণি এবং ছোট মেয়ে শুনিয়া পারভিন নার্সারির ছাত্রী। একমাত্র রোজগেরে মইদুলই। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতেন। তবে সব কিছুর পরও বাম আদর্শের প্রতি সমর্পণে অটল।

গোপীনাথপুরে ডিওয়াইএফআই ইউনিট সম্পাদক ছিলেন মইদুল। এলাকায় তিনি পরিচিত ‘ফরিদ’ নামে। সব আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা ছেলেটি সেদিন নবান্ন অভিযানেও প্রপথম দিকেই ছিলেন। উপস্থিত বামকর্মীদের দাবি, লড়াইয়ের ময়দানে লাঠিটা সজোরে এসে লেগেছিল ঠিক তাঁর বুকের বাঁ দিকে। এরপর থেকেই জ্বলে যাচ্ছিল, দম বন্ধ হয়ে আসছিল, মাটিতে বসে ছটফট করছিলেন মইদুল। কোনও এক সাংবাদিকের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল সেই দৃশ্য। তখনই বলতে শোনা যায়, ‘আমি আর বাঁচবুনি।’

সোমবার ভোরেই টিনের চালের বাড়িতে খারাপ খবরটা পৌঁছছে। খবর শোনা মাত্র শোকে পাথর হয়ে যান মইদুলের স্ত্রী আলেয়া। বৃদ্ধ মা জ্ঞান হারান।

ছোট্ট বাড়িটায় আজ ভর্তি পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, সিপিএম নেতা-কর্মীরা। ডিওয়াইএফআই নেতা ধনঞ্জয় বেজ ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, “খুবই গরিব ছেলে। পুলিশি অত্যাচারে মারা গেল।” পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মইদুলের ‘কমরেডরা’।