শ্যামের ‘কুকীর্তি’, দেড় কোটি টাকার পার্ক রাজ পরিবারকে ফেরাচ্ছে বিষ্ণুপুর পুরসভা!

Shyamaprasad Mukherjee: বিষ্ণুপুর পুরসভা সূত্রে খবর, ২০১৭ সালে মল্ল রাজদরবারে একটি পার্ক তৈরির উদ্য়োগ নেওয়া হয়। রাজদরবারের জোড় বাংলা ও লালজিউ মন্দির সংলগ্ন এলাকায় প্রায় সাড়ে চার একর জমির উপর ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ওই পার্ক।

শ্যামের 'কুকীর্তি', দেড় কোটি টাকার পার্ক রাজ পরিবারকে ফেরাচ্ছে বিষ্ণুপুর পুরসভা!
কোটি টাকার মালিক প্রাক্তম মন্ত্রী! নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 07, 2021 | 10:41 AM

বাঁকুড়া: বিষ্ণুপুর টেন্ডার দুর্নীতিতে (Bishnupur Tender Case) নাম তো জড়িয়েছেই, এ বার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদের ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ জের পোহাতে হল বিষ্ণুুপুর পুরসভাকে। দেড় কোটি টাকায় তৈরি হওয়া একটি পার্ক বিষ্ণুপুর মল্ল রাজপরিবারের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে পুরসভা।

বিষ্ণুপুর পুরসভা সূত্রে খবর, ২০১৭ সালে মল্ল রাজদরবারে একটি পার্ক তৈরির উদ্য়োগ নেওয়া হয়। রাজদরবারের জোড় বাংলা ও লালজিউ মন্দির সংলগ্ন এলাকায় প্রায় সাড়ে চার একর জমির উপর ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ওই পার্ক। অভিযোগ, এই পার্ক তৈরি হোক এমনটা চাইতেন না রাজ পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু, তত্‍কালীন পুরসভার চেয়ারম্যান শ্য়ামাপ্রসাদ কার্যত ‘নিজের গদির’ জোর খাটিয়ে ওই পার্ক তৈরি করেন বলে অভিযোগ। শ্য়ামাপ্রসাদেরই নির্দেশে ওই পার্ক তৈরি করতে বিভিন্ন প্রকল্প থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু, ওই পার্ক তৈরিতে রাজপরিবারের তরফে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।

BISHNUPUR MUNICIPALITY PARK

সেই পার্ক, নিজস্ব চিত্র

আরও অভিযোগ, রাজ পরিবার বিষ্ণুপুর থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে শ্যামাপ্রসাদ থানায় নিজের প্রভাব খাটিয়ে সেই অভিযোগ না নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এই ঘটনার পরই বিষ্ণুপুরের রাজ পরিবার দ্বারস্থ হয় কলকাতা হাইকোর্টের। সম্প্রতি, কলকাতা হাইকোর্ট পার্কটিকে পুনরায় রাজ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বিষ্ণুপুর পুরসভাকে নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের এই নির্দেশ মিলতেই বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রশাসক বোর্ড বৈঠক করে ওই পার্কটিকে রাজ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।  পুরআধিকারিকদের অনেকেরেই দাবি, এই ঘটনায় কার্যত শ্যামাপ্রসাদের স্বেচ্ছাচারিতার মাসুল দিতে হচ্ছে।

বিষ্ণুপুর পুরসভার বর্তমান প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন অর্চিতা বিদ বলেন, “এই পার্ক তৈরির সময় যাঁদের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল তা নেওয়া হয়নি। আদালত পার্কের জমি রাজপরিবারকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পার্কটি বর্তমান যে অবস্থায় রয়েছে সেই অবস্থাতেই মালিকদের হাতে তুলে দেব। এই ঘটনার ফলে বিপুল অঙ্কের সরকারি টাকার অপব্যয় হল।”

বিষ্ণুপুর মল্ল রাজ পরিবারের সদস্য অমিতাভ সিংহ দেব বলেন, “রাজপরিবারের জমি আমাদের মালিকাধীন। কিন্তু, তত্‍কালীন বিষ্ণুপুরের চেয়ারম্যান শ্য়ামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নিজের চেয়ার ব্যবহার করে ওই পার্ক বানিয়েছিল। আমরা আপত্তি করেছিলাম। লিখিত অভিযোগ করাতে গিয়েও লাভ হয়নি। হাইকোর্টে মামলা করার পর অবশেষে  সুবিচার পাওয়া গেল।”

উল্লেখ্য, বিষ্ণুপুরে ১০ কোটি টাকার টেন্ডার দুর্নীতিতে মূল অভিযুক্ত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায়কে গ্রেফতার করেছে বিষ্ণুপুর থানার পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে শ্যাম-ঘনিষ্ঠ রাম শঙ্কর মহন্তকেও। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে কোটি টাকার সোনার গয়না ছাড়াও প্রায় ১২ বিঘার উপর জমিজমা ও অন্য়ান্য স্থাবর সম্পত্তি।

প্রায় তিন দশক ধরে মল্লগড় বিষ্ণুপুরে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ‘মুকুটহীন সম্রাট’ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘কত্তাবাবু’ নামেই পরিচিত। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিষ্ণুপুর পুরসভা চলত তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে। ২০০৯ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন শ্য়ামাপ্রসাদ। ২০১১ সালে বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী হলে শ্যামাপ্রসাদের ক্ষমতা আরও বাড়ে। কিছুদিনের জন্য জেলাসভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। ২০১৬ সাল থেকে রাজ্যের বস্ত্র ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। মন্ত্রী থাকতেই চিটফাণ্ড কেলেঙ্কারিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নোটিস দিয়েছিল ইডি। তারপরেই ধীরে ধীরে ‘নিজ গড়ে’ ক্ষমতা হারাতে শুরু করেন ‘কত্তাবাবু’। সম্প্রতি তাঁকে ১০ কোটি টাকার বিষ্ণুপুর টেণ্ডার দুর্নীতিতে গ্রেফতার করে পুলিশ। আরও পড়ুন: ‘ত্রাণসামগ্রী যাচ্ছে কাউন্সিলরদেরই ঘরে’, অকপটে স্বীকার খোদ প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের