বাঁকুড়া: ট্রেন দুর্ঘটনায় নিজের দু’পায়ে গুরুতর চোট লেগেছে। কিন্তু সেই চোট নিয়ে ভাবার একটুও সময় পাননি সেনাকর্মী গোবিন্দ মাকুড়। প্রাথমিক ঘোর কাটতেই নিজের পরিবারের অন্য পাঁচ সদস্যকে বাঁচানোর পাশাপাশি সহযাত্রীদের বাঁচিয়ে বের করে এনেছিলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বি – ফাইভ কামরা থেকে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর পরিবারের অন্য চার সদস্যকে নিয়ে শনিবার রাতেই বাড়ি ফিরলেন বিষ্ণুপুর থানার পাত্রবাঁকড়া গ্রামের সেনাকর্মী গোবিন্দ মাকুড়।
পেশায় সেনাকর্মী গোবিন্দ মাকুড় সম্প্রতি ছুটি নিয়ে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার পাত্রবাঁকড়া গ্রামে ফিরেছিলেন। নিজের ভাই ও এক আত্মীয় অসুস্থ থাকায় তাঁদের চিকিৎসার জন্য পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে শুক্রবার রাতে খড়্গপুর থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের বি ফাইভ কামরায় উঠেছিলেন গোবিন্দ। বাহানাগায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখেন কামরার সমস্ত লন্ডভন্ড। পরিবারের লোকজন সহ সহযাত্রীরা গিয়ে পড়লেন একে অপরের গায়ে। কামরার ভেতরেই নিজের তিন বছরের ছোট্ট মেয়ের গায়ের উপরে গিয়ে পড়েছে একাধিক সহযাত্রী।
ভাঙা সিটের নিচে চাপা পড়ে রয়েছেন স্ত্রীর কোমরের নীচের অংশ। নিজের দু’পায়ে চোট লাগলেও প্রাথমিক ঘোর কাটিয়ে নিজেই কামরার মধ্যে উদ্ধার কাজ শুরু করেন গোবিন্দ। কামরার জানালার কাচ ভেঙে একে একে পাঁচ সদস্যকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসেন।
এরপর হাত লাগান অন্যান্য সহযাত্রীদের উদ্ধারের কাজে। একক প্রচেষ্টায় বেশ কয়েকজন আহতকে ভাঙা জানালা পথে কামরার বাইরে নিয়ে আসেন গোবিন্দ। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাঁদের সাহায্য নিয়ে পরিবারের আহত সদস্য ও সহযাত্রীদের নিয়ে ভদ্রকের একটি হাসপাতালে পৌঁছন গোবিন্দ।
এরপর সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর গাড়ি ভাড়া করে গতকাল সন্ধ্যায় রওনা দেন বিষ্ণুপুরের উদ্দেশে। গতকাল রাতে তিনি এসে পৌঁছন পাত্রবাঁকড়া গ্রামের বাড়িতে। ঘটনার দীর্ঘ সময় পরও দুর্ঘটনার আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছে না সেনাকর্মীর পরিবারের সদস্যদের।
আজ ওই সেনাকর্মীর পরিবারের সকল আহত সদস্য চিকিৎসার জন্য যান বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। গোবিন্দ মাকুড় বলেন, “ট্রেনটা হঠাৎ করে ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। পুরো বগির সামনের দিকটা দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। এরপর আমি দেখি উপরে একটা ছোট্ট জানালা রয়েছে। সেই জানালা দিয়েই ধীরে ধীরে যতজনকে পারি বের করে এনেছি।”