
বাঁকুড়া: গরু চোরদের দাপটে ব্যথা বেড়েছিল পুলিশের। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের এক বড় গরু চুরির চক্রের পান্ডা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে অবশেষে গ্রেফতার করল বাঁকুড়ার জয়পুর থানার পুলিশ। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে বাঁকুড়ার কোতুলপুর ও জয়পুর থানা এলাকায় একসঙ্গে আটটি গরু চুরির ঘটনায় শোরগোল পড়ে প্রশাসনিক মহলে। তদন্তে নামে পুলিশ। সোমবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চন্ডীপুর থানা এলাকা থেকে দলের পান্ডা ও তাঁর সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের নাম সৌরভ ঘোষ ও শেখ আমির হোসেন। এরমধ্যে আমিরের বাড়ি হুগলির খানাকুল থানা এলাকায় হলেও মূল পান্ডা সৌরভের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার নোদাখালি এলাকায়।
উদ্ধার হয়েছে চুরি যাওয়া গুরু। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে গরু পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত একটি ট্রাককে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে চলতি বছর ১৯ জানুয়ারি বাঁকুড়ার কোতুলপুর ও জয়পুর থানা এলাকায় একাধিক গরু চুরির অভিযোগ জমা পড়ে। ঘটনায় সিট গঠন করে তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে নেমে সে সময় জয়পুর থানা এলাকা থেকে বেশ কিছু চুরি যাওয়া গরু-সহ একটি ট্রাক আটক করে পুলিশ। ট্রাক থেকে আটক করা হয় বেশ কয়েকজন পাচারকারীকেও। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ধীরে ধীরে ওই চক্রের মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করলেও চক্রের মূল পান্ডা সৌরভ ঘোষের নাগাল কিছুতেই পাচ্ছিল না পুলিশ। অবশেষে বিশেষ প্রযুক্তি, কৌশল ও সূত্র কাজে লাগিয়ে পুর্ব মেদিনীপুরের চন্ডীপুর থেকে এক সহযোগী-সহ সৌরভকে গ্রেফতার করে জয়পুর থানার পুলিশ।
ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে গরু পাচারকাণ্ডের যে তথ্য পুলিশের হাতে আসে তাতে কার্যত চোখ কপালে উঠে যায় তদন্তকারীদের। জানা গিয়েছে সৌরভ ঘোষ এই চক্র পরিচালনা করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে গরু চুরি ও পাচারের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগণার মহেশতলা, নদেখালি ও ফলতা এলাকা থেকে পেশাদার চোর নিয়োগ করতো সৌরভ। গরু পিছু ধার্য ছিল ৫০০ টাকা। আগে থেকে রেইকি করে একসঙ্গে একইদিনে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ টি গরু চুরির ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে তা পেশাদার চোরদের বুঝিয়ে দিত সৌরভই। চুরির পর দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে গরু নিয়ে যাওয়া হত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। চুরি করা গরু পরিবহণের জন্যও বিশেষ কৌশল ব্যবহার করতো সৌরভ। ফাইনান্সের কিস্তি চালাতে না পারা ট্রাক মালিকদের কাছ থেকে ফাইনান্সের কিস্তি মিটিয়ে দেওয়ার নাম করে ট্রাক ধার নিত সৌরভ। সেই ট্রাকগুলিকেই ব্যবহার করা হত গরু পরিবহণের জন্য। উঠে এসেছে এমনই সব চাঞ্চল্যকর তথ্য়।
সূত্রের খবর, গরু চুরি করে তা পাচার করা পর্যন্ত গরু পিছু সৌরভের খরচ হত মেরেকেটে এক হাজার টাকা। সেই গরুই দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিভিন্ন কষাইখানায় বিক্রি করা হত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। বিপুল লাভের এই ব্যবসায় অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবন-যাপন করতো সৌরভ। মাসের বেশিরভাগ দিনই সে বাড়িতে না কাটিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে নামীদামী হোটেলে দিন কাটাতো। তদন্তে আরও জানা যাচ্ছে পুলিশের চোখে ধুলো দিতে সৌরভ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো খুবই কম। ব্যবহার করলেও অল্প দিনের ব্যবধানে বদল করে ফেলত সিম কার্ড। আর এভাবেই ধীরে ধীরে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দিয়েছিল নিজের সাম্রাজ্য।