
বাঁকুড়া: স্কুল স্তরে পড়ুয়াদের ড্রপ আউটের সংখ্যা বাড়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হয়েছিল শিক্ষা মহলের। কিন্তু শুধুই কি স্কুল স্তরে বাড়ছে ড্রপ আউট? পরিসংখ্যানে কিন্তু উদ্বেগের ছবি ধরা পড়ছে কলেজে কলেজেও। চিন্তায় রাখছে বাঁকুড়া জেলার পরিসংখ্যান। চলতি বছর ওবিসি জটিলতায় থমকেছে কলেজের ভর্তির প্রক্রিয়া। কিন্তু অধিকাংশ কলেজে ভর্তির জন্য যে আবেদন জমা পড়েছে তাতেই ধরা পড়ছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষার বেহাল ছবি। অধিকাংশ কলেজে ভর্তির যে আবেদন জমা পড়েছে সেই আবেদনের সকলে ভর্তি হলেও কলেজগুলির বরাদ্দ আসনসংখ্যার অর্ধেক ভর্তি করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। কিন্তু, ভর্তির পর ড্রপ আউটের ছবি আরও ভয়ঙ্কর।
তথ্য বলছে, একাধিক কলেজে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট স্তরে গত কয়েক বছর ধরে ড্রপ আউট পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শুধু গ্রামের কলেজগুলিতেই নয়, শহরের নামী কলেজগুলিতেও ড্রপ আউটের ছবিতে সিঁদুরে মেঘ।
এই যেমন বাঁকুড়া খ্রিষ্টান কলেজের বেশ ভালই নাম রয়েছে। সেই কলেজে ২০২২ সালে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট স্তরে ভর্তি হয়েছিল ১০৭০ জনের আশাপাশে। চলতি বছর সেই ব্যাচ যখন ষষ্ঠ সেমিস্টার পরীক্ষা দিচ্ছে তখন দেখা যাচ্ছে পড়ুয়ার সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে ৭৯৩ জনে। অর্থাৎ একটি ব্যাচেই প্রায় ২৭৭ জন পড়ুয়াই আর কলেজমুখী হচ্ছে না। সম্মিলনী কলেজে ২০২৩ সালে আন্ডার গ্র্যাজুয়েটে ভর্তি হয়েছিল মোট ১৪৯৩ জন। সেই ব্যাচ চলতি বছর চতুর্থ সেমিস্টার দিচ্ছে। কিন্তু পড়ুয়ার সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮৯১ জনে। অর্থাৎ এই কলেজে ড্রপ আউটের সংখ্য়া ৬০৭ জন।
অন্যদিকে একটু গ্রামের দিকে কলেজগুলিকে পরিস্থিতি আরও খারাপ। ভড়া কাঠিয়াবাবা কলেজে ২০২২ সালে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট স্তরে ভর্তি হয়েছিল মোট ১৯৬ জন পড়ুয়া। সেই ব্যাচেরই মাত্র ৮৬ জন পড়ুয়া চলতি বছর ষষ্ঠ সেমিস্টার দিচ্ছে। অর্থাৎ মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়েছে ১১০ জন। পাত্রসায়ের কলেজে ২০২২ সালে ভর্তি হয়েছিল ৪০০ জন। সেই ব্যাচেরই মাত্র ১৮৫ জন এবার ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়েছে মোট ২১৫ জন পড়ুয়া।
আন্ডার গ্র্যাজুয়েট স্তরে বিপুল সংখ্যক এই পড়ুয়া ড্রপ আউট নিয়ে কলেজগুলির কপালেও চিন্তার ভাঁজ ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। তাঁদের দাবি, কর্মসংস্থানের কোনও দিশা দেখতে না পেয়েই মাঝপথে অনেক পড়ুয়া লেখাপড়া ছেড়ে দিচ্ছে। অনেকে আবার প্রথাগত শিক্ষা মাঝপথে বন্ধ করে ঝুঁকছে বিভিন্ন কর্মমুখী শিক্ষায়। কলেজস্তরে এই ব্যপক ড্রপ আউটের জন্য রাজ্যের শিল্প নীতিকেই দূষছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার। তাঁর দাবি, রাজ্যে স্কুল কলেজে শিক্ষক ও অধ্যাপক নিয়োগ হচ্ছে না। দুর্নীতির জেরে অনেকের চাকরি চলে যাচ্ছে। আর সামগ্রিক পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ হারাচ্ছে পড়ুয়ারা।