
বাঁকুড়া: জন্ম থেকেই নেই হাত ও পায়ের কোনও আঙুল। কিন্তু শারীরিক সেই প্রতিবন্ধকতা যেমন তাঁর এগিয়ে চলার গতিকে রোধ করতে পারেনি, তেমনই থামিয়ে দিতে পারেনি এসআইআর-এর কাজ। বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের বাঁকি গ্রামের বিএলও সোনালি কর কমিশনের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই সেরে ফেলেছেন এসআইআর-এর প্রায় ৯৯ শতাংশ কাজ।
রাজ্যজুড়ে এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হতেই বিএলওদের কান্না দেখেছে রাজ্য। কাজের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে, কেউ আবার ঢলে পড়েছেন মৃত্যুর কোলে। এমনকী, কমিশনের অফিসেও ধরনায় বসেছিলেন বিএলওদের একাংশ। তবে এরই মাঝে ব্যতিক্রমী মুখ বাঁকুড়া ২ নম্বর ব্লকের বাঁকি গ্রামের বাসিন্দা সোনালী কর। জন্মের সময় থেকেই সোনালীর দু’হাত ও দু’পায়ে আঙুল নেই। কিন্তু সেই শারীরিক সমস্যা কোনও দিনই সোনালীকে টেনে ধরে রাখতে পারেনি। হাতের চেটোয় বিশেষ কায়দায় পেনসিল ও কলম ধরে সাধারণ স্কুলেই লেখাপড়া করে ১৯৯৯ সালে বাঁকুড়া জেলা সারদামনি মহিলা কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন তিনি। তারপর গ্রামেরই আইসিডিএস কর্মী হিসাবে কাজে যোগ দেন। সম্প্রতি, এসআইআর এর কাজ শুরু হলে সোনালির ঘাড়ে দায়িত্ব পড়ে বিএলও র। এরপর থেকে নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময়সূচী অনুযায়ী বাঁকি গ্রামের ১৬ নম্বর বুথে বাড়ি বাড়ি ঘুরে এনুমারেশান ফর্ম বিতরণ করেন তিনি।
আইসিডিএস-এর কাজ সামলে সময়মতো ভোটারদের পূরণ করা এনুমারেশান ফর্ম সংগ্রহ এবং সেই ফর্ম ডিজিটাইজেশানের কাজ শুরু করেন সোনালি। আঙুলহীন হাতেই কলম ধরে যেমন তিনি ভোটারদের এনুমারেশান ফর্ম সংশোধন করেছেন, তেমনই সেই হাতেই মোবাইলে কমিশনের নির্দিষ্ট পোর্টাল খুলে তাতে আপলোড করেছেন ভোটারদের নির্দিষ্ট তথ্য। আর এভাবেই ধীরে ধীরে এলাকার ৯৯ শতাংশ ভোটারের কাছ থেকে এনুমারেশান ফর্ম সংগ্রহ করে তা ডিজিটাইজেশানের কাজ সেরে ফেলেছেন সোনালি। বাকি এক শতাংশ কাজও দ্রুততার সঙ্গে সেরে ফেলতে এখন ভোটারের বাড়ি বাড়ি ঘুরে পূরণ করা এনুমারেশান ফর্ম সংগ্রহ করে তা ডিজিটাইজেশানের কাজ করছেন বিশেষ ভাবে সক্ষম ওই আইসিডিএস কর্মী।
BLO সোনালি কর বলেন, “এসআইআর এর কাজ এই বছর শুরু হয়েছে। আমার ভয় লাগেনি। আমি ঠিক করে নিতে পারব জানতাম। জন্মগত সমস্যা ছিলই। এভাবেই বড় হয়েছি, এভাবেই পড়াশোনা করেছি আর এই ভাবেই চাকরি করছি।”