
বাঁকুড়া: বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০১ জন। অভাব নেই শিক্ষক, শিক্ষিকারও। সবমিলিয়ে শিক্ষক, শিক্ষিকার সংখ্যা ৪ জন। কিন্তু বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের বৈদ্যপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর হাল দেখলে মাথায় হাত উঠবে যে কোনও মানুষের। ছাদ চুঁইয়ে ভিজে যাচ্ছে ক্লাসরুম। চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর মিড ডে মিলের শেড। স্কুলজুড়ে অসংখ্য ফাটল, খসে পড়ছে চাঙড়ও। ভেজা দেওয়ালে হাত দিলেই বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হচ্ছে পড়ুয়া থেকে শিক্ষক শিক্ষিকারা। যেন মনে হবে গাজার কোনও স্কুলে পৌঁছে গিয়েছেন। বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কাকে সঙ্গী করে চলছে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়।
প্রি প্রাইমারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৫টি ক্লাসে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০১ জন। সেই পাঁচটি ক্লাসের জন্য স্কুলে রয়েছে ৩টি শ্রেণিকক্ষ ও একটি অফিস ঘর। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে দুটি শ্রেণিকক্ষ বিপজ্জনক হয়ে পড়ায় আপাতত স্কুলের একটি শ্রেণিকক্ষেই বসানো হয় ৫টি ক্লাসের পড়ুয়াদের। স্থান সঙ্কুলান না হলে কিছু পড়ুয়াকে নিয়ে এসে বসানো হয় অফিস ঘরে। শুধু শ্রেণিকক্ষের অভাবই নয়, বাঁকুড়ার ছাতনা বৈদ্যপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বত্রই যেন বেহাল অবস্থার ছবি। ভারী বৃষ্টি হলে খোলা আকাশের নীচে যত না জল পড়ে, স্কুলের ছাদ ও দেওয়াল চুঁইয়ে তার থেকে বেশি জল পড়ে স্কুলের প্রতিটি ক্লাসরুমে।
সবকটি ক্লাসরুমে কোথাও দেওয়ালের পলেস্তরা ঝুলে রয়েছে, তো কোথাও আবার বিপজ্জনকভাবে ফাটল ধরেছে ছাদে। মাঝেমধ্যে খসে পড়ে চাঙড়ও। সম্প্রতি একটানা বৃষ্টির মাঝেই স্কুল ভবনের ভেজা দেওয়াল বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে পড়ে। দেওয়ালে হাত দিলেই বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে পড়ছে পড়ুয়া থেকে শিক্ষক শিক্ষিকারা। ফলে যে কোনওসময় বড়সড় বিপদের আশঙ্কায় কাঁটা অভিভাবক থেকে শুরু করে স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকারা। সমস্যা রয়েছে মিড ডে মিলের শেড নিয়েও। শেডের অধিকাংশ অ্যাসবেস্টসের ভেঙে যাওয়ায় রান্নার সময় বৃষ্টির জল সরাসরি এসে পড়ে খাবারে। মেঝের উপর দিয়ে বইতে থাকে বৃষ্টির জল। চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলে মিড ডে মিল রান্না। ঢাল নেই, তরোয়াল নেই নিধিরাম সর্দারের মতো চলতে থাকা এমন স্কুলে পড়ুয়াদের পাঠাতে চাইছেন না অভিভাবকেরা। স্কুলের শিক্ষিকাদের দাবি, পরিকাঠামোর এই অভাবের কথা বারংবার জানানো হলেও পরিস্থিতির কোনও বদল হয়নি। স্কুলের শিক্ষিকা জয়শ্রী সাহা বলেন, “একটা রুমে এতজনকে বসাতে সমস্যা হয়। উপর থেকে চাঙড় ভেঙে পড়ে। কখন কী হবে জানি না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। অভিভাবকরাও পড়ুয়াদের পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না।”
স্কুলের এমন বেহাল দশার কথা শুনে স্থানীয় ব্লক প্রশাসন অবশ্য তাৎক্ষণিক উপায় বাতলেছে। ছাতনার বিডিও সৌরভ ধল্লর আশ্বাস, স্কুলটিকে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে আপাতত ত্রিপল পাঠানো হবে। পরবর্তীতে স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে। বিদ্যুৎ সংযোগের সমস্যাও দ্রুত মেরামত করা হবে।