বাঁকুড়া: একজনের বয়স ছিল তিন। এক জনের চার আর একজনের পাঁচ। ফুটফুটে তিনটে প্রাণ চোখের পলকে শেষ হয়ে যায় দুর্ঘটনায়। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে জেরে মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয় তাঁদের। সেই ঘটনার একটা দিন কেটেছে মাত্র। সন্তান হারিয়ে শোকে পাথর পরিবার। সেই পরিস্থিতির মধ্যে মৃত শিশুদের পরিবারের সদস্যদের দিল্লি নিয়ে গেলেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন ও সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও, তাঁদের বক্তব্য, ওনারা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে দিল্লি যাচ্ছেন প্রতিবাদ জানাতে। এতে তৃণমূল নেতৃত্ব শুধু সহযোগিতা করেছে।
রবিবার সকালে এই তিন শিশুর পরিবারের সঙ্গে বাঁকুড়ার বোড়ামারা গ্রামে গিয়ে দেখা করেন শান্তনু সেন ও সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের দিল্লি যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। জানা গিয়েছে, দীর্ঘ প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মৃত শিশুদের পরিবারের সদস্যদের বোঝানোর চেষ্টা করেন শান্তনু ও সায়ন্তিকা।
সূত্রের খবর, প্রথমে মৃত শিশুদের পরিবার দিল্লি যেতে রাজি হয়নি। দীর্ঘক্ষণ বোঝানোর পর অবশেষে তিন পরিবারের পাঁচজন সদস্যকে নিয়ে রওনা দেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে মাঝপথে একজন ফিরে আসেন বাড়িতে। সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে রওনা দিয়েছেন মৃত শিশু নিশা সর্দার, রোহন সর্দার, অঙ্কুশ সর্দারের বাবারা। তাঁরা হলেন প্রশান্ত সর্দার, জয়দেব সর্দার ও চণ্ডি সর্দার। এছড়াও নিশার কাকা শক্ত সর্দারও রওনা দিয়েছেন।
এ দিন, মর্মান্তিক এই ঘটনার দায় পুরোপুরি কেন্দ্রীয় সরকারের কাঁধে তুলে শান্তনু সেন ও সায়ন্তিকা জানান, কাউকে জোর করে নয়, ওনারা নিজেরাই দিল্লির আন্দোলনে সামিল হয়ে এ রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছেন।
সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, “১১ লক্ষ লোকের বাড়ির জন্য পোর্টালে আপলোড করা হয়েছিল। শুধুমাত্র প্রতিহিংসার কারণে এই মানুষগুলোর প্রথম কিস্তি ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে। আমরা মৃতদের পরিবারের পাশে রয়েছি।” অপরদিকে, তৃণমূল নেত্রী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “আমরা সঙ্গে নিয়ে কোথাও যাচ্ছি না। তাঁরা তাঁদের কষ্টের কথা জানাতে চাইছেন। আমরা তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করছি।” বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “শান্তনু সেন ও সায়ন্তিকা বর্গীদের মতো এসে মৃতের পরিবারকে তুলে নিয়ে গেল। মৃতের পরিবাররা প্রথমে যেতে চায়নি। ওখানে ১৫ বছর ধরে তৃণমূল ক্ষমতা ধরে রেখেছে পঞ্চায়েতের। কেন বাড়ি হয়নি?”
তবে তৃণমূলের নেতা-নেত্রী যতই বলুন না কেন মৃতের পরিবারের সদস্যদের মুখে অন্য কথা। মৃত শিশু নিশার বাবা বলেন, “আমার যেতে এতটুকুও ইচ্ছা করছে না। ওরা যাওয়ার জন্য বারবার বলছে। কী করব আমি কিছুই জানি না। ”
গতকাল তিন শিশুর মৃত্যুতে নতুন করে প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র-রাজ্য দুই সরকারের ভূমিকাই। অভিযোগ ওঠে আবাসের তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও বাড়ি পাননি এলাকার বাসিন্দারা। সে কারণেই প্রশ্নের মুখে আবাস যোজনায় বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপোড়েন।