
বাঁকুড়া: তার পড়ার রুমে ঢুকলে প্রথমেই নজরে পড়বে টেবিলের সামনে ছোট ছোট কাগজে লেখাগুলি। কোনটায় লেখা, ‘কথা নয়, কাজ করো’। কোনটায় লেখা, ‘প্রতিশ্রুতি নয়, প্রমাণ করো’। সেটাই করে দেখাল বাঁকুড়ার কোতুলপুরের ঈশানী চক্রবর্তী। এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে তৃতীয় হয়েছে কোতুলপুর সরোজ বাসিনী বালিকা বিদ্যালয়ের এই ছাত্রী। মেয়েদের মধ্যে রাজ্যে প্রথম হয়েছে সে।
শুক্রবার সকালে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তার নাম ঘোষণার পর প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না ঈশানীর। টিভি৯ বাংলাকে সে বলল, “খুবই অবাক হয়ে গিয়েছি। একবারও ভাবতে পারিনি এতদূর আসতে পারব। অবিশ্বাস্য লাগছে।” মেয়েদের মধ্যে প্রথম হওয়া নিয়ে তার বক্তব্য়, “ছেলেমেয়ের লড়াই যেহেতু একসঙ্গে। তাই ছেলে প্রথম, মেয়েদের মধ্যে প্রথম এই বিষয়টাকে আমি গুরুত্ব দিই না। তবু আমার মনে হয়েছে, মেয়ে হিসেবে নিজেকে এতদূর এগিয়ে আনতে পেরেছি, এটা খুবই গর্বের ব্যাপার।”
ঈশানীর পড়ার টেবিলের সামনে লেখা রয়েছে এই উইনস্টন চার্চিলের এই বক্তব্য
কীভাবে পড়াশোনা করতে সে? ঈশানী বলল, “প্রতিদিন ভেবে নিতাম এই টপিকগুলো পড়তে হবে। সেই মতো পড়তাম। একটা টপিক পড়ে, একটু ব্রেক নিতাম। প্রতিদিন টার্গেট ঠিক করে এগোতাম।” তবে সারাদিন শুধুই পড়াশোনা নিয়ে থাকত না সে। ছবি আঁকত। বলল, “হস্তশিল্প ভাল লাগে। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য স্কুলের নানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ দরকার।”
মেয়েকে মিষ্টিমুখ ঈশানীর মায়ের
ভবিষ্যতে কী হতে চায় জানতে চাওয়ায় তার উত্তর, “আগামিদিনে ফিজিক্স নিয়ে রিসার্চ করতে চাই। দেশের জন্য, সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। তাদের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই।”
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসএসসি-র ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল হয়েছে। চাকরি গিয়েছে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর। ঈশানীর স্কুলের কয়েকজন শিক্ষিকারও চাকরি গিয়েছে। তা নিয়ে সে বলল, “খুবই মন খারাপ লাগছে। আমার খুবই প্রিয় ছিলেন। এটা হবে জানতাম না। তাঁদের জন্য সমব্যথী। তাঁদের চাকরি আবার আসুক। ম্যামদের এমন হবে ভাবতে পারিনি। অবশ্যই তাঁরা খুবই ভাল পড়াতেন। ইতিহাস, অঙ্কের ম্যামেরা আমায় গাইড করতেন। ম্যামদের আবার স্কুলে দেখতে চাই।”
আগামিদিনের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তার বক্তব্য, “স্কুল কিংবা টিউশনে যতই ভাল পড়াশোনা হোক, বাড়িতে এসে নিজেকে ভাল করে পড়তে হবে।”