‘এখন রাজনীতির সময় নয়’, করোনা আক্রান্ত বিজেপি নেত্রীর ভরসা সেই ‘কমরেডরা’

এই ঘটনায়, জেলা বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামী টেলিফোনে জানান, করোনা পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের যথাসম্ভব সাহায্য করছেন।

'এখন রাজনীতির সময় নয়', করোনা আক্রান্ত বিজেপি নেত্রীর ভরসা সেই 'কমরেডরা'
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 27, 2021 | 11:19 PM

জলপাইগুড়ি: করোনা (Corona) আক্রান্ত হওয়ার পর ফোনের পর ফোন করেও দেখা পাওয়া যায়নি দলের কর্মীদের। অসহায় অবস্থায় কী করবেন কী করবেন না ভেবে না পেয়ে শেষে দ্বারস্থ হন এলাকার  ‘রাস্তায় নেমে কাজ করা কমরেডদের’ উপর। তারপর আর অসুবিধা হয়নি। হাসপাতাল থেকে করোনার চিকিৎসা সবই পেলেন বিজেপি নেত্রী (BJP)। এমন মানবিক নজিরের সাক্ষী থাকল গোটা জলপাইগুড়ি শহর।

জলপাইগুড়ি ২৪ নং ওয়ার্ডের বিজেপি (BJP) বুথ সভাপতি শাশ্বতী গোস্বামী জানান, কিছুদিন আগে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পরিবারের বাকি সদস্যদের মধ্যেও উপসর্গ দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার, শাশ্বতীদেবী প্রচণ্ড অসুস্থ বোধ করেন। অভিযোগ, তখন দলের নেতা কর্মীদের একাধিকবার ফোন করেও তাঁদের পাওয়া যায়নি। শাশ্বতীদেবীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়াতে তিনি প্রতিবেশী রেড ভলেনটিয়ার্সের (Red Volunteers) টিম লিডার দীপশুভ্র সান্যালের সাথে যোগাযোগ করেন। সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে রেড ভলেন্টিয়াররা।

এরপর শাশ্বতীদেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করা থেকে শুরু করে চিকিৎসার ব্যবস্থা, সবটাই হয়ে যায় নিয়ম মেনে, চোখের নিমেষে। আর ভাবতে হয়নি বিজেপি নেত্রীকে। জলপাইগুড়ির বিশিষ্ট চিকিৎসক ড. সুমন্ত্র মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শ মতো চিকিৎসাও শুরু হয় শাশ্বতীদেবীর। ড. মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শাশ্বতী দেবীর হাই প্রেশার ও সুগার রয়েছে। তিনি কো-মর্বিডও। ফলে, তাঁর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। তবে আপাতত স্থিতিশীল তিনি।

আক্রান্ত শাশ্বতীদেবী বলেন, “আমার করোনা ধরা পড়ার পর দলের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু, কোনও সাড়া পাইনি। আমি জানতাম রেড ভলেন্টিয়াররা (Red Volunteers) কাজ করছে। তাই, ওদের কাছেই সাহায্য চাই। ওরাই সব ব্যবস্থা করেছে।” অন্যদিকে, রেড ভলেন্টিয়ারদের টিম লিডার দীপশুভ্র বলেন, “শাশ্বতীদেবী আমার প্রতিবেশী। মাতৃতুল্য। আজ ওঁ বিপদে পড়েছেন। আর এই সময় আমরা রাজনীতির রঙ দেখিনা। কে সিপিএম কে বিজেপি তা দেখে কাজ নেই। আমরা দলমত নির্বিশেষে সকলের পাশেই দাঁড়াচ্ছি।”

এই ঘটনায়, জেলা বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামী টেলিফোনে জানান, করোনা পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন বিজেপি কর্মীরা। তাঁদের যথাসম্ভব সাহায্য করছেন। কিন্তু শাশ্বতী দেবীর সাথে কেন এমন ঘটনা ঘটেছে তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি তিনি এও জানান, স্থানীয় মণ্ডল সভাপতি থেকে শুরু করে সকলেই দলের কর্মীদের পাশে আছে।

উল্লেখ্য, করোনাকালে, গত বছর থেকেই শ্রমজীবী ক্যান্টিন থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি খাবার, ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে উত্তরোত্তর পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠতে কোমর বেঁধে পথে নামেন সিপিআইএমের ছা্ত্র সংগঠনের কর্মীরা। বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে করোনা আক্রান্তের জন্য যতরকম পরিষেবা দেওয়া সম্ভব তার অনেকটাই পূরণ করার দায়িত্ব নেন এই কর্মীরা। ধীরে ধীরে এঁরা রেড ভলেন্টিয়ার্স (Red Volunteers) নামে পরিচিত হন। কিন্তু, কাজ করলেও একুশের বঙ্গ ভোটের ফলাফলের জেরে নানা রকম ‘ব্যাঁকা কথা’ শুনতে হয়েছিল এই স্বেচ্ছাসেবীদের। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সর্বত্রই ‘রাস্তায় থাকা কমরেড’ নামে তীব্র ব্যঙ্গের শিকারও হন এই কর্মীরা। পাল্টা, মানুষের সাহায্যও এসেছে বিস্তর। এমনকী, এই পরিষেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন অনেক স্বেচ্ছাসেবী। কিন্তু তাও পিছিয়ে যাননি তাঁরা। ফের একবার রেড ভলেন্টিয়ারদের সেই মানবিকতার না হেরে যাওয়ার সাক্ষী থাকল গোটা জলপাইগুড়ি।

আরও পড়ুন: ‘মুখ্যমন্ত্রীর আচরণ দেখে অবাক হয়েছি’, ইয়াস মোকাবিলায় ফের অধিকারী পুত্রের নিশানায় রাজ্য