Bagtui Massacre: গ্রাউন্ড জ়িরো থেকে: পোড়া গন্ধ নাকে আসতেই দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসছে….

TV9 Bangla Digital | Edited By: Soumya Saha

Mar 22, 2022 | 9:58 PM

Rampurhat Crime : অগ্নিদগ্ধ বাড়িতে যখন আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়, বিশ্বাস করুন শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে। নাকে পোড়া গন্ধ। বুঝতে পারছি না সেটা মানুষের না কি অন্য কিছুর। কিন্তু এই পোড়া গন্ধে শরীরে ভিতর থেকে দলা পাকিয়ে উঠে আসছে সবকিছু।

Bagtui Massacre: গ্রাউন্ড জ়িরো থেকে: পোড়া গন্ধ নাকে আসতেই দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসছে....
বগটুইয়ের গ্রাউন্ড জিরো থেকে

Follow Us

আ জি জা খা তু ন

সোমবার রাতে খবর এল তৃণমূল নেতা ভাদু শেখকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। খবর পাওয়া মাত্রই বুঝেছিলাম, ফের উত্তপ্ত হতে চলেছে বীরভূম। আলো ফুটতে না ফুটতেই ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ আসে অফিস থেকে। কিন্তু রাত পোহানো মাত্রই একটি খুনের ঘটনা থেকে এটা যে গণহত্যায় পরিণত হয়ে যাবে ঘুণাক্ষরেও তা ভাবতে পারিনি। আজ সকাল ১১টা নাগাদ অখ্যাত বগটুই গ্রামে পৌঁছে যে দৃশ্য চাক্ষুস করলাম, আমার স্বল্প দৈর্ঘের সাংবাদিক জীবনে সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা বলেই মনে করছি।

ন্যাশনাল হাইওয়ে (NH60) থেকে দু’কিলোমিটার ভিতরে ঢুকলেই বগটুই গ্রাম। গ্রামের বুক চিড়ে চলে গিয়েছে রাস্তা। দু’ধারে কাঁচা-পাকা বসতি। রাস্তার একদিকে উপপ্রধান ভাদু শেখের বাড়ি। অন্যদিকে গোটা কুড়ি-পঁচিশেক ঘর। যার মধ্যে চার পাঁচটি বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। ঘটনাস্থলে যখন পৌঁছই দমকলের কর্মীরা তখনও আগুন নেভাতে ব্যস্ত। চারদিক ঘিরে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু সাংবাদিকদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বাইরে থেকে জানতে পারছি ১০ জন পুড়ে মারা গিয়েছে। পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলে আমতা আমতা করে বলছেন ৭ জন। দমকল কর্মীরা বলছেন ১০ জন। পুলিশের গতিবিধি বড়ই ধোঁয়াশা লাগছে। মনে হচ্ছে কোনও কিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। বাংলায় গণহত্যায় দেহ লোপাটের অভিযোগ নতুন নয়। এখানেও কি পুলিশ সেই কাজে তৎপর? প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছিল স্বাভাবিকভাবেই।

 

মাটির ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে

অগ্নিদগ্ধ বাড়িতে যখন আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়, বিশ্বাস করুন শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে। নাকে পোড়া গন্ধ। বুঝতে পারছি না সেটা মানুষের না কি অন্য কিছুর। কিন্তু এই পোড়া গন্ধে শরীরে ভিতর থেকে দলা পাকিয়ে উঠে আসছে সবকিছু। সামনের মাটির ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। কঙ্কালসার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেওয়ালগুলি। আর একটু ভিতরে ঢুকতে বাঁ হাতে দরজার সামনে পড়ে বড় লোহার কড়াই। ভাঙা টিন। বাইরে পড়ে বাচ্চাদের দু’জোড়া জুতো। অগ্নিদগ্ধের তালিকায় বাচ্চারাও যে রয়েছে বুঝতে অসুবিধা হয় না। মন আরও ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। ঘরের আনাচ-কানাচে শুধুই ধ্বংসস্তুপ। কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছিল, যেন বিধ্বস্ত যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে আমি।

বগটুইয়ের গ্রামে এখন পুলিশের ভারী বুটের আওয়াজ

পুলিশের দাবি অনুযায়ী যে বাড়ি থেকে ৭ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে, তাদের ঘর শুধুই যে আগুনে পুড়ে গিয়েছে এমনটা নয়। বাড়ির দেওয়াল, সিঁড়ি এমনকী ঘরের অন্দরে যা অবস্থা তা দেখে মনে হয়েছে একাধিক বোমার আঘাত ছাড়া এই পরিস্থিতি সম্ভব নয়। বোমা বাঁধার সুঁতলিও মিলেছে ধ্বংসস্তুপ থেকে। ঘরের ভিতর ভাঙা খাট। আসবাবপত্র এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে। এই ঘরের ভিতরেই কি অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ৭ জন বাঁচার চেষ্টা করছিলেন? বাচ্চারা কি ঘুমের মধ্যেই মারা গেল? তাদের বাঁচার আর্তনাদ কি এখনও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে? বিশ্বাস করুন, রিপোর্টিংয়ে এসব বলতে বলতে গলাটা ধরে আসে।

গ্রামের পুড়ে যাওয়া বাড়িগুলিতে বীভৎসতার ছাপ স্পষ্ট

আরও একটা আশ্চর্য পরিস্থিতির সাক্ষী থাকলাম। কয়েক ঘণ্টা পর উপপ্রধান ভাদু শেখের দেহ বাড়িতে আসে। লোকে লোকারণ্য। নেতা-মন্ত্রীরা আসছেন। উঠছে কান্নার রোলও। কিন্তু সেই কান্নার তরঙ্গ রাস্তা পেরিয়ে যখন এ পাড়ায় প্রবেশ করে, ফিকে হয়ে আসে। শশ্মানের নিঃস্তবদ্ধতায় মলিন হয়ে যায়। এখানে ওই ১০ জনের (পুলিশের দাবি ৭ জন) জন্য কান্নার কেউ নেই। আত্মীয় স্বজনের দেখা নেই। ভয়ে ত্রস্ত প্রতিবেশীদের কিছু জিজ্ঞাসা করলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। কোনও মহিলা মুখ খুলতে গেলেও বাড়ির গৃহকর্তা এসে থামিয়ে দিচ্ছেন। স্বয়ং মন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও তাদের বিচার চাইবার কোনও লোক নেই। অদ্ভুত দৃশ্য রাস্তার দু’ধারে। দু’ধারে শোকের আবহ। ওপারে সেই শোকের অভিভাবক থাকলেও, এপার যেন নিঃস্ব-সহায় সম্বলহীন।

আরও একটা অদ্ভুত বিষয়। যে বাড়িটির ঘর-দুয়ার-উঠোন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে, তার ঠিক পাশের বাড়ি একদম অক্ষত। আগুনের আঁচ বিন্দুমাত্র লাগেনি পাশের বাড়িতে। আবার তার ঠিক দুটি বাড়ির পর আরও একটি বাড়ি আগুনে পু়ড়েছে। বিক্ষিপ্তভাবে চার পাঁচটি বাড়ি আগুনে পোড়ায় প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, তাহলে কি বেছে বেছে আগুন লাগানো হয়েছে ওই সব বাড়িতে? ইতিমধ্যেই আগুন লাগার অনেক তত্ত্ব খাঁড়া করেছেন শাসক দলের নেতারা। কেউ বলেছেন শর্ট-সার্কিট কেউ বা শুধুই ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে এমন বিভৎসতা বলে দায় এড়িয়ে গিয়েছেন। মৃত্যুর সংখ্যা নিয়েও ধোঁয়াশা। কেউ বলছেন সাত, কেউ বলছেন আট, কেউ বলছেন দশ। কিন্তু মরেছে তো মানুষই… তাই না!

আরও পড়ুন : Mamata Banerjee on Bagtui Massacre: ‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা’, রামপুরহাট-কান্ড প্রসঙ্গে কী বললেন মমতা?

Next Article