
বীরভূম: তিনি প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র। একসময় কংগ্রেসের টিকিটে লোকসভার সাংসদও হয়েছেন। তারপর তৃণমূলে যান। ফের ফিরে এসেছেন কংগ্রেসে। সেই অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে বীরভূমের জেলা কংগ্রেস সভাপতি করা হতেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। তাঁদের কটাক্ষ, বাবার পরিচয় ছাড়া আরও কোনও পরিচয় নেই অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের।
বীরভূমেরই ভূমিপুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। তবে ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের সাংসদ ছিলেন। প্রণববাবুও এই কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরই জঙ্গিপুরে আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন অভিজিৎ। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জিতলেও উনিশের লোকসভা নির্বাচনে হেরে যান।
উনিশের লোকসভা নির্বাচনে হারের পর কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। শেষে ২০২১ সালের ৫ জুলাই তৃণমূলের যোগ দেন তিনি। প্রায় চার বছর পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফের কংগ্রেসে ফিরে আসেন প্রণবপুত্র। এবার তাঁকে জেলা কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মিল্টন রশিদের জায়গায় এই দায়িত্ব তিনি পেয়েছেন। তাঁর এই দায়িত্ব পাওয়াকে মেনে নিতে পারছেন না জেলার অনেক কংগ্রেস নেতা-কর্মী।
২০২১ সালে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন প্রণবপুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়
সুশীল সিনহা নামে প্রবীণ এক কংগ্রেস কর্মী বলেন, “উনি কি এখানে থাকবেন? উনি কি সংগঠনের কিছু বোঝেন? দল কী জিনিস বোঝেন না। জঙ্গিপুরের সাংসদ থাকাকালীনও কিছু করেননি। উন্নয়ন দেখে তৃণমূলে গিয়েছিলেন, তাহলে ফিরে এলেন কেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাকলে আবার চলে যাবেন। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেলে ছাড়া তাঁর আর কোনও পরিচয় নেই। বরং মিল্টন রশিদ অনেক ভাল নেতা।” সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেক কংগ্রেস কর্মী। তাঁরা অন্য দলে যোগ না দিলেও কংগ্রেসের হয়ে আর ভোট ময়দানে নামবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আবার কংগ্রেসের রামপুরহাট সাব ডিভিশনের সভাপতি আকাশ বলেন, “উনি আসল কংগ্রেস বলে তৃণমূলে গিয়েছিলেন। সেই দল ছেড়ে কেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি হলেন, বুঝতে পারছি না। তবে দল তাঁকে সভাপতি করেছে, আমরা হয়তো মেনে নেব।” জেলা কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের এই ক্ষোভ নিয়ে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের এখনও কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কংগ্রেসে ফেরার সময় তিনি বলেছিলেন, তৃণমূলে গিয়ে ভুল করেছিলেন।
প্রণবপুত্রকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা। তিনি বলেন, “বীরভূমের মাটিতে কংগ্রেসের হয়ে মিটিং, মিছিলে মানুষ তাঁকে দেখেছে কি না জানি না। দিল্লিতে বসে রাজনীতি করলে হবে না। বীরভূমের মাটিতে এসে রাজনীতি করতে হবে। যে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে রাষ্ট্রপতি হওয়ার সময় বিরোধিতা করেছিল তৃণমূল, সেই দলে গিয়েছিলেন উনি। প্রণববাবু বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি দুঃখ পেতেন।”