বোলপুর: বিরল অস্ত্রোপচারের সাক্ষী থাকল বোলপুরের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। লাভপুরের কুরুন্নাহার পঞ্চায়েতের রামঘাঁটি গ্রামের বাসিন্দা হীরা শেখ। বছর পঞ্চাশের এই মহিলার পেট অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে গিয়েছিল। পেটে গ্যাস হওয়ার পাশাপাশি প্রচণ্ড ফুলে গিয়েছিল ওই মহিলার পেট। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন তিনি ‘গ্যাঙগ্রিনাস সিগময়েড ভলভোরাস’ (Gangrenous sigmoid volvulus) রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বোলপুর হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ২ লাখে এক জন এই বিরল রোগে আক্রান্ত হন। সেই বিরল রোগ নিয়েই বোলপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আসেন লাভপুরের ওই মহিলা। তার পর অস্ত্রোপচার করা হয়। সফল ভাবেই সেই অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন বোলপুর হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী। হীরার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন তিনি।
ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন ‘গ্যাঙগ্রিনাস সিগময়েড ভলভোরাস’ রোগটি একটি পেটের রোগ। আরও নির্দিষ্ট করে বললে পেটের ভিতরে থাকা কোলনের সমস্যা। এই রোগ নিয়ে তিনি বলেছেন, “সাধারণ মানুষের যে ভাবে কোলন থাকে, এই রোগ হলে কোলনের একাংশ বিন্যাস বেঁকে যায়। যার জেরে কোলনের ওই অংশ রক্তচলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এর জেরে ওই অংশটি পুরোপুরি পচে যায়। অজগর সাপের মতো ফুলে ওঠে। কোলনের ওই অংশে প্রচুর ব্যাক্টেরিয়া থাকে। জায়গাটি পচে যাওয়ায় ওই অংশে ব্যাক্টেরিয়ার ডিকম্পোজ হয়। ফলে গ্যাস তৈরি হয়। যার জেরে ফুলে যায়। তখন সেটা বাদ দিয়ে দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকে না। বাদ না দিলে রোগীর মৃত্যু হবে। সেটাই এখানে করা হয়েছে।” পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায় এই রোগ দেখা যায় বলে জানিয়েছেন তিনি। হীরা নামের এই মহিলার পেটে অস্ত্রোপচারের সময় প্রায় ১০০ গ্রাম প্লাস্টিক উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক। শরীরে বিভিন্ন ধরনের অনিময়নের জেরে এই রোগ হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কলকাতার যে কোনও বেসরকারি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার করতে ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকা খরচ বলে জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক। কিন্তু বোলপুর হাসপাতালে বিরল এই অস্ত্রোপচার হয়েছে বিনামূল্যে। সরকারি হাসপাতালে এই উন্নতমানের চিকিৎসা পরিষেবা আগামী দিনে মানুষের ভরসা আরও বাড়াবে বলে মনে করেন তিনি।