Anubrata Mondal UPDATE: তৃণমূল কর্মীর গলা টিপে ধরার অভিযোগ, ৭ দিনের পুলিশি হেফাজত অনুব্রতর

Birbhum News: এক বছর আগের ঘটনায় সোমবার অভিযোগ দায়ের হয়।

Anubrata Mondal UPDATE: তৃণমূল কর্মীর গলা টিপে ধরার অভিযোগ, ৭ দিনের পুলিশি হেফাজত অনুব্রতর
গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডল।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 20, 2022 | 2:17 PM

বীরভূম: গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডল। এক তৃণমূল কর্মীকে মারধরের ঘটনায় অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়। এক বছর আগের ঘটনায় সোমবার দুবরাজপুরের ওই তৃণমূল কর্মী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তারই ভিত্তিতে এই গ্রেফতারি। মঙ্গলবার অনুব্রতকে দুবরাজপুর আদালতে তোলা হয়। সূত্রের খবর, পুলিশ তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে চাইতে পারে। ওই তৃণমূল কর্মীর নাম শিবঠাকুর মণ্ডল। কী অভিযোগ শিবঠাকুরের? একুশের বিধানসভা ভোটের সময় শিবঠাকুর বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন, এই সম্ভাবনার কথা শুনে অনুব্রত দুবরাজপুরের পার্টি অফিসে তাঁকে ডেকে পাঠান। সেখানেই অনুব্রত তাঁর গলা টিপে ধরেন বলে অভিযোগ। সোমবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ইডিকে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়। এরইমধ্যে মঙ্গলবার সকালে হঠাৎই আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারের সামনে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। কিছু পরেই শাল গায়ে দিয়ে বেরিয়ে আসেন বীরভূমের বেতাজ বাদশা কেষ্ট মণ্ডল। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল দুবরাজপুরের দিকে যাচ্ছে তাঁর কনভয়। রাজ্য পুলিশের ঘেরাটোপে বের করা হয় অনুব্রতকে। এরপরই সোজা দুবরাজপুর আদালত। তারপর…

  1. দুবরাজপুরের মেজে গ্রামের বাসিন্দা শিবঠাকুর মণ্ডল বালিজুড়ি গ্রামপঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান ছিলেন। তাঁর বক্তব্য, দল তাঁকে যথাযথ সম্মান দিচ্ছিল না। তাই গত বিধানসভা ভোটের সময় তিনি ভেবেছিলেন অন্য দলে যোগ দেবেন। শিবঠাকুর মণ্ডলের কথায়, “দুবরাজপুর পার্টি অফিসে আমাকে ডেকে পাঠিয়ে বলেন তুই অন্য দলে যাবি কেন? আমি বললাম, দাদা আমি এই দলে কোনও মানসম্মান পাই না। তখন আমাকে গলা টিপে ধরে এবং প্রাণে মারার চেষ্টা করে। আমি দাদার হাতে পায়ে ধরে রক্ষা পাই। তখন থেকেই এটা আমার মাথায় ছিল। আজ সুযোগ এসেছে। কেষ্টদা জেলে, তাই অভিযোগ করলাম। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।”
  2. শিবঠাকুরের কথায়, “আমি এখনও টেনশনে রয়েছি। আমাকে কখন কে আঘাত করবে বলতে তো পারছি না। বাড়িতেই আছি। সোমবার অভিযোগ করি।” কিন্তু এতদিন পর কেন অভিযোগ দায়ের? শিবঠাকুরের ব্যাখ্যা, “অনুব্রত মণ্ডলের নামে কেস করা তো কঠিন ব্যাপার। আমি এখন সুযোগ পেলাম যেহেতু জেলে আছেন। আমি তৃণমূলেই আছি। তবে দল না করার মতোই।”
  3. তবে এই গ্রেফতারি নিয়ে এখনও স্পষ্ট নয় একাধিক বিষয়। সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে অনুব্রত জেলে ছিলেন। সেখানে কীভাবে রাজ্য পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করল? আসানসোল বিশেষ সংশোধনাগারে গিয়ে পুলিশ যে গ্রেফতার করল, সেই অনুমতি কোথা থেকে এল? প্রশ্ন উঠছে, এভাবে কি আদৌ গ্রেফতার করা যায়?
  4. এদিন আদালতের মূল সদর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ দুবরাজপুর আদালত চত্বর। রয়েছে কমব্যাট ফোর্সও। কোর্ট লকআপ রুমে অনুব্রতকে রাখা হয়েছে। আদালত খোলার আগেই নিয়ে আসা হয়েছে অনুব্রতকে। আদালত খুললে তাঁকে এজলাসে তোলা হবে। এরপরই মামলার উপর শুনানি হবে।
  5. অনুব্রতর এই গ্রেফতারির সঙ্গে অনেকে মিল পাচ্ছেন টুলু মণ্ডলের গ্রেফতারির। টুলু একজন ব্যবসায়ী। একটি পুরনো মামলাকে কেন্দ্র করেই তাঁকে গ্রেফতার করে বীরভূম জেলা পুলিশ। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, এই টুলুকে ইডি ডেকেছিল দিল্লি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। তারপরই গ্রেফতার করা হয় রাজ্য পুলিশের তরফে।
  6. বিজেপি নেতা সজল ঘোষ বলেন, “এত বোকা বোকা খেলা হাসি পায়। এতো খুনের মামলা বা গাঁজা মামলা দিলে তাও আটকাতে পারত। এই কেসে তো কোর্ট একটু পরেই জামিন দিয়ে পাঠিয়ে দেবে। কত ভয় একটা সরকারের সেটাই দেখছি। অনুব্রত মুখ খুললে শুধু অনুব্রত নয়, তার মেন্টররাও জেলে যাবে। তাই নিজেদের বাঁচাতে একটা বোকা বোকা প্রয়াস।”
  7. সিপিএম নেতা বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, “এরা দুর্নীতির এতটাই গভীরে পৌঁছে গিয়েছে, যে কোনও তদন্তকেই ভয় পাচ্ছে। যে চেষ্টা এরা করছে, তা যে কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে হাস্যকর বলে মনে হবে। যে মামলায় তাঁকে তোলা হচ্ছে, তার কোনও গুরুত্ব আছে কি না, কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ আছে কি না এসব তো বিচার করতে হবে।  বিচারকও গুরুত্ব উপলব্ধি করে ওদের এই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেবে।”
  8. সাতদিনের পুলিশ হেফাজত অনুব্রত মণ্ডলের। নির্দেশ দিল দুবরাজপুর আদালত। এদিন জামিনেরও আবেদন করেননি অনুব্রত।
  9. বীরভূমের তৃণমূল নেতা তথা আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “শিবঠাকুর মণ্ডল দুবরাজপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই মামলার পরই প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট চাওয়া হয়েছিল আসানসোল থেকে। আজই দুবরাজপুর কোর্টে তোলা হয়। ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত চাওয়া হয়। বিচারক ৭ দিনের পুলিশ হেফাজত দেন।”
  10. কেন জামিনের আবেদন করলেন না অনুব্রত? মলয় মুখোপাধ্যায়ের জবাব, “হঠাৎই ঘটনাটা ঘটেছে। তাই অনুব্রতর তরফে কোনও জামিনের আবেদন করা হয়নি।”
  11. বীরভূম জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, এই মামলার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। তবে এর বেশি মলয় মুখোপাধ্যায় বলতে চাননি। জানিয়েছেন, ‘বিচারাধীন বিষয়। এত কিছু বলা যাবে না।’
  12. মলয়ের বক্তব্য, “আইন বলে, কাউকে পুলিশ হেফাজতে রাখতে গেলে থানার কম্পাউন্ডেই রাখতে হবে। বাইরে রাখা যাবে না। সিসিটিভির নজরে রাখতে হবে।” একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ইডি-সিবিআইয়ের সঙ্গে এটা যুক্ত করে এত সরলীকরণ করা ঠিক হবে না।
  13. মলয় মুখোপাধ্যায়ের কথায়, নির্দেশ এলেও ইডির প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট এখনও এসে পৌঁছয়নি। আসানসোল জেলে না আসায় এটা সম্ভব হল।
  14. আইনজ্ঞরা বলছেন, অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যেতে এবার ইডিকে কিছুটা বেগ পেতে হবে। এক মাসও অপেক্ষা করতে হতে পারে। আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, এই ৭ দিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর অনুব্রতকে যদি আবার নতুন কোনও মামলায় যুক্ত করা হয়, তাঁকে জেলে রাখা হয়, পুলিশ জেল হেফাজতে গিয়ে জেরার আর্জি জানিয়ে রাখেন, তাহলে ইডির তাঁকে হেফাজতে পেতে সমস্যা হতে পারে।
  15. ইতিমধ্যেই অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যেতে পরবর্তী পদক্ষেপ কী করা হবে তা নির্ধারণে বিষয়ে বৈঠকে বসতে চলেছে ইডি। তবে খুব তাড়াতাড়ি অনুব্রতকে ইডি দিল্লি নিয়ে যেতে পারবে না বলেই মত আইন বিশেষজ্ঞদের।
  16. সাধারণত দেখা যায় দুপুর ২টোর পর এই ধরনের অপরাধসংক্রান্ত মামলা কোর্টে ওঠে। বিশেষ করে, পুরনো মামলার শুনানি প্রথম ধাপে হয়ে যায়। দ্বিতীয় ধাপে ওঠে নতুন মামলা। যদিও এ সংক্রান্ত লিখিত কোনও নিয়ম নেই। তবে অনুব্রতর ক্ষেত্রে সকাল ১১টার মধ্যেই সব নির্দেশও হয়ে গেল। অভিযোগকারী জানিয়েছেন, সোমবারই তিনি থানায় অভিযোগ জানান। রাতারাতি প্রোডাকশন ওয়ারেন্টও জারি হয়ে গেল। সেইমতো আদালতে পেশ করা হল। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।
  17. এদিন দুবরাজপুর আদালত থেকে দুবরাজপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয় অনুব্রতকে। এরপরই থানার মূল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
  18. অন্যদিকে সোমবার কখন অভিযোগ দায়ের হয় তা এদিন স্পষ্ট করেননি সরকারি আইনজীবী। সংশোধনাগার থেকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে ‘শোন অ্যারেস্ট’ করতে হয়। তা হয়েছিল কি না, তাও স্পষ্ট করা হয়নি। তিনি জানান, তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাবে না।