
চন্দননগর: কেমো চলছিল। তাই গত বছর পরীক্ষা দিতে পারেননি। এবার যন্ত্রণায় কাতর হয়েও হাসপাতালে বসে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন চন্দননগরের সুজলি পাত্র। কারণ তাকে তো বড় হয়ে অনেক বড় শিক্ষিকা হতে হবে। তাই কোনও রোগের কাছেই হার মানতে চায় না সে। তার লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছে স্কুলের শিক্ষিকা থেকে প্রতিবেশীরা।
সুজলি রায়। মা মারা যায় তার বয়স যখন মাত্র এগারো দিন। তারপর থেকেই চন্দননগর কেএমডিএ পার্কের পাশে মামার বাড়িতে বড় হওয়া। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে আলাদা সংসারে থাকেন। মাঝে মধ্যে এসে খোঁজ নেন। তবে প্রাক্তন জুটমিল শ্রমিক মামা সত্যজিৎ রায়ই তাকে বড় করেছেন।
সুজলী চন্দননগর লালবাগান বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। এগারো ক্লাসে পড়ার সময় তার অসুস্থতা ধরা পরে। জানা যায়, ওভারিতে টিউমার রয়েছে। বায়োপসিতে ধরা পরে ক্যানসার। এরপর শুরু হয় কেমো থেরাপি। মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেছেন সুজলি। অসুস্থতার কারণে গতবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারেননি।
তবে তার মনের জোর ছিল। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। সেই মতো চলছিল প্রস্তুতি।চন্দননগর কৃষ্ণভাবিনি নারী শিক্ষা মন্দিরে পরীক্ষার সিট পড়ে। প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষা দেওয়ার পরই আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। সারারাত পেটে যন্ত্রণায় ঘুমতে পারেননি।
সুজলীর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অর্পিতা মণ্ডল জানান, “আমায় ফোন করে শরীর খারাপের কথা জানায় সুজলি। আর পরীক্ষায় বসতে পারবে কি না তানিয়ে দ্বিধা তৈরি হয়। চিকিৎসক দ্রুত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়। দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষা স্কুলেই দেন। এরপরই অসুস্থতা বাড়ে। নীলরতন সরকার হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। ছাত্রী জানায় হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দেবে। সেই মতো সব ব্যবস্থা করা হয়।”
প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “অসম্ভব মনের জোর সুজলীর। শারীরিক এত অসুস্থতা সত্ত্বেও সে স্কুলে আসত। পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল। কাল পরীক্ষার পর কথা হল। বলল খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। তাও পরীক্ষা শেষ করেছে। বড় হয়ে শিক্ষিকা হতে চায়। আমরা চাই ও বড় হোক।”
ছাত্রীর প্রতিবেশী অনামিকা সরকার বলেন, “ছোট থেকে মা নেই মেয়েটার। মামা দিদিমার কাছে মানুষ। দিদিমাও কিছুদিন আগে মারা গিয়েছেন। অনেক প্রতিকুলতার মধ্যে লড়াই করে যাচ্ছে। রোগটা ভালো নয়। আমরা চাই ও সুস্থ হয়ে উঠুক। ভালো রেজাল্ট করুক।”