পুরুলিয়া: ঘোষিত প্রকল্প রূপায়নে দেরি হওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এ বিষয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। এই প্রকল্পের দেরির কারণ নিয়ে পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদারের কাছে জবাবদিহিও চান তিনি। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের কাজকর্মে ক্ষুব্ধ মমতা বলেছেন, “প্রকল্পের কাজ কত দূর এগিয়েছে, তা জানতে চাইলেই বলা হয়, ইট ইজ আন্ডার প্রসেস। তোমরা কাজগুলো না করে ফেলে রেখে দাও দিনের পর দিন। জানতে চাইলেই তোমরা বলো, ‘ইট ইজ আন্ডার প্রসেস’।” উন্নয়নের কাজ নিয়ে এই চালাকি চলবে না বলেও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি বেশ কয়েকটি প্রকল্পের নাম ধরে ধরে উল্লেখ করেছেন তিনি। তার পর নিজেই জানিয়েছেন কত বছর ধরে এই প্রকল্পগুলি অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে পঞ্চায়েত ভোটের ঘোষণা ‘যে কোনও সময়’ হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মমতা। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের জন্যই কি প্রকল্পের দেরি নিয়ে উদ্বেগ শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর গলায়? পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়েই মুখ্যমন্ত্রী পড়ে থাকা কাজ দ্রুত শেষ করতে চাইছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
সোমবার দুপুরে পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের অফিসার, জনপ্রতিনিধি ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন সহ রাজ্য প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অফিসাররা। বৈঠকের শুরুতেই ২৮৮ কোটি টাকার প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়। উদ্বোধন পর্ব শেষ হতেই মাইক হাতে তুলে নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুতেই পুরুলিয়া জেলার যে সব প্রকল্প অনেক দিন ধরে পড়ে রয়েছে, সে গুলির নাম উল্লেখ করেন। নাম ধরে ধরে বেশ কয়েকটি প্রকল্প কত দিন পড়ে রয়েছে, সেগুলি জানান। মুখ্যমন্ত্রী যখন এই তালিকার বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তখন গম্ভীর মুখে তা শুনছিলেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। এর পর প্রকল্পের দেরির জন্য আধিকারিকদের গাফিলতিকে দায়ী করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “প্রকল্পের কাজ কত দূর এগিয়েছে, তা জানতে চাইলেই বলা হয়, ইট ইজ আন্ডার প্রসেস। তোমরা কাজগুলো না করে ফেলে রেখে দাও দিনের পর দিন। জানতে চাইলেই তোমরা বলো, ‘ইট ইজ আন্ডার প্রসেস’।” এর পর প্রকল্পগুলির বর্তমান অবস্থার ছবি দেখান মমতা। তার পরই বলেন, “কাজ নিয়ে চালাকি চলবে না।”
হুশিয়ারি দেওয়ার পর দ্রুত কাজ শেষ করতে প্রশাসনের আধিকারিকদের ‘অনীহা’ নিয়েও আক্ষেপ শোনা যায় মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। আধিকারিকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “আপনাদের দেখে মনে হয় না, কাজ শেষ করার কোনও উদ্যোগ আছে।” তার পর বিলম্বিত কাজের তালিকা মুখ্যসচিবের হাতে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে এ বিষয়ে নজর রাখতেও নির্দেশ দেন।