Memari News: কংগ্রেস সমর্থক হওয়ায় বোনের বিয়েতে বাধা, রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়ে প্রতিবাদ পরিবারের

হেতমপুর গ্রামের বাসিন্দা জিবান শেখ এবং তাঁর ভাই বাজান শেখ হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি খেতে-খেতে জেলাশাসকের অফিসে এসে পৌঁছন।

Memari News: কংগ্রেস সমর্থক হওয়ায় বোনের বিয়েতে বাধা, রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়ে প্রতিবাদ পরিবারের
অভিনব বিক্ষোভ মেমারির কংগ্রেস পরিবারের।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 25, 2023 | 10:11 PM

মেমারি: দলবদলের শাস্তি স্বরূপ দক্ষিণ দিনাজপুরের দুই আদিবাসী মহিলাকে রাস্তায় দণ্ডী কাটানোর অভিযোগ উঠেছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্যে। এবার রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ তুলে রাস্তায় গড়াগড়ি খেয়ে প্রতিবাদ জানালেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার হেতমপুর গ্রামের জিবান শেখের পরিবার। জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে তীব্র গরমে উত্তপ্ত রাস্তায় গড়াগড়ি দিয়ে জেলাশাসকের অফিসের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। আর কয়েক কিলোমিটার হেঁটে জেলাশাসকের অফিসে যান জিবান শেখের ৮৬ বছরের বৃদ্ধা মা। মঙ্গলবার দুপুরে এই ঘটনায় জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তৃণমূলের সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তবে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।

ঠিক কী ঘটেছে? এদিন দুপুরে হেতমপুর গ্রামের বাসিন্দা জিবান শেখ এবং তাঁর ভাই বাজান শেখ হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি খেতে-খেতে জেলাশাসকের অফিসে এসে পৌঁছন। আর হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে, বুকে প্রতিবাদী শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে হেঁটে জেলাশাসকের অফিসে আসেন জিবান শেখের বোন মমতাজ এবং ৮৬ বছরের বৃদ্ধা মা কোহিনুর বিবি। প্রচণ্ড গরমে ওই বৃদ্ধার যে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল, তা কারও নজর এড়ায়নি।

শাসকদলের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ জিবান শেখের? জিবান শেখ জানান, তাঁরা পুরনো কংগ্রেসী পরিবার। দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস করে আসছেন। এখন তাঁরা ছোট বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে পড়েছেন সমস্যায়। যেখানেই যোগাযোগ হচ্ছে, কয়েকদিন পর সমন্ধ ভেঙে যাচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় নিদানে তাঁদের পরিবারে মেয়ের বিয়ে হবে না। এছাড়া বোনের বিয়ের জন্য নিজেদের জমি বিক্রির চেষ্টা করলেও বাধা দেওয়া হচ্ছে, জমির রেকর্ডে গরমিল করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এমনকি কোল্ড স্টোরেজে আলু রাখতে গিয়েও বাধা পাচ্ছেন। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েও সুরাহা হয়নি।

জিবান শেখের কথায়, পূর্বতন বিধায়ক নার্গিস বেগম, বর্তমান বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্যকে গোটা ঘটনার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু, কোনও সুরাহা হয়নি। বিডিওর কাছে বিহিত চাইতে গেলে তিনিও ব্লক সভাপতির কাছে যেতে বলেন। দুই ভাইয়ের দাবি,গোটা বিষয়টি জানিয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকেও বেশ কয়েকবার চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু, কোনও জবাব পাননি। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে জিবান শেখের প্রশ্ন, “যখন সরকারের কন্যাশ্রী, রূপশ্রী প্রকল্প চলছে, তখন একটি মেয়ের বিয়ে হবে না কংগ্রেসকে সমর্থনের কারণে? আমরাও কি মুখ্যমন্ত্রীর সন্তান নন?” বাম জমানাতেও তাঁরা সরকারের বিরোধিতা করেছেন, কিন্তু কখনও শাসকদলের থেকে এরকম আচরণ পাননি বলেও জানিয়েছেন জিবান শেখ। তাই এদিন অভিনব প্রতিবাদে সামিল হন তাঁরা।

এদিকে, এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলা যুব কংগ্রেসের সভাপতি গৌরব সমাদ্দার। তিনি বলেন, “মধ্যযুগীয় এই ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এই অসহায়তার বিহিত প্রশাসনকে করতে হবে।” তাঁর আরও হুঁশিয়ারি, দলের পক্ষ থেকে ওই গ্রামে যাবেন তাঁরা। এই অন্যায় বরদাস্ত করবেন না।

অন্যদিকে, এই ঘটনায় খানিক ডিফেন্সিভ তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস। তাঁর কথায়, “এটা হয়ে থাকলে খুব অন্যায় হয়েছে। তারাও এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরাও চাই এর বিহিত হোক।” তবে এটা সম্ভবত কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশের ঘটনা এবং ব্যক্তিগত বিষয় দলের সঙ্গে জড়িয়ে ওই পরিবার ঠিক কাজ করেন বলেও দাবি প্রসেনজিৎ দাসের।

এদিন শেষ পর্যন্ত অবশ্য জিবান শেখ ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন জেলাশাসক। তাঁরা লিখিতভাবে জেলাশাসককে গোটা বিষয়টি জানিয়ে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। জেলাশাসকও বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে সমাধান না হলে আগামী দিনে রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ জমা দিতে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জিবান শেখ।