মানুষ তো ছাড়ুন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে পাখিও ঢুকতে পারবে না বাংলায়: শাহ
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে একটি রিপোর্ট জমা পড়েছে। তাতে কোচবিহারের কয়েকটি ছিটমহল এলাকায় আরও বেশি নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে
কোচবিহার: সভাস্থলের ওপর নির্ভর করে রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রাসঙ্গিকতা। উত্তরবঙ্গের শাহি বক্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই যে অনুপ্রবেশ ইস্যু উঠে আসবে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। আর রাজনীতির কুশীলবদের সে অনুমান সত্যি করে এই ইস্যুতেই শাসক শিবির তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। অনুপ্রবেশ থেকে নারায়ণী রেজিমেন্ট, রাজবংশী থেকে চা বাগান-সবই উঠে এল বক্তৃতায়। এর পাশাপাশি উন্নয়নের একগুচছ প্রতিশ্রুতিতে ছুঁয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন উত্তরবঙ্গবাসীর মন। তবে এদিনের বক্তৃতা জুড়ে সব থেকে বেশি থেকেছে অনুপ্রবেশ ইস্যু। শাহ এ বিষয়টিকে এদিন কোন পর্যায়ে পাখির চোখ করেছেন তা স্পষ্ট হয় যখন তিনি বলেন, “বিজেপি ক্ষমতায় এলে মানুষ তো ছাড়ুন, একটি পাখিও ঢুকতে পারবে না।”
রাজ্যে অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গে বিএসএফ-এর আরও এক ব্যাটেলিয়ন পাঠিয়েছে। বুধবারই রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই সুর চড়িয়েছেন, সীমান্তে অনুপ্রবেশ রুখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ রাজ্য সরকার। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তরফে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে একটি রিপোর্ট জমা পড়েছে। তাতে কোচবিহারের কয়েকটি ছিটমহল এলাকায় আরও বেশি নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে শাসকশিবিরকে বিঁধতে এই ইস্যুর থেকে বেশি প্রাসঙ্গিক আর কীই বা হতে পারে! পোড়খাওয়া রাজনীতিক শাহ সেটাই করলেন। অমিত শাহ বলেন, “এটা বাংলার অবস্থা পরিবর্তনের যাত্রা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুপ্রবেশ রুখতে পারবেন না। এটা অনুপ্রবেশ বন্ধের পরিবর্তন যাত্রা। মানুষ তো দূর, পাখিও ঢুকতে পারবে না, সেই পরিবর্তন যাত্রা।”
এদিনের সভার অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ছিল আরও দুটি-একটি বিষয়। রাজবংশী, চা-বাগান শ্রমিক, আর নারায়ণী রেজিমেন্টের সম্পর্কে শাহ বচন।
নারায়ণী রেজিমেন্ট
এই সেই ভূমি যেখানে মুঘলদের বিজয়যাত্রা রুখে দিয়েছিল। সে সময় নারায়ণী সেনা যে সাহস দেখিয়েছিল, তাকে সম্মান জানিয়ে আধা সেনায় নারায়ণী সেনা ব্যাটেলিয়ন গঠন করা হবে।
রাজবংশী প্রসঙ্গ বাম, কংগ্রেস, তৃণমূল আমলে রাজবংশীদের জন্য কিচ্ছু করা হয়নি। তাঁদের সংস্কৃতির সম্মান দেওয়া হয়নি। ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে রাজবংশী সংস্কৃতি কেন্দ্র তৈরি হবে। ২৫০ কোটি টাকা দিয়ে পঞ্চানন বর্মার নামে স্মারক তৈরি হবে। এই অঞ্চলকে বিশেষ পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হবে।
চা শ্রমিক ও কৃষকদের উদ্দেশে বিজেপি ক্ষমতায় এলে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ১৮ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। কৃষকদের উন্নতির স্বার্থেই এই পরিবর্তন যাত্রা। চা-বাগানের উন্নতির জন্য ৪০০ হাজার কোটি বরাদ্দ। এখানে পর্যটক ব্যবসার অনেক সুযোগ রয়েছে। চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ।
আরও পড়ুন: এবারও কি গলার কাঁটা ‘গোষ্ঠী কোন্দল’! মালদহ ছাড়ার আগে মৌসম, কৃষ্ণেন্দুদের কী বোঝালেন মমতা
২০০র বেশি আসনে জিতবে বিজেপি। এদিনও চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন অমিত শাহ। এরপরই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে পরিচিত স্লোগান উদ্ধৃত করে ‘চলুন পাল্টাই’ বলে সুর চড়িয়ে সভা শেষ করেন শাহ। তাঁর পরবর্তী গন্তব্য ঠাকুরনগর।