এবারও কি গলার কাঁটা ‘গোষ্ঠী কোন্দল’! মালদহ ছাড়ার আগে মৌসম, কৃষ্ণেন্দুদের কী বোঝালেন মমতা
বুধবার মালদহবাসীর কাছে মমতার করুণ প্রশ্ন, "প্রতিবার মালদহে আসি, মানুষের ঢল দেখে খুশি হই। কিন্তু ভোটের ফলাফলে ছবিটা বদলে যায়। লোকসভাতেও জিরো, বিধানসভাতেও প্রায় নেই বললেই চলে! এবারও কি এই ছবির বদল হবে না?"
মালদহ: কাঁটা গোষ্ঠীকোন্দল। তাই জেলা ছাড়ার আগেও ‘সবে মিলে’ কাজের বার্তা দিয়ে গেলেন দলনেত্রী। এককাট্টা হয়ে না লড়লে মালদহে তৃণমূলের খাতা খোলা যে এক প্রকার অসম্ভব, সে আঁচ করেই বৃহস্পতিবারও কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ, মৌসম, মোয়াজ্জমদের মিলেমিশে থাকার পরামর্শ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মালদহে প্রায়শই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ শোনা যায়। ব্লক স্তর হোক বা জেলার শীর্ষ নেতৃত্ব, বিতণ্ডা লেগেই থাকে। তৃণমূল সূত্রে খবর, এই দলীয় কোন্দলের আবহে গত মাসেই জেলা সংগঠনের খোলনলচে বদলানো হয়। মোয়াজ্জেম হোসেনকে সরিয়ে জেলার চেয়ারম্যান পদে বসানো হয় কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরীকে। জেলার সভাপতি মৌসম বেনজির নূর তো রয়েছেনই। তৃণমূলের অন্দরের খবর, তবু যখন তখন গোলমাল লেগেই রয়েছে।
গত ১২ জানুয়ারি, বিবেকানন্দর জন্মদিনে কে আগে স্বামীজীর মূর্তিতে মাল্যদান করবেন তা নিয়ে প্রকাশ্যে গোল বাধে কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ ও ইংরেজবাজারের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষের মধ্যে। এলাকার বিধায়ক হিসাবে আগে মালা দিতে ডাকা হয় নীহাররঞ্জনকে। অভিযোগ, এরপরই রাগে ফেটে পড়েন কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ। যুক্তি, যেহেতু তিনি প্রাক্তন মন্ত্রী তাই মালা দেওয়ার অধিকার তাঁরই আগে। এ নিয়ে তুমুল হইচই পড়ে যায়। অস্বস্তিতে পড়তে হয় দলকে।
আরও পড়ুন: বাম যুবদের মিছিলের আগেই ধস্তাধস্তি, নবান্নচত্বর থেকে আটক পাঁচ
এ খবর কলকাতায় তৃণমূল ভবনে এসে পৌঁছলে দলের শীর্ষনেতৃত্বও যথেষ্ট উষ্মা প্রকাশ করে বলেই খবর। বুধবার ইংরেজবাজারের মঞ্চ থেকে বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কোন্দল-কাঁটাতেই আলোকপাত করেন। সূত্রের খবর, এদিন জনসভার পর জেলার নেতাদের সঙ্গে সেভাবে কথা বলেননি মমতা। একাংশের দাবি, তিনি নাকি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন কেউ যেন তাঁকে বিরক্ত না করে।
বৃহস্পতিবার মালদহের মহানন্দাভবন থেকে বেরোনোর সময় জেলার কয়েকজন নেতার সঙ্গে অল্প কথা বলেন তিনি। ছিলেন মৌসম বেনজির নূর, কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন-সহ হাতে গোনা কয়েকজন নেতা। সূত্রের খবর, মমতা তাঁদের বার্তা দেন নিজেদের মধ্যে লড়াই বন্ধ করে একসঙ্গে এগোতে হবে। যদিও এর আগেও বহুবার এ বার্তা দিয়েছেন দলনেত্রী। তবে বাস্তবে তার কোনও প্রতিফলন নজরে আসেনি।
এক সময় শুভেন্দু অধিকারী এ জেলার পর্যবেক্ষক ছিলেন। শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ার পর তার প্রভাবও ভুগতে হয়েছে তৃণমূলকে। দল ছেড়েছেন অনেকেই। এই অবস্থায় মালদহে সকলকে একত্রিত করে বিধানসভা ভোটের ময়দানে লড়াইয়ে নামা তৃণমূলের জন্য যে গুরুতর চ্যালেঞ্জ সে আঁচও পেয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেই ‘অনিশ্চয়তা’ থেকেই হয়তো বুধবার তাঁর গলায় আক্ষেপের সুর শোনা গিয়েছে, ‘মালদহে কি এবারও পাব না’!