
কোচবিহার: মাথাভাঙায় খুনের ঘটনায় মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। যাদের মধ্য়ে একজন আবার তৃণমূলেরই বুথ সভাপতি। নাম সুধীর সিকদার। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক থেকে মোট ১৩ জনকে ‘হামলাকারী’ বলে অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। বিকালে বৈঠক। রাতের মধ্যে ‘অ্যাকশন’ পুলিশের। ১৩ নয়, গ্রেফতার ছয়।
ঘটনা মাথাভাঙার হাজারহাট এলাকার। সেখানে দুই পরিবারের মধ্যেকার সংঘাত ঘিরে উত্তাল পরিস্থিতি। এদিন সকালে জনা বিশেক লোক নিয়ে স্থানীয় সরকার পরিবারের উপর হামলা চালায় সিকদার পরিবার, এমনটাই অভিযোগ। ধারাল অস্ত্র নিয়ে সরকার পরিবারের উপর চড়াও হয় আক্রমণকারীরা। এই ঘটনায় মৃত্যু হয় সরকার পরিবারের দুই সদস্য — মানব সরকার ও তাঁর ছেলে যাদব সরকার। গুরুতর ভাবে জখম হন বাকি ৬ সদস্য।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রণয়ঘটিত বিবাদ কাল হয়ে নেমেছে যাদব সরকারের জীবনে। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণহানি হয়েছে বাবা মানব সরকারেরও। এদিন যাদবের জেঠু বলেন, ‘সিকদার পরিবারের মেয়ের সঙ্গে ভাইপোর প্রেম ছিল। মেয়েটাকে বুধবার আবার বাড়িতে তুলে নিয়ে আসে। এরপরই অশান্তি।’
সরকার পরিবার বনাম সিকদার পরিবারের দ্বন্দ্বকে পুলিশ ‘লঘু’ আকারে দেখাচ্ছে বলেই অভিযোগ রাজ্যের বিরোধী দলনেতার। এমনকি সত্য ঢাকা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার নিহত মানব সরকার ও যাদব সরকারকে বিজেপির কোচবিহারের সক্রিয় সদস্য বলে উল্লেখ করেন শুভেন্দু। তাঁর অভিযোগ, ‘যাঁরা খুন করেছেন, তাঁরা সব তৃণমূলের পরিচিত মুখ এবং গুন্ডা। নিহত মানব সরকার আবার শুধু সদস্য নন, ওই এলাকার মণ্ডলের যুব মোর্চার সহ-সভাপতি।’ এরপরেই মোট ১৩ জন অভিযুক্তের নাম তুলে ধরেন শুভেন্দু।
মাথাভাঙার ঘটনায় উঠে এসেছে তৃণমূল যোগের প্রসঙ্গ। ধৃত ৬ অভিযুক্তের মধ্য়ে একজন আবার ওই এলাকার তৃণমূল বুথ সভাপতি। নাম সুধীর সিকদার। ইতিমধ্যে খুনের ঘটনায় তাঁর নাম জড়ানোয় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সাংগঠনিক সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। নিজের সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে সেই মর্মে ঘোষণা করেছেন তিনি।
জেলা সভাপতি লিখেছেন, ‘স্থানীয় পারিবারিক বিবাদে সুধীর সিকদার জড়িয়ে পড়ার কারণে তাঁকে দল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বহিষ্কার করা হল।’ অন্যদিকে শুভেন্দুর অভিযোগ খারিজ করে তৃণমূলের জেলা পরিষদের সহকারী সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ জানিয়েছেন, ‘এটা পারিবারিক বিবাদ। সবাই তৃণমূলের কর্মী-নেতাই ছিল। কিন্তু এর সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক যোগ নেই। যা হয়েছে সবটাই পারস্পরিক ব্যক্তিগত স্তরের বিবাদ।’