Udayan Guha on BSF: ‘সীমান্ত থেকে গ্রামের ভেতরে ঢুকে খবর নিচ্ছে…২০২৪-এর জন্য কি তৈরি হচ্ছে BSF?’

Udayan Guha's Facebook Post: উদয়নের এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কার্যত নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। এরপর ফের নতুন করে উদয়নের ফেসবুক পোস্টের জেরে রাজনৈতিক তরজা শুরু হতে পারে বলেই অনুমান করছেল সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।

Udayan Guha on BSF: 'সীমান্ত থেকে গ্রামের ভেতরে ঢুকে খবর নিচ্ছে...২০২৪-এর জন্য কি তৈরি হচ্ছে BSF?'
উদয়ন গুহ। ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 28, 2021 | 10:39 PM

কোচবিহার: বিধানসভার অধিবেশনের পর এ বার নিজের ফেসবুক পেজ। ফের, বিএসএফ-কে (BSF) নিশানা করে তোপ দাগলেন দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ (Udayan Guha)। ফের তৃণমূল বিধায়কের মন্তব্যের জেরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি।

রবিবার উদয়ন ফেসবুকে লেখেন, “BSF কি 2024 এর জন্য তৈরি হচ্ছে? সীমান্ত থেকে অনেক ভিতরে গ্রামে ঢুকে খবর নিচ্ছে, জনসংখ্যা কতো ভোটার কতো,শতকরা হিন্দু,মুসলমান কতো ?দেশের নিরাপত্তার সাথে এর কি সম্বন্ধ? ৫০ কিমি পর্যন্ত এক্তিয়ারে!! গ্রামের নাম দুরাচাপড়ি, খারিজা রাখালমারি, দিনহাটা বিধানসভা।”

উদয়নের ফের এই মন্তব্যের জেরেই ফের তুঙ্গে বিতর্ক। এর আগে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে ‘কুমন্তব্য’ করায় শাসক শিবিরের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিল বিজেপি। বিধানসভার অধিবেশনে খোদ ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন স্পিকার বিমান বন্দ্য়োপাধ্যায়। সেখানে ফের উদয়নের এ হেন পোস্টে ফের বিএসএফের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

ঘটনায় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, উদয়ন গুহের কোনও ব্যক্তিগত স্বার্থে নিশ্চয়ই কোনও আঘাত লেগেছে। তাই বারবার বিএসএফের এক্তিয়ারজনিত প্রশ্ন তুলছেন। অথচ, এই বিএসএফই দেশের সীমান্ত রক্ষা করে। এই ধরনের ‘কুমন্তব্য’ না করে উদয়ন বাবুর উচিত দিনহাটার উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করা। যদিও, ঘটনায় খোদ উদয়ন গুহর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় কোনও তৃণমূল নেতৃত্ব এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই উদয়ন গুহর বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল বিধানসভা। গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হওয়ায় সাংবাদিক বৈঠক করেন বিএসএফের এডিজি ওয়াই বি খুরানিয়া। তারপরের দিনই শিলিগুড়িতে আরও একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন বিএসএফের আইজি রবি গান্ধী।

সাংবাদিক বৈঠকে বিএসএফ আইজি বলেন, “মহিলাদের শ্লীলতাহানি বিএসএফ করে না। আমাদের ফোর্সেও মহিলা রয়েছেন। তাঁরাই মহিলাদের তল্লাশি নেন । কোনও পুরুষ বিএসএফ কর্মী কোনও  মহিলার গায়ে হাত দেন না। সবটাই ভিত্তিহীন অভিযোগ। মহিলাদের শ্লীলতাহানির প্রশ্নই নেই। আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি। পাচার রুখতে ও সীমান্তরক্ষায় আমরা নানারকম আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছি। বিএসএফ নিয়ম মেনে চলে। যে ধরনের অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”

বিএসএফ কর্তার আরও সংযোজন, “বিএসএফের প্রধান কাজ হল অনুপ্রবেশ রোখা। বিএসএফ কোনও তদন্তকারী সংস্থা নয়, তাই পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করার প্রসঙ্গই ওঠে না। রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেই চলে বিএসএফ। সীমান্তরক্ষীবাহিনীর অন্যতম কাজ হল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে  আন্তর্জাতিক সীমান্তে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বজায় রাখা। বিএসএফের ক্ষমতা সীমিত। কেবলমাত্র তল্লাশি, বাজেয়াপ্ত ও গ্রেফতার করতে পারে বিএসএফ। এটি কোনও তদন্তকারী দল নয়। সীমান্তে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে যাদের আটক বা গ্রেফতার করা হয়, তাদের সংশ্লিষ্ট বিচারবিভাগীয় সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়।”

প্রসঙ্গত, বিএসএফ-এর এক্তিয়ার বৃদ্ধি নিয়ে বিধানসভায় প্রবল হট্টগোল। বিধানসভা অধিবেশন চলাকালীনই বিএসএফকে নিশানা করে তীর্যক মন্তব্য করেন দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ (Udayan Guha)।  তাঁর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কার্যত তুঙ্গে ওঠে রাজনৈতিক তরজা।

বিধানসভার অধিবেশনে ঠিক কী মন্তব্য করেছিলেন উদয়ন? তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “১৫০০ কিলোমিটার কাঁটা তারের বেড়া রয়েছে। এরপরও গরু, ছাগল কোনও ভাবেই প্রবেশ করতে পারে না। আর যদি সেটা হয়, তবে বুঝতে হবে এতে বিএসএফ-এর মদত আছে।”

তিনি আরও বলেন, “১০ টি জেলার ৬৫টি ব্লক বিএসএফ-এর অধীনে রয়েছে। ওদের অত্যাচার যে দেখেনি, সে জানে না। সাতটি জেলা শহরকে বিএসএফ-এর অধীনে নিয়ে আসার চক্রান্ত চলছে। এখানে সাম্রাজ্যবাদের দালাল, সাম্প্রদায়িক শক্তি প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। বাংলার ক্ষেত্রে ১৫ কিলোমিটারকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার করা হচ্ছে। নিজেদের শাসন যেখানে আছে, সেখানে এলাকা কমানো হচ্ছে।” তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “তল্লাশির নাম করে সন্তানের সামনে মায়েদের গোপনাঙ্গে হাত দিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। ছেলের সামনে বাবাকে কান ধরাচ্ছে। সেই সন্তান কী করে দেশপ্রেমিক হবে!”

উদয়নের এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কার্যত নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। এরপর ফের নতুন করে উদয়নের ফেসবুক পোস্টের জেরে রাজনৈতিক তরজা শুরু হতে পারে বলেই অনুমান করছেল সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। বিশেষ করে ২০২৪-এ রয়েছে লোকসভা নির্বাচন। সেক্ষেত্রে, রবিবার ফেসবুক পোস্টের মাধ্য়মে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগই তুলেছেন উদয়ন এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। যদিও, উদয়নের এই পোস্টের বিরুদ্ধে এখনও বিএসএফের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

গত ২১ অক্টোবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের (Home Ministry) তরফে নির্দেশিকা জারি করে সীমান্ত লাগোয়া একাধিক রাজ্যে বিএসএফের এক্তিয়ার ১৫ কিমি থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিমি করা হয়। এরপরই বিতর্ক শুরু হয়। পঞ্জাব(Punjab)-র পর পশ্চিমবঙ্গেও শাসক দল দাবি করে, বিএসএফের এক্তিয়ার বৃদ্ধির ফলে এবার রাজ্যে পুলিশ প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপ করবে। কেন্দ্রীয় সরকার বিএসএফের এলাকাবৃদ্ধির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আদতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপরে আঘাত, এই মর্মেই সরকারি প্রস্তাব আনা হয় মঙ্গলবার। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়ে ১১২টি ও বিপক্ষে ভোট পড়ে ৬৩টি।

আরও পড়ুন: Bhangar: নরম-গরম ভাঙড়! ‘তৃণমূলী সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ নওশাদের, জনসংযোগে জোর ঘাসফুলের