মালদা: বিধানসভা নির্বাচনের পর কার্যত ‘বামশূন্য’ বাংলা। ইতিমধ্যেই, বড় শরিকদের তাই খোঁচা মারতে শুরু করেছে ছোট শরিকরা। জোট যেভাবে চলেছে তাতে বেজায় অখুশি ফরোয়ার্ড ব্লক (Forward Bloc)। এ বিষয়ে, আলিমুদ্দিনের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর কাছে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। নিজেদের সমস্ত অভিযোগের লিখিত খতিয়ান তুলে দেবে ফরোয়ার্ড ব্লকওএমনটাই খবর সূত্রের। আলিমুদ্দিনের নরম-গরম আঁচ গিয়ে পৌঁছেছে জেলাতেও। মালদায় এ বার, সিপিআইএমের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংঘাতে নাম লেখাল ফরোয়ার্ড ব্লক।
শনিবার, ফরোয়ার্ড ব্লকের (Forward Bloc) মালদা জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য কমিটির সদস্য তথা বিশিষ্ট বাম নেতা শ্রীমন্ত মিত্র বলেন, “সিপিআইএমের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নয়। এইরকম সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে হাত মেলানো অসম্ভব। নিজের মতো যা ইচ্ছা তাই করা যায় না। বামফ্রন্ট থেকে সম্মানের সঙ্গে সরে না এলে রাজনীতিতেই থাকব না। এই মর্মে আমি রাজ্য কমিটিকে চিঠিও দিয়েছি।” কার্যত বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই অন্তর্সংঘাত চলছিল। সেই সংঘাত বাড়তে বাড়তে এতটাই চরম আকার নেয়, যে সিপিআইএমের (CPIM) সংস্পর্শও কার্যত এড়িয়ে চলতে শুরু করে ফরোয়ার্ড ব্লক (Forward Bloc)। এমনকী, করোনাকালে মানুষের পাশে থাকতে স্বতন্ত্র আজাদ হিন্দ ক্যান্টিন তৈরি করে ফরোয়ার্ড ব্লক। একদিকে শ্রমজীবী ক্যান্টিন, একদিকে আজাদ হিন্দ ক্যান্টিন; আলাদাভাবেই চলতে থাকে শরিকি-সেবা। এ প্রসঙ্গে ফরোয়ার্ড ব্লকের নেতা বলেন, “ওরা দুহাতা খিচুড়ি দিয়ে দশজন মিলে ছবি তুলছে। আমরা করোনাকালে প্রচারে না থেকেই কাজ করেছি। রেড ভলেন্টিয়ার্স তো সিপিএমের নিজেদের দলের পরিকল্পনা। এর সঙ্গে ফরোয়ার্ড ব্লক কোনওভাবেই যুক্ত নয়।” এই ঘটনায়, সিপিএমের (CPIM) রাজ্য কমিটির সদস্য কৌশিক মিশ্র জানিয়েছেন, ফরোয়ার্ড ব্লকের তরফ থেকে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে রাজ্য বামফ্রন্টই চড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। বামেদের জোট শরিক কংগ্রেসের জেলা কার্যকরী সভাপতি কালীসাধন রায় বলেন, “এটা সম্পূর্ণই বামফ্রন্টের দলীয় বিষয়। এ বিষয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। তবে, বামেদের শরিকি কোন্দলের জেরে নির্বাচনে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা আমাদের জেতা আসন হারিয়েছি।”
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই কার্যত সিপিএমের উপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মালদা জেলা ফরোয়ার্ড ব্লক। হরিশচন্দ্রপুরে সরাসরি সংযুক্ত মোর্চার বিরুদ্ধে প্রার্থীও দিয়েছিল তারা। এমনকী, জেলার সমস্ত কর্মসূচি থেকে নিজেদের সরিয়েও রাখে ফরোয়ার্ড ব্লক (Forward Bloc)। জেলায় আসন রফাকে কেন্দ্র করেও জটে পড়েছিল জোট। মালদার ১২টি আসনের মধ্য়ে ১০টি তে প্রার্থী দেয় কংগ্রেস। কিন্তু, মালতীপুর ও হরিশচন্দ্রপুরে প্রার্থী দেয় ফরোয়ার্ড ব্লক। বামেদের অন্য শরিক সিপিআইএমএল কিন্তু এই জোটে নাম লেখায়নি। মালদায়, ১২ টি আসনের মধ্যে ৮টি আসনেই এ বার জয়ী হয় তৃণমূল (TMC)। বাকি চারটিতে জেতে বিজেপি। ভোটে সংযুক্ত মোর্চার এ হেন ভরাডুবির পর একটি সংবাদমাধ্যমের আলোচনা চক্রে বসে সিপিএম নেতা তন্ম. ভট্টাচার্য হারের জন্য প্রকারান্তরে দলকেই দায়ী করেছিলেন। এমনকী, তরুণ প্রার্থীদের বিপর্যয়ের পেছনে যে আলিমুদ্দিনের প্রবীণ ভোটকর্তারাই দায়ী সেই অভিযোগও তোলেন তন্ময়বাবু। তারপরেই দলের তরফে তাঁকে শো-কজ করা হয়। সিপিএমের অন্য প্রবীণ নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ও জোট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সম্প্রতি, জোটের গতিপ্রকৃতি ও কার্যপদ্ধতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফরোয়ার্ড ব্লক (Forward Block)-সহ অন্যান্য শরিক দল। জোটে অন্য শরিকদের মতামতের কোনও গুরুত্ব না দিয়ে কেবল সিপিআইএমের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বরাবর গৃহীত হয়ে এসেছে বলেই অভিযোগ শরিকদলের। এমনকী, রাজ্য কমিটির বৈঠক চলাকালীন আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট সিদ্ধান্ত নিয়েও দলের অন্দরেই সমালোচনার ঝড় উঠেছিল।
একুশের নির্বাচনে, সংযুক্ত মোর্চার হারের পেছনে একাধিক কারণ আছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সাংগঠনিক দুর্বলতার পাশাপাশি, সংযুক্ত মোর্চাকে আসলে লড়াইয়ের অংশীদার হিসেবেই ভাবেনি বাংলার মানুষ। তাঁদের একরোখা মমতা-বিরোধীতা পুষ্ট করেছে ‘আগে রাম, পরে বামের’ ধারণাকে, ফলে সংযু্ক্ত মোর্চার উপর আস্থা রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির মতো দোর্দণ্ডপ্রতাপ দলকে ঠেকাতে তাই মমতা ও তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া আর কোনও শক্তি ছিল না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আরও পড়ুন: ভোট মিটতেই ‘ঘরওয়াপসি’! তারকেশ্বরে ২০০ জন বিজেপি কর্মী ফিরলেন ঘাসফুলে