
গঙ্গারামপুর: মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার এক পরিবার। ডাইনি অপবাদে একই পরিবারের ৪ জনকে বেধড়ক মারধর সহ জোর করে মল খাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য গঙ্গারামপুর থানার বাসুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাদ্রা রায়পাড়া এলাকায়। ঘটনার তদন্ত নেমে এলাকার ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ। শুক্রবার ধৃতদের তোলা হয়েছে গঙ্গারামপুর মহকুমা আদালতে। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখছে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গত দুই মাসে ভাদ্রা রায়পাড়া এলাকায় অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজনের। এই ঘটনা নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক। সঙ্গে সন্দেহ দানা বাঁধে গ্রামবাসীদের মধ্যে। তাদের অনুমান, কেউ বা কারা তুকতাক করে হত্যা করছে গ্রামের মানুষজনকে। এরপরই গ্রামের মানুষজন এক তান্ত্রিকের কাছে যায় বলে খবর। সেই তান্ত্রিকের কথা মতো গতকাল গ্রামের শ্মশানে পুজো দেন গ্রামবাসীরা।
রাতে ওই গ্রামের এক ব্যক্তির বাড়িতে হানা দেয় গ্রামবাসীরা। ওই ব্যক্তির স্ত্রীকে ডাইনি অপবাদ দেয়। তাদের অভিযোগ, ওই মহিলা তুকতাক করে খুন করেছে গ্রামের মানুষজনকে। তারপরই ওই পরিবারের চারজনকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ ওঠে গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি মল খাওয়ানোরও অভিযোগ ওঠে। রাতেই ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় গঙ্গারামপুর থানার আইসি-সহ পুলিশ বাহিনী। পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে গঙ্গারামপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনজন। পাশাপাশি এই ঘটনায় ওই গ্রামের ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ।
আক্রান্ত পরিবারের এক সদস্য বলেন, “বাবা, মা দু’জনেই বলল, আমরা কিছু জানি না। তারপরও ডাইনি অপবাদ দিয়ে আমাদের প্রথমে পায়খানা খাওয়ায়। তারপর ইট দিয়ে মারধর করে। আমরা বলেছিলাম, যেখানে আপনারা যাবেন, আমরা যাব। কিন্তু, শোনেননি। আমরা বাঁচতে চাই।” গত এক সপ্তাহে ৭-৮ জন মারা গিয়েছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বুল্টি রায় নামে গ্রামের এক মহিলা বলেন, “হঠাৎ করে জ্বর হয়। এবং মারা যায়। কেউ ২ দিনের জ্বরে, কেউ ৩ দিনের জ্বরে মারা গিয়েছে। আবার আচমকাও মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। আমার নিজের ঠাকুমা মারা গিয়েছে। তখন গ্রামের লোকের একজন তান্ত্রিকের কাছে গিয়েছিল।” তবে ওই পরিবারের সদস্যদের মারধরের কথা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। একইসঙ্গে বলেন, “গ্রামের লোকেদের এরকম আচমকা মৃত্যু হলে আমরা কি চুপ করে থাকব?”