
কলকাতা ও বালুরঘাট: মহারাষ্ট্রে গিয়ে বাংলায় কথা বলেছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার দুই পরিযায়ী শ্রমিক। আর রাতেই বিপত্তি। বাংলা কথা বলায় ভিন রাজ্যে জেলবন্দি হয়েছিলেন পরিযায়ী শ্রমিক। নানা জায়গায় পরিবারের সদস্যরা দরবার করেও লাভ হয়নি। অবশেষে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেষ্টায় ঘরে ফিরলেন জেলার দুই পরিযায়ী শ্রমিক। মঙ্গলবার দিল্লি যাওয়ার আগে তেমনই দাবি করলেন অভিষেক। শুধু তাই নয়, এও জানালেন, বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদারের কাছে দরবার করেও হয়নি লাভ।
অভিষেক কী বলেছেন?
মঙ্গলবার বিমান বন্দর থেকে অভিষেক বলেন, “দক্ষিণ দিনাজপুরের দুজন যুবক আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। একজনের নাম অসিত সরকার অন্যজন গৌতম বর্মণ। একজনের বাড়ি তপনে অন্যজনের বাড়ি কুমারগঞ্জে। সেই ছেলেটা বলছে দাদা আমি বিজেপির বুথ সভাপতি। আমাদের লোকসভার সাংসদ সুকান্ত। আমি বম্বে চাকরি করছি ২০ বছর। আমায় মহারাষ্ট্রের পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে থানায় ঢোকাল। আমি বাড়িতে ফোন করে বৌকে বললাম সুকান্তদার সঙ্গে কথা বলো। আমার বৌ হাউমাউ করে গিয়ে ওঁর সামনে কেঁদেছে। একটা ফোন করেনি।”
কী ঘটেছিল?
বালুরঘাট ব্লক তথা পতিরাম গ্রামপঞ্চায়েতের লক্ষ্মীপুরের পরিযায়ী শ্রমিক অসিত সরকার। পরিবারের দাবি, তিনি ভাল করে হিন্দি বলতে পারে না। মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের একটি কোম্পানির গোডাউনে হঠাৎই অভিযান চালায় সেখানকার পুলিশ। অভিযানে সকলকেই থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরেই পুলিস একের পর এককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। পুলিশ হিন্দিতে জিজ্ঞাসা করেছিলেন বাড়ি কোথায়? হিন্দি ভাল করে বলতে না পারায় কোনও রকমে ‘বাঙাল’ শব্দ বলে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। এরপরেই জোটে বাংলাদেশি তকমা।
অভিযোগ, বাংলাদেশি সন্দেহে গত ৭ মাস মাস ধরে মুম্বইয়ের জেলেই কাটাতে হয়। ওই পরিবার নানা নথি দিয়ে সুকান্ত মজুমদারের দ্বারস্থ হলেও কোনও লাভ হয়নি। গঙ্গারামপুর ব্লকের পুলিন্দার গৌতম বর্মণেরও একই অবস্থা। তিনিও একইভাবে আটকে পড়েছিলেন। তৃণমূলের দাবি, ওই গৌতম বর্মণ আবার বিজেপির বুথ সভাপতি ছিল। ফলে তাঁকে বিজেপি সাহায্য করেনি। বিষয়টি জানার পরেই তৃণমূল নেতৃত্ব যোগাযোগ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। এরপরেই তিনি ওই দুই পরিযায়ী শ্রমিককে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়।
সোমবার আটকদের নিজেদের বাড়িতে পৌঁছে দিলেন জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা যুব সভাপতি অম্বরিশ সরকার। বাড়ি ছেলে বাড়িতে ফিরতেই খুশি পরিবারের সদস্যরা। আটকে থাকা অসিত সরকার বলেন, “আমি এতদিন পর বাড়িতে ফিরেছি। পরিবারের সবাইকে এতদিন পর দেখছি। আমার খুব ভাল লাগছে।” সোমবার জেলায় ফিরে তৃণমূল যুব সভাপতি অম্বরিশ সরকার বলেন, “ওই পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে একজন বিজেপির বুথ সভাপতি ছিল। তাও সুকান্ত মজুমদার এই নিয়ে কোনও উদ্যোগ নেয়নি। আমরা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি।”
যদিও, এ নিয়ে সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, পালটা বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী বলেন,”ওই কর্মীদের মধ্যে একজন বুথ সভাপতি ছিল কি না তা জানি না। এগুলো মিথ্যে অপপ্রচার। কী কারণে ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা জেলে ছিল, তা দিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবুও ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফিরিয়ে আনা চেষ্টা করেছিলেন সুকান্ত মজুমদার। তৃণমূলকে বলব, তাঁরা কেন এই বাংলায় কাজ দিচ্ছে না? কেন সকলে কাজের জন্য ভীনরা যে যাচ্ছে। সেই উত্তর আগে তৃণমূল নেতারা দিক।”