
বালুরঘাট: কলেজ থেকেই বেসরকারি বিএড কলেজের প্রাক্তন করণিকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে শোরগোল বালুরঘাটে। মৃতের নাম গোপাল চক্রবর্তী (৬০)। পরিবারের বক্তব্য, অবসরের পর ফের তাঁকে কলেজে নিয়োগ করা হয়েছিল। মৃতের মানিব্যাগ থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে। যেখানে ওই বিএড কলেজের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের বিরুদ্ধে মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ করা হয়েছে। সুইসাইড নোটটি উদ্ধারের পর বালুরঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতের পরিবার। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বালুরঘাট থানার পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বালুরঘাট শহর সংলগ্ন মঙ্গলপুর এলাকায় অবস্থিত ওই বেসরকারি বিএড কলেজের ছাদ থেকে উদ্ধার হয় অবসরপ্রাপ্ত করণিক গোপাল চক্রবর্তীর ঝুলন্ত দেহ। তাঁর ঝুলন্ত দেহ নজরে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় কলেজ চত্বরে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ডিএসপি হেড কোয়ার্টার বিক্রম প্রসাদ-সহ বালুরঘাট থানার পুলিশ। মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়।
গোপাল চক্রবর্তীর বাড়ি বালুরঘাট শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের যোগমায়া অরবিন্দ ক্লাবের পাশে। চলতি বছর ৩০ এপ্রিল বিএড কলেজ থেকে অবসর নেন তিনি। তবে তাঁকে পুনর্নিয়োগ করা হয়। বাড়িতে মা, স্ত্রী ও মেয়ে রয়েছেন। রোজকার মতো গতকাল তিনি কলেজে আসেন। অফিসের অন্য কর্মীদের সঙ্গে কথাও বলেন। এর কিছুক্ষণ পর তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তিনি আরএসপির স্থানীয় ব্রাঞ্চ সম্পাদক ছিলেন। পাশাপাশি আরএসপির বিএলএ ২ ছিলেন। ২০২২ সালের পৌরসভা নির্বাচনে বামেদের হয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন তিনি। মাস কয়েক আগেই হৃদরোগের সমস্যার চিকিৎসাও করান।
সূত্রের খবর, ওই বিএএড কলেজে আর্থিক তছরুপ হয়েছে। সেই ঘটনায় নাম উঠে আসে গোপাল চক্রবর্তীর। যা নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল। দ্রুত হিসেব নিকেশ দেওয়ার কথাও কলেজের তরফে তাঁকে জানানো হয়। এই সব কারণে বেশ কিছু দিন ধরে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগোছিলেন। এর পরই এদিন সুইসাইড নোট লিখে আত্মঘাতী হন গোপাল চক্রবর্তী। সেই সুইসাইড নোটে এক অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরকে তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী করেন ওই করণিক। ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর কলেজের আর্থিক তছরুপ নিয়ে প্রতিদিন তাঁকে মানসিক অত্যাচার করতেন বলে লিখেছেন গোপাল চক্রবর্তী। সুইসাইড নোটে তিনি লেখেন, “আমি কোনও টাকা তছরুপ করিনি। সেটা ওদের পরিষ্কারভাবে জানিয়েছি। তারপরও প্রতিনিয়ত মানসিক অত্যাচার করতেন।” সুইসাইড নোটে ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের কঠোর শাস্তি চান বলে লিখেছেন গোপাল চক্রবর্তী। সুইসাইড নোট নজরে আসতেই বালুরঘাট থানায় ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, বেসরকারি বিএড কলেজের কর্ণধারের নামে বালুরঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের মেয়ে পৌলমী চক্রবর্তী।
মৃতের মেয়ে বলেন, “আমার বাবার মৃত্যু স্বাভাবিক লাগছে না। সকালে ভাত খেয়ে গিয়েছিলেন। একদম সুস্থ ছিলেন। বাবার মৃত্যুর জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের শাস্তি চাই।” মৃতের বোন মিলন চক্রবর্তী বলেন, “আমার দাদাকে যখন দেখি, হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন। এই মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলে মনে হচ্ছে।”
কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃতের মেয়ে
কলেজ কর্তৃপক্ষ এনিয়ে কিছু বলতে চায়নি। পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তারা কেউ দেখা করেনি বলে অভিযোগ। এমনকী গোপাল চক্রবর্তী কলেজে এখনও কাজ করতেন, তাও স্বীকার করতে চাননি কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওই বেসরকারি বিএড কলেজের প্রিন্সিপ্যাল বলেন, “উনি আমাদের প্রাক্তন স্টাফ। উনি একটু অসুস্থও ছিলেন। এটা ভাবনার অতীত।” আর্থিক তছরুপের বিষয় নিয়ে মুখ খোলেননি প্রিন্সিপ্যাল। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ কেন এড়িয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।