দক্ষিণ দিনাজপুর: বন্ধুদের অনেকেরই বাইক রয়েছে। বেশ দামী। তা দেখেই বাবার কাছে একটি বাইক চেয়েছিলেন বছর কুড়ির ছেলে। এদিকে বাবা কৃষিকাজ করেন। অভাব অনটন সংসারে লেগেই রয়েছে। ছেলে যে বাইক চেয়েছে তার দাম লক্ষাধিক টাকা। তবু ছেলেকে বলেছিলেন, কিনে দেবেন। একটু সবুর করতে। পরিবারের দাবি, তর সইল না ছেলের! বাইক না পেয়ে প্রাণটাই দিয়ে দিলেন। সোমবার বিকেলে কুমারগঞ্জের যুবক জনতা মার্ডির নিথর দেহ ময়না তদন্তের জন্য বালুরঘাটে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ।
বন্ধুদের দেখাদেখি দামী বাইক চালানোর শখ হয়েছিল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের উদল এলাকার যুবক জনতা মার্ডির। বাবা পেশায় কৃষক। সংসারে আর্থিক অনটন নিত্যসঙ্গী। কী ভাবে দেড় লক্ষ টাকার বাইক কিনে দেবেন ছেলেকে মাথায় ঢুকছিল না বাবার। এদিকে ছেলের জেদ বাড়ছিল বাইকের জন্য। অসহায় বাবা ছেলেকে বলেছিলেন কিছুদিন সময় দিতে। কিছু জমি বন্ধক দিয়ে ছেলের আবদার মেটাবেন। কিন্তু বাবাকে সেটুকু সময়ও দিতে পারেননি জনতা। অভিমানে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হন বছর কুড়ির জনতা মার্ডি।
পরিবারের দাবি, রবিবার বিকেলে বাড়িতে কীটনাশক খেয়ে ফেলেন জনতা। বাড়ির লোকজন দেখা মাত্র তাঁকে স্থানীয় কুমারগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সোমবার বিকেলে জনতা মার্ডির দেহ ময়না তদন্তের জন্য বালুরঘাটে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হতেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখছে কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের উদলের বাসিন্দা পেশায় কৃষক সুকল মার্ডি। সুকলবাবুর দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। পরিবারে অভাব সবসময়। ছেলে জনতা মার্ডি অনেক দিন আগেই পড়াশোনা ছেড়েছেন। বাবার সঙ্গেই কৃষিকাজ করেন৷ বেশ কিছু দিন ধরেই জনতা বাবার কাছে আবদার করছিলেন একটি দামী বাইক কিনবেন।
পরিবারের দাবি, এই নিয়ে রোজই বাড়িতে অশান্তি হোত। কারণ কোন ভাবে সুকলবাবুর পক্ষে সম্ভব ছিল না ছেলেকে বাইক কিনে দেওয়া। তারপরও বাবা ছেলের আবদার মেটাতে জমি বন্ধক রেখে বাইক কিনে দিতে চেয়েছিলেন। এর জন্য ছেলের কাছে কিছু সময় চেয়েছিলেন বাবা৷ তাতেও রাজি হননি। রবিবার বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে চাষের কাজে ব্যবহৃত কীটনাশক খেয়ে ফেলেন তিনি।
এ বিষয়ে জনতার মার্ডির এক আত্মীয় সুখলাল সরেন জানান, “ভাইয়ের দাবি ছিল দামী বাইক কিনবে। কিন্তু সেই বাইক কিনে দিতে না পাড়ায় কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছে।” প্রতিবেশী জয়নাল মার্ডি জানান, জনতা কিছু দিন ধরেই তাঁর বাবার কাছে আবদার করছিলেন বাইকের জন্য। কিন্তু তাঁর বাবার পক্ষে তা দেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়৷ এদিকে জনতা বলেছিলেন বাইক কিনে দিতেই হবে। ছেলের জেদের মুখে পড়ে তাও বলেছিলেন জমি বন্ধক দিয়ে বাইক কিনে দেবেন। এরই মধ্যে এসব ঘটে গেল।
আরও পড়ুন: Kasai River: ঝুপ করে বসে পড়ল রাস্তা, হুড়মুড়িয়ে নদীগর্ভে পড়ল সারি সারি দোকান…