শিলিগুড়ি: শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, এবার উত্তরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাতেও হানা দিল করোনা। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড আক্রান্ত ২৫ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। ফলে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে উত্তরবঙ্গে। একইসঙ্গে ভয় ধরাচ্ছে ওমিক্রনও। কারণ, ওমিক্রনের আশঙ্কা থেকে ১০০টি নমুনা পাঠানো হয়েছে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য। এমনকী কোভিডের এমন বাড়বাড়ন্তের জন্য আরও ১০০টি নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে পাঠানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে সূত্রের খবর।
উত্তরবঙ্গের জনস্বাস্থ্য বিভাগের ওএসডি সুশান্ত রায় জানান, “উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে ২৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তার মধ্যে অধিকাংশ জুনিয়র চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী। লোকে উৎসব করছে, পিকনিক করছে। আমরা বললে বলছে জ্ঞান দেবেন না। কিন্তু এভাবে চললে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার লোক পাওয়া যাবে না। আমরা অভিযানে জোর দিচ্ছি। কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না।”
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, গত ৭২ ঘণ্টায় চিকিৎসক-জুনিয়র চিকিৎসক-চিকিৎসক পড়ুয়া মিলিয়ে ৮০ জন কোভিড পজিটিভ হয়েছেন। চারজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার-সহ আক্রান্ত ১৪জন। সব মিলিয়ে একশো ছুঁইছুঁই কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। যদিও অধ্যক্ষ রঘুনাথ মিশ্রের দাবি, ১৪ জন করোনা আক্রান্ত।
ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও করোনার থাবা। তিন দিনে কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন চিকিৎসক-সহ ৯৩ জন। কোভিড আক্রান্ত চারজন অ্যাসিসট্যান্ট সুপার। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের হোস্টেল খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
ইতিমধ্যেই এনআরএস হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬১ জন। এর মধ্যে রয়েছেন স্ত্রীরোগ বিভাগ, কার্ডিওলজি, এসএনসিইউ’র রোগীরা। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীও রয়েছেন সংক্রমিতের তালিকায়। ৬১ জনের মধ্যে ১৭ জন ইন্টার্ন রয়েছেন, ২ জন পিজিটি, ১জন নার্সিং স্টাফ এবং ৪১ জন রোগী। গত বৃহস্পতিবারই ১৩ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজে। শুক্রবার সেই সংখ্যার সঙ্গে যুক্ত হয় আরও ৮। মোট ২১ জনের মধ্যে চিকিৎসক থেকে নার্সিং স্টাফ, রয়েছেন সকলেই।
রবিবার সকালে জানা গিয়েছিল চিত্তরঞ্জন শিশু সেবা সদনে ২৪ জন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সেই সংখ্যাটাই সন্ধ্যায় বেড়ে ৩৬ হয়ে গেল! এই ৩৬ জনের মধ্যে জুনিয়র চিকিৎসক রয়েছেন ২৪ জন। মেডিক্যাল অফিসার রয়েছেন ৪ জন। সিনিয়র চিকিৎসক রয়েছেন ২ জন। অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার রয়েছেন ২ জন। এছাড়াও ৩ জন নার্সিং স্টাফ ও ১ জন অফিস স্টাফ এই মুহূর্তে কোভিড পজিটিভ। এর আগে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কোভিড নমুনার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। করোনা আক্রান্ত হয়েছেন নার্সেস ইউনিটির সম্পাদকও।
এবার প্রথম থেকেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দুর্বল করতে সচেষ্ট করোনা। চিকিৎসকরা বলছেন, পরিস্থিতি অনেকটা প্রথম ঢেউয়ের পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রথম পর্যায়ে যাঁরা টিকা নিয়েছিলেন অর্থাৎ চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা বয়স্ক মানুষদের শরীরে সেই টিকার কার্যকারিতা অনেকটাই কমেছে। সেই মানুষদের মধ্যে আবারও করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়েছে। সেই কারণেই প্রতিদিন ৫০-৬০ জন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: বড় সিদ্ধান্ত! করোনাকালে বাড়ি বাড়ি খাবার পাঠাবে রাজ্য, কারা পাবেন জেলা প্রশাসনকে জানাল নবান্ন